দেবহাটা

দেবহাটার আলমগীর সার্জারি ও অকুপেশনাল থেরাপি সেবা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে

By Daily Satkhira

December 13, 2017

দেবহাটা ব্যুরো : দেবহাটা উপজেলার আজিজপুর গ্রামের আমজাদ আলীর পুত্র এবং এক সন্তানের জনক আলমগীর হোসেন। পেশায় একজন দিনমজুর। সিলেটের একটি ইটের ভাটায় কাজ করতেন। অর্জিত অর্থে মা-বাবা ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ৫ জনের সংসার কোনরকমে চলে যেত। কিন্তু হঠাৎ একটি দুর্ঘটনায় তার ডান হাত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একদিন কর্মস্থল থেকে বাড়ীতে ফেরার পথে বাসের জানালার কাচ ভেঙ্গে ডান হাতের উপর পড়লে হাতের নার্ভ ও রক্তনালী কেটে যায়। তৎক্ষণাত তিনি নিকটস্থ হাসপাতাল (শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল) যান। সেখানকার ডাক্তার তার হাতের অপারেশন বাবদ ১ লক্ষ টাকা নতুবা হাত কেটে ফেলার কথা বলেন। তার পরিবার নিজেদের শেষ সম্বল বলতে সামান্য এক খন্ড ফসলি জমি বিক্রি করে আলমগীরের হাতের অপারেশন করান। এখানেই শেষ নয়। অপারেশনের পরবর্তীতে তার ডান হাতের জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়ার হাতের নখে রক্ত চলাচল অভাবজনিত কারণে হাত ব্যবহার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থা দেখে তিনি খুলনা হাসপাতালের ডাক্তার দেখান। সেখানকার ডাক্তার তার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় অপারেশনের জন্য ঢাকা জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানকার ডাক্তার অপারেশন বাবদ ৩০ হাজার টাকার কথা বলেন। পাশাপাশি অপারেশনের পূর্বে হাতের অবস্থা উন্নতির জন্য থেরাপি নিতে বলেন। কিন্তু এতটাকা আলমগীরের পক্ষে বহন করা সম্ভব না হওয়ায় বাড়িতে ফিরে আসে। তবে, আলমগীর আগে থেকেই জানতেন ডিআরআরএ’র হাদিপুর থেরাপি চিকিৎসার কথা। তাই বাড়ীতে আসার পর সেখানে যোগাযোগ করেন। তিনি সেখান থেকে তাকে রেফার হয়ে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের থেরাপি ইউনিটে। এই সেন্টার থেকে হাতের জন্য নিয়মিত থেরাপি সেবা নিতেন। সেখানকার দায়িত্বরত থেরাপিস্ট তার হাতের অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে যেতে বলেন। কিন্তু অপারেশনের খরচ অনেক বেশী হওয়ায় তার পক্ষে এটা ছিল প্রায় অসম্ভব। পরবর্তীতে ডিআরআরএ এর পিআইএইচআরএস প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সহায়তায় গত ৮ ই ডিসেম্বর ২০১৬ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে অপারেশন করানো হয়। অপারেশন পরবর্তীতে স্বাভাবিক পেশগত জীবনে ফেরত আসার জন্য আলমগীরকে দেবহাটা উপজেলা হেল্থ কমপ্লেক্স থেকে অকুপেশনাল থেরাপি দেওয়া হয়েছে। আলমগীর বর্তমানে তার হাত দিয়ে দৈনন্দিন ব্যক্তিগত কাজ করতে পারছে। আলমগীর বে-সরকারি সংস্থা ডিআরআরএ’র পক্ষ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে সকল প্রচেষ্টা ও সহযোগীতা প্রদান করায় প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। এবিষয়টি নিয়ে ডিআরআরএ’র জেলা ম্যানেজার আবুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু আলমগীর নয় দেশের বিভিন্ন প্রন্তে তাদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষকে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সাতক্ষীরার সদর হাসপাতালে, দেবহাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহে ৬দিন দক্ষ থেরাপিস্ট দিয়ে সেবা এবং অসহায় রুগীদের জন্য ঔষধ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এতে অনেকে নতুনভাবে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাচ্ছে।