শীত মানেই পাটালি গুড়ে বাজার ছেয়ে যাওয়া। আর সেই সঙ্গে বাঙালি ডায়েটে যোগ হয়ে যাওয়া রুটি-গুড় নয়তো দুধ-গুড়। কিন্তু গুড়ের সঙ্গে নিম পাতা খাওয়ার বিষয়টি অনেকেরই হয়তো অজানা! জীবনে যেমন আনন্দ আছে, তেমনি রোগের কষ্টও তো আছে, নাকি? এই কষ্টকে আনন্দে রূপান্তরিত করতে পারে একমাত্র গুড় এবং নিম পাতা। তাই তো এই দুই প্রকৃতিক উপাদানকে একসঙ্গে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।
নানা করণে নানা রোগ এসে বাসা বাঁধে আমাদের শরীরে। কোনও সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে আমরা অসুস্থ হয়ে পরি, তো কখনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দায়ী থাকে। কিছু সময় তো আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণেও নানাবিধ জটিল রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। তাই এমন পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকতে প্রথমে জীবনযাত্রার দিকে খেয়াল করতে হবে। অর্থাৎ কোনও ধরনের নেশা করা চলবে না। সেই সঙ্গে ডেয়েটের দিকেও নজর দিতে হবে। অপরদিকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটবে কী করে?
নানা ভাবে এই কাজটি করা যেতে পারে। তবে এই প্রবন্ধে যে ঘরোয়া ওষুধটি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তা নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি তো ঘটবেই, সেই সঙ্গে নানাবিধ ছোট-বড় রোগের প্রকোপও কমবে। তাই তো আজ থেকেই এই ঘরোয়া ঔষধিটি খেতে শুরু করে দিন। তাহলেই দেখবেন আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগ-ভোগও দূরে থাকবে। এই ঘরোয়া ওষুধটি কী কী উপাদানের মিশ্রনে বানাতে হবে? এক্ষেত্রে প্রয়োজন পরবে গুড় এবং নিম পাতার। এই দুটি উপদান সমপরিমাণে নিয়ে এক সঙ্গে মেখে নিতে হবে। তারপর প্রতিদিন অল্প অল্প করে খাওয়া শুরু করতে হবে। এমনটা করলে মিলবে নানা উপকার। যেমন…
১. আলসার হওয়ার আশঙ্কা কমায়: এই ওষুধটিতে রয়েছে “গ্য়াস্ট্রোপ্রটেকটিভ এলিমেন্ট” যা স্টমাক আলসার হওয়ার সম্ভবনাকে একেবারে কমিয়ে দেয়। প্রসঙ্গত, স্টমাক আলসারের আক্রান্ত রোগীরাও এই ওষুধটি কেতে পারেন। উপকার পাবেন।
২. স্টমাকে উপস্থিত ক্ষতিকর পোকাদের মেরে ফেলে: নিম পাতায় উপস্থিত নানাবিধ উপকারি এনজাইম পাকস্থলিতে ঘর বেঁধে থাকা অগুনতি ক্ষতিকর মাইক্রোঅর্গানিজমদের মেরে ফেলে। ফলে হজম সংক্রান্ত নানা রকমের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৩. শরীর থেকে বিষ বার করে দেবে: শরীরে মজুত নানা ধরনের বিষাক্ত উপাদানকে বের করে ফলতে এই ঘরোয়া ঔষধিটির কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। কারণ নিম পাতায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় উপকারি এনজাইম, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিনদের নিমেষে বের করে দেয়। ফলে কোনও রোগ হওয়ার সুযোগই পায় না।
৪. ওজন হ্রাসে সাহায্য করে: যারা ওজন কমাতে বদ্ধপরিকর, তারা প্রতিদিন নিমপাতা এবং গুড়ের এই মিশ্রনটি খাওয়া শুরু করুন। কারণ এই ওষুধটি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। সেই সঙ্গে শরীরের ফ্যাট বার্ন করার ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। ফলে দ্রুত চর্বি গলে গিয়ে ওজন কমতে শুরু করে।
৫. ক্ষত সারিয়ে তোলে: প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ থাকার কারণে যে কোনও ধরনের ক্ষতকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে এই ওষুধটি দারুন কাজে আসে। সেই সঙ্গে শরীরের অন্দরে তৈরি হওয়া প্রদাহ কমাতেও এই দুই প্রকৃতিক উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. ক্ষত সারিয়ে তোলে: প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ থাকার কারণে যে কোনও ধরনের ক্ষতকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে এই ওষুধটি দারুন কাজে আসে। সেই সঙ্গে শরীরের অন্দরে তৈরি হওয়া প্রদাহ কমাতেও এই দুই প্রকৃতিক উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়: নিম এবং গুড়, দুটোতেই রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপাটিজ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৭. নানাবিধ স্কিনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমায়: নিম এবং গুড়ে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজ, যা অতি বেগুনি রশ্নির হাত থেকে স্কিনকে যেমন রক্ষা করে, তেমনি নানাবিধ রোগের প্রকোপ কমিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮.কনস্টিপেশন দূর করে: একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে গুড়ের অন্দের থাকা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেড শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্নের মতো সমস্যাও কমতে শুরু করে। তাই যাদের প্রতিটা সকালই বেজায় কষ্টে কাটে, তারা আজ থেকেই গুড় এবং নিম পাতা খাওয়া শুরু করতে পারেন। এমনটা করলে যে উপকার মিলবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।