আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে ৬৭০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা

By Daily Satkhira

December 14, 2017

নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টির পর গত আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৪০০ রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বার বার দাবি করলেও একটি বেসরকারি সংস্থার মতে, সংখ্যাটি ছয় হাজার ৭০০।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে সাড়ে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গারা ভয়াবহতার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরুষ সদস্যদের ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করছে, নারীরা প্রতিনিয়ত সেখানে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে আর তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার এ ঘটনাকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যদিও মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ এবং দেশটির নেত্রী নোবেলজয়ী অং সান সু চির পক্ষ থেকে তা বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে।

মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে নিহতের এই সংখ্যা বের করেছে বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে ৬৯ শতাংশকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, নয় শতাংশকে তাদের বাড়িঘরের মধ্যে পুড়িয়ে মারা হয়েছে আর পাঁচ শতাংশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

শিশুদের মধ্যে ৫৯ শতাংশকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ১৫ শতাংশ আগুনে আর সাত শতাংশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে মারা গেছে আরো দুই শতাংশ।

প্রতিবেদনে এমএসএফ বলেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী ভয়াবহ পরিমাণ সহিংসতা ঘটিয়েছে, নিহতের এই সংখ্যার মধ্য দিয়েই সেটি পরিষ্কার হয়ে যায়।

আগস্টের ২৫ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বরের ২৪ পর্যন্ত এক মাস সময়ের মধ্যে রাখাইন রাজ্যে নয় হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যার তথ্য পায় বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা।

সহিংসতার মধ্যে ‘কম করে হলেও’ ছয় হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে জীবন দিতে হয়েছে উল্লেখ করে এমএসএফ উল্লেখ করেছে, এর মধ্যে ৭০০ জনই শিশু, যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে।

এমএসএফ মনে করে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সহিংসতার যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিসি) মামলা হতে পারে।

এমএসএফের মেডিকেল ডিরেক্টর সিডনি ওয়াং বলেন, যারা বেঁচে আছেন তাঁরাও সহিংতার ভয়াবহতা নিয়েই বেঁচে আছেন। বর্বরতার শিকার এদের অনেকেই এখনো গুরুতর আহত।

যদিও এর আগে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, সহিংসতার মধ্যে ৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই মারা গেছে ‘মুসলিম সন্ত্রাসীদের’ হাতে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। এমএসএফ ডিরেক্টর চুক্তিটিকে ‘অপরিপক্ব’ উল্লেখ করে বলেন, এখনো রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতেও সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে।

এই অবস্থায় এখনো রাখাইন রাজ্যে সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার সীমিত বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করে এমএসএফ।