জাতীয়

অস্থিতিশীল রাখাইনে জাতিসংঘের নিবিড় পর্যবেক্ষণ চায় বাংলাদেশ

By Daily Satkhira

December 13, 2017

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতার সম্ভাব্য পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জাতিসংঘ ‍নিরাপত্তা পরিষদকে সেখানকার ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ’র আওতায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার রাখাইন সহিংসতা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, উত্তর ও মধ্য রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে আবারও আগুন দেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন। এর মাধ্যমে ওই এলাকার পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা ও স্থিতিশীলতা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।

২৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটি চুক্তিতে সই করেন। এতে বলা হয়, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে ২ মাসের মধ্যে প্রত্যাবর্তন শুরু করা হবে। নাম-পরিচিতিমূলক ফরম পূরণ করে, পরিচয়ের প্রমাণপত্রসহ তা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। প্রত্যাবাসনের ভিত্তি হবে ১৯৯২-৯৩ চুক্তি।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক প্রত্যাবাসন চুক্তিতে খুবই কম সুযোগ রাখা হয়েছে। যে কারণে এমন ‘পরিকল্পিত জাতিগত নিধন’ হয়েছে সেই দীর্ঘস্থায়ী সংকটটির আসল কারণ বিষয়ে কিছুরই উল্লেখ নেই। এমনকি চুক্তিটি যদি সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়ে থাকে তাহলেও সেখানে ফেরত যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদে থাকার কোনও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি। বক্তব্যে স্বাধীনভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের চাহিদা নিরুপণ করে সহায়তা ও নিরাপত্তা দিতে আক্রান্ত এলাকায় মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে অবাধ ও দীর্ঘমেয়াদে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার দাবিও জানান জাতিসংঘের বাংলাদেশ দূত।

এ বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ও মানবতার পক্ষের মানুষেরা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের বৈঠকেও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মানবাধিকার রক্ষার নামে বিভিন্ন কৌশলে তাদের বিরুদ্ধে ‘বৈষম্যমূলক ও একতরফা’ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে আপত্তি তোলেন।

জাতিসংঘ বৈঠকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাউ দো সুয়ানের উদ্দেশে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সরকার যে কোনও ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিপক্ষে পরিষ্কার অবস্থান নিয়েছে। ‍তিনি বলেন, ‘যদি কোনও অপরাধীর বিরুদ্ধে সঠিক প্রমাণ থাকে তাহলে যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মোমেন বলেন, রাখাইন রাজ্যের সমস্যার মূল কারণ নির্ধারণ করে টেকসই শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলো মিয়ানমার সরকার মেনে নিয়েছে। সরকার উপদেষ্টা কমিশন ও মঙগু আঞ্চলিক তদন্ত কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের সহকারী রাষ্ট্রদূত জোনাথান অ্যালেন বলেন, ‘শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় ফিরে আসার বিষয়ে ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মৌলিক সুবিধা ও জীবিকাসহ রোহিঙ্গাদের সব অধিকারকে সম্মান করতে হবে। তাদের দীর্ঘদিন শরণার্থী ক্যাম্পে না রেখে বাড়িতে ফিরে যেতে দিতে হবে। তাদেরকে নাগরিকত্বও দিতে হবে।’ এই ব্রিটিশ কূটনীতিক বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি উন্নয়নের প্রাথমিক দায়িত্ব মিয়ানমার সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর। তাদেরকে অবশ্যই এই কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হওয়া প্রেসিডেন্সিয়াল বিবৃতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংঘাতে যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা পাটেল তার বক্তব্যে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনের বর্ণনা আবার তুলে ধরেন। তিনি জানান, গণহারে বিতাড়িত করার জন্য রোহিঙ্গাদের বিরুরেদ্ধ যৌন সহিংসতাকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিষয়ক জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেফরি ফেল্টম্যান নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, রাখাইনে সংহিসতা কমে আসলেও এখনও নতুন নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে আসছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজার এতিম শিশু রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তিকে তিনি স্বাগত জানান। জানুয়ারির মধ্যেই উপদেষ্টা কমিশন ও কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ঘোষণা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে বলেও জানান ফেল্টম্যান।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি রাখাইনে সব মানবাধিকার কর্মীদের অবাধে প্রবেশের সুযোগ দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।