নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তহীন শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় আবারও সিক্ত হলেন গনমানুষের নেতা ও জেলা ন্যাপের সাধারন সম্পাদক কাজী সাঈদুর রহমান সাঈদ। বুক ভরা ভালাবাসার টান হৃদয় জোড়া মমতা আর শেকড়ের বাঁধনে আটকা পড়া প্রয়াত সেই মানুষটির নাম উচ্চারন করেই সবাই বলে উঠলেন তিনি ছিলেন দরদী মানুষ, যার ভাবনা ছিল দরিদ্র মানুষকে নিয়ে, যার চেতনা ছিল ঠিকানাবিহীন মানুষের ঠিকানা খুঁজে পাবার দিকে। বারবার তাই কাজী সাঈদ নিজেকে সমর্পন করেছেন আন্দোলন সংগ্রামে মিছিলে মিটিংয়ে সমাবেশে। আন্দোলনে দৃশ্যমান সফলতা দেখতে না পেয়ে কখনও কখনও নিজেকে স্বেচ্ছা কারাবরনের ঘোষনা দিয়ে প্রমান করেছেন তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য জীবনব্যপী সংগ্রাম ও ত্যাগে প্রস্তুত। আবার আন্দোলনে শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কারাবরন করেছেন প্রখ্যাত ন্যাপ নেতা কাজী সাঈদ। শনিবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে নাগরিক শোকসভায় জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক শোক সভা সঞ্চালনা করেন কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলি নুর খান বাবুল। নাগরিক শোক সভায় বক্তব্য রাখেন, তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরার পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, সাধারন সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলি, জাসদ নেতা কাজী রিয়াজ, সদর উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি এড. ফাহিমুল হক কিসলু, প্রেসক্লাব সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিনিধি কল্যাণ ব্যানার্জি, এড. এবিএম সেলিম প্রমুখ। তার শুভাংকাংখীদের উচ্চারিত ভাষায় এমন চিত্র ফুটে উঠেছিল। প্রেসক্লাব চত্বরে কালো ক্যানভাসে ঘেরা প্রয়াত নেতা কাজী সাঈদের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে তারা বলেন, তোমার অসমাপ্ত কাজে গতি ফিরিয়ে সম্পন্ন করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমরা তোমার সেই পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চাই। এর পরই প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তারা সমবেত শ্রদ্ধায় অবনত হন। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তারা বলেন কাজী সাঈদ দুঃখী মানুষের জন্য যে সংগ্রাম করে গেছেন তা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নাগরিক শোকসভায় গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার বহুদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন কাজী সাঈদ তার জীবনকে দরিদ্র মানুষের সেবায় উৎসর্গ করে গেছেন। অকৃতদার হিসাবে নিজেকে পরিবার ও সংসারের কলেবর থেকে দুরে রেখে দুরের লোককে আপন করে নিয়েছেন। ভূমিহীনদের সুখ দুঃখে তাদের হাসি কান্নায় তিনি মিশে গিয়েছেন। নিজেকে নিয়ে নয়, তিনি ভেবেছেন তাদের ভবিষ্যতের কথা। তাদের অধিকার রক্ষা করাই ছিল তার রাজনৈতিক এজেন্ডা। এজন্য পথে ঘাটে মাঠে তিনি সংগঠিত করেছেন প্রতিবাদী মানুষদের। নিপীড়ন থেকে তাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন তিনি। সংগঠিত করেছেন দরিদ্র নারীদের। তাদের চোখেমুখে দেখিয়েছেন আলোর ঝিলিক। কাজী সাঈদ ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে খাসজমি ভূমিহীনদের হাতে তুলে দেওয়ার আন্দোলন করেছেন। বাস্তুহারা মানুষকে বাস্তুভিটা তৈরি করে দিতে তিনি ছিলেন সব সময় সোচ্চার। তিনি কথা বলেছেন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে । আদালত অবমাননার জুজুকে তিনি ভয় পাননি। বরং ন্যায় বিচার আদায়ে কাজ করেছেন। এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন গনমানুষের নেতা। সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, কাজী সাঈদ একজন জীবন ব্যাপী সংগ্রামী নেতা। তিনি দরিদ্র মানুষের ভাষা বুঝতেন। তাদের পাসে দাড়িয়ে সহায়াতা করতেন। অধিকার আদায়ের যে কোন আন্দোলন সংগ্রামের নামই কাজী সাঈদ। তিনি সবসময় এই আন্দোলনে ব্যাপৃত থেকেছেন। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন বলেন তিনি ছিলেন নিরহংকার মানুষ। তার পোশাকে আশাকে ছিল জীর্নতার ছাপ। তবু তিনি আন্দোলন সংগ্রামকে প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে গ্রহন করেছেন। জেল জুলুমের পরোয়া না করেই তিনি রাজপথে মিছিল নিয়ে গেছেন। পথসভা করে তিনি মানুষকে জাগরিত করেছেন। তাদেরকে সচেতন করে আন্দোলনে শরিক করিয়েছেন। তিনি অধিকার বঞ্চিত মানুষকে সঠিক দিশা দিয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পিপি এড. সৈয়দ ইফতেখার আলি বলেন কাজী সাঈদ ছিলেন নিরহংকার মানুষ। তার চোখেমুখে ফুটে উঠতো বিদ্রোহের ভাষা । কন্ঠে উচ্চারিত হতো হুংকার। একজন অকৃতদার মানুষ হিসাবে তিনি নিজের পথ খোঁজেন নি, তিনি পথ দেখিয়েছেন ভুখানাঙ্গা মানুষদের। তাদের মুখে হাসি ফোটানো, তাদের ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এসব বিষয় নিয়ে ভেবেছেন কাজী সাঈদ। দারিদ্য্রজয়ী এই মানুষটি কথনও নিজের সম্পদ বৃদ্ধির চিন্তা করেন নি। দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিনিধি কল্যাণ ব্যানার্জি বলেন, মন মানসিকতায় কাজী সাঈদ ছিলেন বীরত্বের অধিকারী। তিনি ছিলেন সাহসী ও নির্ভয় মানুষ। কোনো প্রলোভন তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। নাগরিক শোক সভার শুরুতে কাজী সাঈদ এর প্রতিকৃতিতে ফুলদিয়ে শ্রদ্ধা জানান সাতক্ষীরার বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠন এবং ১মিনিট দাড়িয়ে নিরাবতা পালন করেন।