ভারতের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সোমবার দিল্লিতে জীবনাবসান হয়েছে।
গত ন’বছর ধরে দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় জীবন্মৃত অবস্থায় তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সোমবার বেলা ১২টা ১০ মিনিট নাগাদ দিল্লির সেই অ্যাপোলো হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবঙ্গের যে হাতে গোনা কয়েকজন রাজনীতিবিদ জাতীয় রাজনীতিতেও বিরাট প্রভাব রাখতে পরেছিলেন মি. দাশমুন্সি ছিলেন তাদের অন্যতম।
তিনি শুধু সুবক্তা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন না, পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্তত পাঁচবারের নির্বাচিত লোকসভা এমপি হিসেবে তার সংসদীয় অভিজ্ঞতাও ছিল বিপুল।
তথ্য ও সম্প্রচার, জলসম্পদ, সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি।
যুব কংগ্রেস নেতা হিসেবে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীরও অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন।
১৯৭১ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি দক্ষিণ কলকাতা থেকে কংগ্রেস সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে পা রাখেন।
রাজনীতির পাশাপাশি ২০ বছর ধরে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পদেও ছিলেন তিনি।
তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি ফিফা বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচে ম্যাচ কমিশনারের দায়িত্বও পালন করেছেন।
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধীসহ সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে।
তবে মি. দাশমুন্সির বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের শেষ পর্বটা ছিল বেশ করুণ। ২০০৮ সালে মারাত্মক স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি যে কোমায় চলে যান, তা থেকে কখনওই আর পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেননি।
গত এক মাস ধরে তাঁর অবস্থা ছিল খুবই সঙ্কটজনক। দিনকয়েক আগে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়।
গত ন’বছর ধরে দিল্লির একটি দামী বেসরকারি হাসপাতালের একটি কামরায় রেখে তাকে ভারতে যতটা ভাল চিকিৎসা সম্ভব সেটাই দেওয়া হয়েছে – আর একজন সাবেক মন্ত্রী তথা সাংসদের সেই চিকিৎসার সব খরচ কেন্দ্রই বহন করেছে।
প্রথমে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ও পরে বিজেপি সরকার উভয়েই এক্ষেত্রে একই নীতি বজায় রেখেছে – বছরের পর বছর ধরে মি. দাশমুন্সির চিকিৎসায় কোনও সরকারই কোনও কার্পণ্য করেনি।
কেন্দ্রীয় সরকার কেন দেশের সব নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এতটা দরাজ মনোভাব দেখায় না, মি. দাশমুন্সির চিকিৎসার সূত্র ধরে এর আগে ভারতে সোশ্যাল মিডিয়াতে এই জাতীয় নানা অপ্রিয় প্রশ্নও উঠেছে।
তবে সোমবার দিল্লিতে মি. দাশমুন্সির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সেই বিতর্কও বোধহয় আপাতত থেমে গেল।
আগামিকাল মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে পরিবারের সূত্রে জানানো হয়েছে।