ফলকে বলা হয় বেহেশতের খাবার। বিজ্ঞানের চোখেও ফল খুবই উন্নত ধরনের খাবার হিসেবে পরিগণিত। আর তাই অসুখ বিসুখে রোগীর বিছানার পাশে দেখা যায় ফলের সমাহার। সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত কিছু না কিছু ফল গ্রহণের কথা বলা হয়।
শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলসহ বিভিন্ন উপাদানের জোগান দেয় এই ফল। জন্মের কয়েক মাস পর থেকেই তাই শিশুকে ফলের রস খাওয়ানোর উপদেশ দেওয়া হয়। আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন ফল পাওয়া গেলেও জ্যৈষ্ঠ মাসে দেশে আম, জাম, লিচু কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের ফলফলাদি সহজলভ্য হয়ে ওঠে। এসব ফলের প্রতিটিই পুষ্টি প্রাচুর্যে অনন্য।
আমের কথাই ধরা যাক। আম সবার কাছেই প্রিয় ফল। কাঁচা কিংবা পাকা, টক কিংবা মিষ্টি, যাই হোক সবই প্রিয়। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবারই পছন্দ আম। একেকজন একেকভাবে খাচ্ছে। আমের সব পরিবেশনাই মজাদার ও পুষ্টিকর। আম যেভাবেই পরিবেশন করা হোক না কেন এতে আমের পুষ্টিগুণ খুব একটা হেরফের হয় না।
তবে অটুট থাকে অন্যান্য ভিটামিনের গুণাগুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে রয়েছে আট হাজার ৩০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন, একই পরিমাণ পাকা কাঁঠালে ক্যারোটিনের পরিমাণ চার হাজার ৭০০ মাইক্রোগ্রাম। উল্লেখ্য, এই ক্যারোটিন শরীরের ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। এ ছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে রয়েছে ৪১ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি। এটি ১২ বছর বয়স পর্যন্ত একটি শিশুর ভিটামিন সিয়ের দৈনিক চাহিদার দ্বিগুণ। আমের চেয়ে জামে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমাণ কিছুটা বেশি।
প্রতি ১০০ গ্রাম কালো জামে রয়েছে ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। আর আঙ্গুরে এর পরিমাণ ২৯ মিলিগ্রাম। স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন সি খুবই কার্যকরী।
উল্লেখ্য, ভিটামিন ‘সি’-এর অভাবে মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হয়ে থাকে। এ ছাড়া ভিটামিন ‘সি’ ক্ষত সারাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। এ কারণে যেকোনো অপারেশনের পর ডাক্তাররা ভিটামিন সি গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ভিটামিন ‘এ’-এর চাহিদা পূরণে আম খু্বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সবারই বেশি বেশি আম খাওয়া উচিত। খাবারের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণে ক্ষতি নেই। কারণ, বাড়তি ভিটামিন এ লিভারের সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে।
ফলের ব্যাপারে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন। সব ফলেই রয়েছে কিছু খনিজ পদার্থ, ক্যালমিয়াম, লৌহ, ভিটামিন বি১, বি২, ভিটামিন সি, এ। এসব উপাদানের অনেকগুলোরই রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণাগুণ। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরে বুড়িয়ে যাওয়াকে ধীর করে। হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। আর ফলের আঁশ দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য, শরীরে মেদ জমতে বাধা দেয়।
যেকোনো বয়সের জন্য অনবদ্য খাবার হলো ফল। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ফল বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফলের বিকল্প ফলই। প্রতিদিন কিছু না কিছু ফল গ্রহণ করলে পৃথকভাবে ভিটামিন, ক্যাপসুল, ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ গ্রহণের দরকার পড়ে না। ফল দীর্ঘ জীবনের নিয়ামক, ফল জীবনকে সুন্দর করে, সুস্থ রাখে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল