ন্যাশনাল ডেস্ক : একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ। এ হিসাবে নির্বাচনের বাকি এখনও পুরো একবছর। তবেই ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে আলোচনা ও নির্বাচনি প্রচারণা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ রাজনৈতিক দলগুলো প্রাকাশ্যে শুরু করেছে নির্বাচনি প্রস্তুতি। কোনও কোনও দল প্রার্থীর নামও ঘোষণা দিতে শুরু করেছে। দলগুলোর সম্ভাব্য ও প্রত্যাশিত প্রার্থীরাও চষে বেড়াচ্ছেন নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকা। নিয়মিত চালাচ্ছেন গণসংযোগ। অংশ নিচ্ছেন সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে তাদের আলাদা কোনও প্রস্তুতি এই মুহূর্তে নেই। তবে, রাজনৈতিক দল হিসেবে সব সময়ই নির্বাচনমুখী প্রস্তুতি থাকে। আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের আলোচনায় এখন জাতীয় নির্বাচন। সরকার গঠনে হ্যাট্রিকের রেকর্ড করতে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রস্তুতি আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি দলটিতে। ক্ষমতাসীন দলটি আগামী নির্বাচন মাথায় রেখে সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করার ওপর গুরুত্বারোপ করছে। দলের পক্ষ থেকে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মী ও এমপিদের জনসম্পৃক্ত হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। জনপ্রতিনিধিদের স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকা-গুলো দেখভাল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলছে প্রার্থী যাচাই-বাছায়ের কাজ। নির্দিষ্ট সময়ের বিরতিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর জরিপ কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান এমপি ও মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা নির্বাচনি এলাকায় বেশি বেশি সময় দিচ্ছেন। দলের শীর্ষপর্যায় থেকে বাড়ি-গ্রাম-গঞ্জ, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমান এমপিসহ মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে নির্বাচনি প্রচারণা উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরে চলছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আর বেশি সময় বাকি নেই। রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রস্তুতি নিতেই হবে। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের দলে চলছে।’ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগে সব সময়ই নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়েই রাখে।’ তিনি বলেন, ‘একটি নির্বাচন গেলেই আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি মাথায় নিয়েই এগিয়ে যায় আওয়ামী লীগ। এটাই এই দলের বৈশিষ্ট্য।’ নির্বাচন নিয়ে ভাবনা বিএনপির বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা আলোচনা, পর্যালোচনা শুরু হলেও মূলত আগাম আলোচনার মূল উদ্দেশ্য নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা। নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেই বিদেশি সংস্থা বা বিদেশি রাষ্ট্রগুলো সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। এদিকে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ও আন্দোলনÑ দুই প্রস্তুতিই শুরু করেছে বিএনপি। দলটির নেতারা জানান, বিগত ২০১৪ সালের আগে নির্বাচনি লিস্টে যাদের নাম ছিল, এর মধ্যে ১০০টি আসন পরিবর্তন হবে। বর্তমানে ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনি প্রস্তুতি চলছে দলটিতে। যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে। মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা ঘন ঘন যাতায়াত করছেন গুলশানে। জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘নির্বাচনের আর মাত্র একবছর বাকি। এখনই নির্বাচনি আলোচনা শুরু হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, নির্বাচনি প্রস্তুতি তো সারা বছরই থাকে। আর বড় দল হিসেবে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বা বিদেশে যে বা যারাই কথা বলুক, এটা হচ্ছে সরকারের প্রতি আহ্বান যে গণতান্ত্রিক নিয়মেই নির্বাচন করতে হবে।’ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, ‘যেকোনও দেশেই নির্বাচনের একবছর আগে থেকেই আলোচনা শুরু হয়। এটা তেমন ব্যতিক্রম নয়। আলোচনা হবে। আগামী দিনে আরও দেশে-বিদেশি সংস্থা, রাষ্ট্র কথা বলবে।’ সাখাওয়াত হাসান জীবন আরও বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপিতে শুরু হয়েছে। এটা আলাদা করে দেখার কিছু নেই। রাজনৈতিক দল হিসেবে সবাই নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।’ জাতীয় পার্টির প্রস্তুতি নির্বাচনি প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এর আগে নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘সমাঝোতার মাধ্যমে’ নির্দিষ্ট-সংখ্যক আসনে নির্বাচন করলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে তারা এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচন করার টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছে। দলটি ইতোমধ্যেই ৩০০ আসনের নির্বাচন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছে। বেশ কয়েকটি নির্বাচনি এলাকায় দলটির প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের মাঠের প্রার্থীরা যেন নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারেন, সে জন্যই তারা আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করছে। পর্যায়-ক্রমে তারা অন্যান্য আসনগুলোয়ও প্রার্থিতা ঘোষণা অব্যাহত রাখবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদের এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। কিছু কিছু আসনে প্রার্থিতাও ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।’ আগেভাগে প্রার্থিতা ঘোষণার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এর পেছনে অন্য কোনও কারণ নেই। আগে থেকে প্রার্থী ঘোষণা করলে ওই প্রার্থীর পক্ষে এলাকায় মাঠ গোছানোর কাজ সহজ হয়।’ প্রধান এই তিনটি দল ছাড়াও অন্য দলগুলোরও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনি প্রস্তুতি চলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শরিকরা আগামী নির্বাচনে ‘আসন ভাগাভাগি’র ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। শরিকরা যেসব এলাকায় নির্বাচন করতে চায়, সেগুলোর প্রাথমিক তালিকাও প্রধান শরিকদের কাছে দিয়ে সেগুলো নিয়ে দর কষাকষি শুরু করেছে। এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য ও সাবেক মন্ত্রী আসম রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) যুক্তফ্রন্ট নামে নতুন জোট গঠন করেছে। এছাড়া কিছু দিন আগে ইসলামি ঘরানার দলগুলোকে নিয়ে ৫০ দলীয় জোট ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে বিএনএ নামে নতুন জোট গঠন হয়। এই জোটটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সমঝোতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।