আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে সরব বিশ্ব ; বিক্ষোভের কেন্দ্রে মার্কিন দূতাবাস

By Daily Satkhira

December 11, 2017

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রবিবার বিভিন্ন দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও। দেশে দেশে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সামিল হয়েছে বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষ। কোথাও রাজনৈতিক দল, কোথাও আবার স্থানীয় চার্চ, কোথাও মানবাধিকার সংগঠনের উদ্যোগে এইসব বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোথাও সেই বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠেছে বলেও খবর মিলেছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদ পর্যবেক্ষণকারী ব্রিটিশ ওয়েবসাইট মিডল ইস্ট মনিটর জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনের মানুষ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। অনেকে আবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জায়নবাদবিরোধী ইহুদিরাও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মিসিসিপিতে সিভিল রাইটস মিউজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতির কথা শুনে অনেকে তা বর্জন করার ঘোষণা দেন। তারা ট্রাম্পকে বর্ণবাদী আখ্যা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠন দ্য ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট ফর কালারড পিপল (এনএএসিপি) ট্রাম্পকে ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনিদের জন্য কিছু করেননি। ব্রিটেনে হাজার হাজার মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও বার্মিংহামসহ দেশটির প্রায় ১০টি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। লন্ডনে মার্কিন দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রার্থনার আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কয়েকটি গির্জা। এ উদ্যোগ গ্রহণকারী গির্জার নেতাদের একজন রেভেরেন্ড নোতুথুকু নোকোসি। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার খ্রিস্ট ধর্মীয় গুরু হিসেবে আমরা আশা করছি ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তার অবশ্যই নিরসন হতে হবে। আমরা ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের দুর্ভোগের কথা বললেও আমরা জানি একজন ফিলিস্তিনি যে ধর্মেরই হোক না কেন তাকে ইসরায়েলের দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিসরের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভের একটি অনুষ্ঠিত হয়েছে কায়রোতে জার্নালিস্ট সিন্ডিকেটের সামনে। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হামদীন সাবাহি, মানবাধিকারকর্মী তারিক আল-আওয়াধি এবং কেফায়া আন্দোলনের প্রতিনিধিরাসহ উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা এ বিক্ষোভে অংশ নেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সরব ভূমিকা না থাকায় নিন্দা জানিয়েছেন তারা। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোবকারীরা বলেন, ‘দুঃখিত ফিলিস্তিন, আমরা এক জায়নবাদী সরকারের শাসনাধীন আছি।’ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে লেবানন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে রবিবার বিক্ষোভকারীরা দেশটির রাজধানী বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিয়েছে পুলিশ। এসময় বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। জেরুজালেম ইস্যুতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রবিবার ইন্দোনেশিয়ায়ও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা দেশটির রাজধানী জাকার্তায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে গিয়ে ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। ইন্দোনশিয়ার ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল পিকেএস এর আয়োজন করে। শেহাব.পিএস এর প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার চেচেন প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জেরুজালেমকে জায়নবাদী রাষ্ট্রের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে ‘রক্তাক্ত সংঘাতের প্রান্তে’ ঠেলে দিচ্ছেন। কাদিরভের আশঙ্কা, এর মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী ও সংগঠিত ইন্তিফাদা শুরু হবে এবং তা বিস্তৃত হয়ে যুদ্ধে রূপ নেবে। চলতি মাসের শেষের দিকে বৈঠক করার জন্য মিসরের কপটিক চার্চকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়ে সেই অনুরোধ নাকচ করে দিয়েছে কপটিক চার্চ। মিসরে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের নেতৃত্বের পক্ষ থেকেও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রোটেস্ট্যান্ট কমিউনিটি অব ইজিপ্ট এর প্রেসিডেন্ট রেবেরেন্ড আন্দ্রিয়া জাকি শুক্রবার দৃঢ়ভাবে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের শহর হিসেবে উল্লেখ করেন। এ প্রশ্নে সোচ্চার হওয়ার জন্য বিশ্বের দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান তিনি। শুক্রবার সিরিয়ার ইয়ারমুকের শরণার্থী শিবিরেও বিক্ষোভ হয়েছে। তারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইদিন তুরস্কের ৩৯টি এলাকায় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।ট্রাম্পের ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে পুরো বিশ্বে। প্রতিবাদ বিক্ষোভের মুখে তিউনিসিয়ায় মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্নের প্রস্তাব দিয়েছে আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট। ট্রাম্পের ওই ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাশিয়া, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। শুধু প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ না থেকে জেরুজালেম ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোকে গঠনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কাতার।