নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিজিটাল নাম্বার প্লেটের কভার লাগানোর নামে দালালদের খপ্পরে পরে দিশেহারা হয়ে পড়ছে মটর সাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনের মালিকরা। যেন ডিজিটাল নাম্বার প্লেটের কভার লাগানো বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে দালাল চক্রের কাছে। তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও হুমকি দিয়ে জোর পূর্বক অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মটর সাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনের মালিকরা। যদিও ডিজিটাল নাম্বার প্লেটের কভার লাগানো বাধ্যতামূলক না থাকলেও জোর পূর্বক অর্থ আদায় করছে দালাল চক্ররা। সরজমিনে দেখা যায়, শহরের শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের ভিতরে শিল্পকলা একাডেমীর সামনে বিআর টিএ কর্তৃক ডিজিটাল নাম্বার প্লেট লাগানো হয়। পাশেই শহিদ মিনারের সামনে বসে থাকে আর একটি দল। তবে এরা বিআরটিএ’র কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নয়। এরা স্থানীয় কিছু দালাল। আর এ দালালরা চাতক পাখির মত পার্কেই বসে থাকে কখন মটর সাইকেল আসবে। আসলেই হয়রানী শুরু হয়ে যায় ওই দালাল চক্রের। তাদের কে দেখলে ও কথা শুনলে মনে হবে তারা বিআরটিএ’র কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, মটর সাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনের ডিজিটাল নাম্বার প্লেট লাগাতে বিআরটিএ’র কোন প্রকার অর্থের প্রয়োজন হয়না বা তারা কোন প্রকার অর্থ আদায় করে না। এদিকে, নাম্বার প্লেট নেয়ার পর প্লেটে একটি টিনের কভার লাগানো হয়। আর সেই কভার লাগাতে গিয়েই মালিকদের বিভিন্ন ভাবে ভোগান্তি ও হয়রানি পোহাতে হচ্ছে শুধু মাত্র ওই দালাল চক্রদের জন্য। শ্যামনগর উপজেলার নীলডুমুর গ্রামের আব্দুস সোবহান, সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তিনি গত কয়েকদিন পূর্বে তার মটর সাইকেলে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট লাগাতে শহরের শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে আসেন। তিনি তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়ে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট সংগ্রহ করেন। এসময় যুবলীগ নেতা ও স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ভাইপো পরিচয়দানকারী জনৈক যাদু ও জিতুর নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক এসে তার কাছে নাম্বার প্লেটের টিনের কভার লাগাতে হবে বলে ৫শ টাকা দাবী করেন। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হয়। পরে আড়াই শ টাকায় তা রফাদফা হয়। আশাশুনি উপজেলার খাজরা গ্রামের মটর সাইকেল মালিক রফিকুল ইসলাম, কুদ্দুস ও আজিজ জানায়, তিনিও ডিজিটাল নাম্বার প্লেট সংগ্রহ করতে শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে আসেন। সেদিন খুব সকাল হওয়ায় তখনও পর্যন্ত বিআরটিএ’র কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সেখানে উপস্থিত ছিল না। কিন্তু সেখানে উপস্থিত ছিল স্থানীয় যুবলীগ ও জনপ্রতিনিধি পরিচয়দানকারী যাদু, জিতু, লিটু, সেলিমসহ কয়েকজন যুবক তাদের নিজেদেরকে বিআরটিএ’র কর্মকর্তা দাবী করেন। এসময় মটর সাইকেল চালক রফিকুল ইসলামের কাছে তার মোবাইলের ম্যাসেজ দেখতে চায়। রফিকুল ম্যাসেজ দেখাতে না পারলে অফিস খরচ বাবদ তার কাছে ৫শ টাকা দাবী করে জোর পূর্বক আদায় করে। এভাবেই স্থানীয় কিছু যুবক ডিজিটাল নাম্বার প্লেট লাগানোর নামে ও নিজেদের বিআরটিএ’র কর্মকর্তা পরিচয়ে সাধারণ মটর সাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনের মালিকদের কে হয়রানি করছে। এদিকে গত ১২নভেম্বর বিআরটিএ’র খুলনা বিভাগীয় উপ পরিচালক সাতক্ষীরা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এক সফরে এসে সব কিছু দেখেন এবং যারা নাম্বার প্লেটের কভার লাগাচ্ছে তারা কেউ পার্ক এরিয়ায় না থাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু সে নির্দেশও মানছে না ওই দালাল চক্রটি। তারা কারো কথায় কোন তোয়াক্কা না করেই বীরদর্পে হয়রানি করে চলেছে। ওই দালাল চক্রটির বিরুদ্ধে যদি কেউ প্রতিবাদ করতে যায়, তাহলে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও মারপিট করা হয় বলে ভূক্তভোগীরা জানায়। ভুক্তভোগীরা আর যাতে হয়রানি না হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এব্যাপারে বিআরটিএর সাতক্ষীরা সার্কেলের পরিচালক তানভীর আহমেদ চৌধুরী বলেন, দালাল চক্রের হয়রানীর ব্যাপারে আমি অভিযোগ পেয়েছি। যার ফলে আমি খুলনা বিভাগীয় ডিডিকে নিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু ওই সময় কেউ কোন অভিযোগ না করে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। আমরা সুনির্দিষ্ট কোন দালালকে চিহ্নিত করতে পারিনি। আপনারা এগুলো পত্রিকায় প্রকাশ করেন তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া যদি বিআরটিএর কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ওই দালাল চক্রের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।