বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার থেকে নেমে এলেন দুই বৈমানিক। গায়ে বিমানবাহিনীর জলপাই রঙের পোশাক। চোখে কালো চশমা। চলনে-বলনে দুই বৈমানিকের আত্মবিশ্বাসটা স্পষ্ট। দুই বৈমানিকের একজন নাইমা হক ও অন্যজন তামান্না-ই-লুৎফি।
দেশের ইতিহাসে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হবে ওই দুই নাম। ওই দুই ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জাতিসংঘ মিশনে যোগ দিতে আফ্রিকার কঙ্গো যাচ্ছেন। এই প্রথমবারের মতো দুই নারী বৈমানিক জাতিসংঘ মিশনে যোগ দিচ্ছেন।
আগামী ৭ ডিসেম্বর কঙ্গোর উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করবেন দুই ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। বিষয়টি জানাতে ঢাকা সেনানিবাসের ঘাঁটি বাশারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা ও তামান্না।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পেশাগত জীবনে বৈমানিক হিসেবে তাঁদের এই সাফল্য বিমানবাহিনী এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উড্ডয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।’ আরো বলা হয়, ‘দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাঁদের যোগদান বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেছে।’
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এবার প্রথমবারের মতো বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে নারী পাইলট হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যাচ্ছি। এর জন্য যা প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, বিমানবাহিনী ইতিমধ্যেই আমাদের দিয়েছে।’
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফি বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেট করেছি। যেহেতু কঙ্গো একটি পাহাড়ি এলাকা, আমরা পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।’
আইএসপিআর জানিয়েছে, সামরিক বৈমানিকের মতো চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নারী বৈমানিকদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যাচাই বাছাইয়ের পর বিমানবাহিনীতে কর্মরত দুজন নারী কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফি মনোনীত হন উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নং স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্সের জন্য মনোনীত হওয়া এই দুই নারী কর্মকর্তা ২০১৪ সাল থেকে তাঁদের গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শুরু করেন। একই বছর প্রথমবারের মতো তাঁদের উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ২৫ ঘণ্টা সফল প্রশিক্ষণ উড্ডয়ন শেষে তাঁরা একক উড্ডয়ন তথা প্রথম একক উড্ডয়ন (Solo Flight) সম্পন্ন করেন। এভাবে নাইমা ও তামান্না ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করে বৈমানিক হয়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায় শেষ করেন। নাইমা ও তামান্না বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে ৬৫ ঘণ্টা উড্ডয়নের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করার পর বিমানবাহিনীর বিভিন্ন হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রনে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা ২০৬ হেলিকপ্টার কনভারশন কোর্স, এমআই-১৭, এমআই-১৭১ এবং এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেছেন। উভয়ে ভারত থেকে এভিয়েশন মেডিসিন-এ প্রশিক্ষণ নেন। তাঁরা দুজনই পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশনস উত্তরণে অপারেশনাল পাইলট হিসেবে দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন।