আন্তর্জাতিক

শুক্রবার থেকে নতুন ইন্তিফাদার ডাক হামাসের

By Daily Satkhira

December 07, 2017

৮ ডিসেম্বর শুক্রবার থেকে নতুন ইন্তিফাদা’র ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের সংগঠন হামাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার পবিত্র জেরুজালেম নগরীকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার পর হামাস নেতা ইসমাঈল হানিয়া নতুন এই ইন্তিফাদা বা প্রতিরোধ আন্দোলনের ডাক দেন। গাজায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শত্রুর মোকাবিলায় আমাদের ইন্তিফাদা ঘোষণা করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত। একইসঙ্গে শুক্রবার থেকে গণবিক্ষোভের ডাক দেন তিনি।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ওই ভাষণে তিনি বলেন, ‘জেরুজালেমকে রক্ষার নতুন ইন্তিফাদায় অংশ নিতে শুক্রবার থেকে ফিলিস্তিনিদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। দখলদারদের বিরুদ্ধে এ ইন্তিফাদায় বিজয়ের ব্যাপারে আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে। যে কোনও ধরনের হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হামাসের সব ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেও মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান হামাস নেতা।

এর আগে দুইটি বড় ধরনের ইন্তিফাদার ডাক দিয়েছিল ফিলিস্তিন। প্রথম ইন্তিফাদা ছিল ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। তখন এটি ছিল মূলত একটি অসহযোগ আন্দোলন এবং গেরিলা প্রতিরোধ। ইসরায়েল যেভাবে এই ইন্তিফাদাকে প্রতিহত করেছিল, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইটঝাক র‍্যাবিন তিন শব্দে তা ব্যাখ্যা করেছেন। ওই তিন শব্দ হচ্ছে, ‘জবরদস্তি, শক্তি এবং আঘাত’।

প্রথম ইন্তিফাদা চলাকালে শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বহু মানুষকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হন হাজার হাজার মানুষ।

সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারন কয়েক হাজার সেনা নিয়ে জেরুজালেমের পুরনো শহর (ওল্ড সিটি) এবং মসজিদুল আকসা ভ্রমণ করতে দ্বিতীয় দফায় ইন্তিফাদা শুরু হয়। ২০০০ সালে শুরু হয়ে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকে। মর্যাদার দিক থেকে ইসলামে পবিত্র মক্কা ও মদিনার পরই জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদের অবস্থান। আর এই শহরকেই ৬ ডিসেম্বর ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রতিবাদে ৮ ডিসেম্বর ২০১৭ শুক্রবার থেকে তৃতীয় ইন্তিফাদার ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।

প্রথম ইন্তিফাদার সময় ফিলিস্তিনিরা ব্যবহৃত টায়ার থেকে নেওয়া রবারের চাকতিতে একটি লোহার পেরেক ঢুকিয়ে এক ধরনের টায়ার ছিদ্রকারী যন্ত্র উদ্ভাবন করে। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চলগুলোর প্রধান সড়কগুলোতে এ যন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ইসরায়েলের ধারণা ছিল, ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ-প্রতিরোধ অকার্যকর হয়ে পড়বে। কিন্তু আদতে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী এবং অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা আর হত্যাযজ্ঞের মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আরও বেগবান হয়।

মূলত ইন্তিফাদার মাধ্যমেই প্রতিবেশী কোনও আরব দেশের সহায়তা ছাড়া দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সমর্থ হন ফিলিস্তিনিরা। ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতন, নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, হত্যাযজ্ঞের মুখেও তারা প্রতিরোধ আন্দোলন থেকে পিছু হটেনি। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। সূত্র: রয়টার্স, আনাদোলু এজেন্সি, উইকিপিডিয়া।