শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে আবারও আন্দোলনে যাবে বিএনপি-দলের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি জানিয়ে দিলেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ জন্য তাদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাতে উপদেষ্টাদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে আগামী নির্বাচনে দলের করণীয় নিয়েও খোলামেলা কথা হয়। এ সময় খালেদা জিয়া এমন আহ্বান জানান বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা।
২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন এবং এক বছর পর সরকার পতনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচার ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারও সেই পুরনো দাবিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে এক বছর আগে তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি তুলে জানান, যথা সময়ে এই সরকারের রূপরেখা দেয়া হবে। কিন্তু বিএনপি নেতারা জানান, এই রূপরেখা দেবেন না তারা, আগের তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে গেছেন তারা।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদেরকে নির্বাচনের জন্য যেমন প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, তেমনি ওই নির্বাচন যদি ২০১৪ সালের মতো শেখ হাসিনার অধীনে হয়, তাহলে আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতেও বলেছেন।’
গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে চেষ্টা তদবিরও শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার, কেউ কেউ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলছেন।
এই বিষয়গুলো নিয়ে উপদেষ্টাদের কথাবার্তা শোনার পর খালেদা জিয়া বিএনপির অবস্থান নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নির্বাচনকালীন সংসদ ভেঙে দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে রেখে কোনো নির্বাচন নয়। এজন্য নির্বাচনের পাশাপাশি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি বাড়াতে হবে।
দলটির উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার ও জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, ম্যাডাম বলেছেন শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। এই দুই নেতা জানান, অতিদ্রুত জেলা কমিটিগুলোর পুনর্গঠন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
যেসব জেলায় বিরোধ আছে তা চিহ্নিত করে অতি শিগগিরই মীমাংসা করার জন্য বলেছেন বেগম জিয়া। যারা দলে বিভেদ-বিশৃংখলা করবে তাদের বহিস্কার করা হবে বলে কড়া হুশিয়ারী দেন তিনি।
তৈমুর আলম খন্দকার আরো বলেন, ম্যাডাম বলেছেন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার, সেনা মোতায়েন, ইসির নিরপেক্ষতা, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ না হলে নির্বাচনের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এ বৈঠকে উপদেষ্টা কাউন্সিলের ৫৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আনহ আখতার হোসেন, মাজেদুল ইসলাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদিন ভিপি জয়নাল, মনিরুল হক চৌধুরী, মেজর(অ.) কামরুল ইসলাম, উকিল আব্দুস সাত্তার, লুৎফর রহমান খান আজাদ, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, এম এ কাইয়ুম, জহুরুল ইসলাম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আবদুর রশিদ, হায়দার আলী, আবদুস সালাম, শাহাজাদা মিয়া, এস এম ফজলুল হক, এম এ লতিফ, আবদুল কুদ্দুস, আবদুল মান্নান তালুকদার, ফরহাদ হালিম ডোনার, খন্দকার মুক্তাদির আহমেদ, মামুন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল আলম, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, মাহবুবুর রহমান, জিয়াউর রহমান খান, তাজমেরী এস ইসলাম, শাহিদা রফিক, গোলাম আকবর খন্দকার, কাজী আসাদ, কবির মুরাদ, অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, একরামুজ্জামান, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, নজমুল হক নান্নু, তাহমিনা রুশদীর লুনা, এনামুল হক চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, আবদুল হক, তৈমুর আলম খন্দকার, কামরুল মুনির, বোরহান উদ্দিন, আবদুল বায়েছ ভুঁইয়া প্রমূখ।