স্পোর্টস ডেস্ক: শেষ দিন সকালে শেষ ব্যাটসম্যান শফিউল ইসলাম আউট হওয়ার আগ পর্যন্তও বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ছিল। ইংল্যান্ডের ঘাড়ে এ রকম নিশ্বাস ফেলতে পারাটা নিশ্চিতভাবেই চট্টগ্রাম টেস্টের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। অভিষেক টেস্টে মেহেদী হাসান ও সাব্বির রহমানের পারফরম্যান্স, সাকিব আল হাসানের আরও একবার জ্বলে ওঠাও যোগ হবে অর্জনের খাতায়।এসবের বাইরে আর একটা জিনিসই আছে—মুশফিকুর রহিম। দুই ইনিংসের টেস্টসুলভ ব্যাটিং আর উইকেটকিপিং তো ছিলই, অধিনায়ক মুশফিকও ধরা দিলেন নতুন চেহারায়। সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলন, দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং কাল ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলন—সবকিছুতেই পাওয়া গেল পরিণত মুশফিককে। গতকালের সংবাদ সম্মেলনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো এখানে— শেষ দিনের পরিকল্পনা ও হার: মুশফিকের মতে, শেষ দিনে জয়ের ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা ইংল্যান্ডেরই ছিল। বাংলাদেশ তবু চেষ্টা করেছে ১০ শতাংশ সম্ভাবনাকে বাস্তব করতে। তাইজুল ইসলাম এক দিক থেকে যতটা সম্ভব সমর্থন দিয়ে যাবেন। রান করার দায়িত্ব সাব্বির রহমানের—এই ছিল শেষ দিনে ২ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৩ রানের জন্য ব্যাট করতে নামা দলের লক্ষ্য। তবে সাব্বিরের একার পক্ষে তো আর ৩৩ রান করে ফেলা সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া বেশি ঝুঁকি নিতে গেলে তাঁর আউট হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। সে জন্য ভরসা রাখা হয়েছিল তাইজুলের ওপরও। ‘কাল (পরশু) শেষ দিকে তাইজুল খুব ভালো খেলছিল, আজও (গতকাল) শুরুটা ভালো করেছে। এই জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যে, যদি রান হয় রানটা নিয়ে নেওয়া’—বলেছেন মুশফিক। ১৫ মাস পর টেস্টে ফেরা: গত বছরের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর প্রায় ১৫ মাসের বিরতি দিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামা। টেস্টটা হারলেও মুশফিকের মধ্যে তবু চ্যালেঞ্জ জয়ের আনন্দ, ‘আগেও বলেছিলাম, আমরা যেন পাঁচ দিন ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলতে পারি। আমার মনে হয়, আমরা পুরো টেস্টে ৯২ থেকে ৯৫ শতাংশ ভালো ক্রিকেট খেলেছি।’পরাজয়ের আক্ষেপ তাই খুব বেশি নেই অধিনায়কের, ‘জিতলেই যে আমরা টেস্টে আহামরি দল হয়ে যেতাম, তা নয়। আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, সেটা অর্জন করতে পেরেছি। চারটি দিন ওদের সঙ্গে প্রায় সমানে সমান ছিলাম।’ চট্টগ্রামের উইকেটে ইংল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে রান করা সহজ ছিল না বাংলাদেশের জন্য। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা অনেক অভিজ্ঞ, ‘তাদের দলে ৪ থেকে ১০ হাজার রান করা খেলোয়াড়ও আছে।’আরও বেশি ম্যাচ খেলা: প্রতিটি টেস্ট সিরিজের আগে-পরেই কথাটা বলেন মুশফিক, ‘আমাদের আরও বেশি দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলতে হবে।’ এবারও ব্যতিক্রম হয়নি, ‘টেস্ট এমন একটি খেলা, যত খেলবেন ততই উন্নতি করার সুযোগ থাকে। খারাপ খেলার শঙ্কা কমে আসে। তত বেশি আপনি বুঝবেন ক্রিকেটে আপনাকে এভাবে রান করতে হবে, কোন পরিস্থিতে কীভাবে ব্যাটিং-বোলিং করতে হবে।’ সবচেয়ে হতাশার কথাটি বলেছেন এরপর, ‘আমি যে ৪৯টি টেস্ট খেলেছি, প্রতিটি ম্যাচই নতুন মনে হয়েছে। তাহলে যার অভিষেক হয়েছে, তাকে কীভাবে বলব তোমরা এভাবে খেলো!’শফিউল-কামরুল না আল আমিন-রুবেল হোসেন: টার্নিং উইকেটে এক পেসার নিয়ে খেললে ভালো হতো কি না, এই আলোচনা ছিল টেস্টের শুরু থেকে। আর দুই পেসার নিলেও তাঁরা আল আমিন-রুবেল হোসেন হবেন না কেন?মুশফিক নবাগত কামরুল ও শফিউলের ওপর ছাতা ধরলেও কাউকেই কারও চেয়ে এগিয়ে রাখেননি। পেস আক্রমণের অভিজ্ঞতার অভাবের কথা বলতে গিয়ে মুশফিক তাই হতাশ, ‘একজন বোলার যদি না-ই বোঝে পুরোনো বলে তাকে কীভাবে বোলিং করতে হবে, কীভাবে একজন ব্যাটসম্যান থিতু হয়, পরিকল্পনা করে কীভাবে বোলিং করতে হয়, তাহলে আর তার কাছ থেকে কী আশা করা যায়? স্টোকস বলেন, ব্রড বলেন; তারা ৮-১০ বছর ধরে এই কাজটা করে আসছে। তাদের জন্য কাজটা কতটা সহজ আর আমাদের জন্য কতটা কঠিন, তা বুঝতে হবে।’তবে চট্টগ্রাম টেস্টের দুই পেসার শফিউল, কামরুলকে নিয়ে অধিনায়ক সন্তুষ্টই, ‘তারা এখান থেকে শিখেছে। এমন উইকেটে প্রতিটি রান, প্রতিটি স্পেল কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তারা তা বুঝেছে। পুরোনো বলে কীভাবে রিভার্স সুইং করানো যায়, এটা আমার মনে হয় তারা খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে।’দ্বিতীয় সেরা চট্টগ্রাম টেস্ট: মুশফিকের দৃষ্টিতে এটা তাঁর ১১ বছরের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা টেস্ট, ‘আমার দুটি টেস্ট সব সময় মনে থাকবে। একটি হচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে খুলনায়…ওই টেস্ট আমরা ড্র করেছিলাম। সেটা এখনো ১ নম্বর। তারপর এই টেস্ট।’উইকেটকিপিং: ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটকিপিংয়েও নিজেকে বরাবর স্বচ্ছন্দ মনে করেন মুশফিক। তবে তিনি কিপিং করবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আবারও দিলেন টিম ম্যানেজমেন্টকে, ‘আমি বারবারই বলি, টিম ম্যানেজমেন্ট যদি মনে করে শুধু ব্যাটিং করে দলকে আমি আরও বেশি দিতে পারব অথবা যদি বলে তিনটি বিভাগে দায়িত্ব পালন করে আরও বেশি দিতে পারব, সেটাই করব।’চট্টগ্রাম টেস্টের শিক্ষা: চট্টগ্রামের উইকেট মুশফিকের দেখা সেরা উইকেট। তা থেকে জয় তুলে নিতে না পারলেও এই টেস্টের শিক্ষাটা নিতে চান অধিনায়ক, ‘ম্যাচটা আমাদের শেখার অনেক সুযোগ দিয়েছে। এ ধরনের উইকেটে আমরা বুঝতে পারব কোন সময়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, প্রতিপক্ষকে কত রানের ভেতর রাখতে পারলে ভালো হবে, চতুর্থ ইনিংসে কতটা রান তাড়া করা সম্ভব।’