ফিচার

আইনি লড়াইয়ে মুখোমুখি আ’লীগ-বিএনপি

By Daily Satkhira

December 21, 2017

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিদেশে জিয়া পরিবারের সম্পদ নিয়ে বক্তব্য রাখার কারণে গত মঙ্গলবার ওই উকিল নোটিশ পাঠানোর পর গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। উকিল নোটিশে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার এই বক্তব্যের জন্য ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়ে সংবাদমাধ্যমে তা প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে সেটি করা না হলে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার এই উকিল নোটিশ নিয়ে আওয়ামী লীগে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ৩০ দিনের মধ্যে ওই উকিল নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠের প্রধান দুই প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে সব মহলে এরই মধ্যে কৌতূহল ছড়িয়ে পড়েছে। রাজপথের বৈরিতা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও বক্তৃতা-বিবৃতির বদলে দুই প্রধান দল আইন-আদালতমুখী হয় কি-না সেটি দেখার অপেক্ষায়ও রয়েছেন সবাই।

খালেদা জিয়ার উকিল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি অবহিত করে গতকাল দলের এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জিয়া পরিবার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, সেগুলো প্রমাণ করতে না পারলে বিএনপি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল। অভিযোগ প্রমাণে কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে না পারায় খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ভিত্তিহীন কোনো তথ্য প্রচার করে না। আওয়ামী লীগ কোনোদিন কোনো বানোয়াট কথা বলে না, ভিত্তিহীন তথ্য দেয় না। আর লিখিত বক্তব্যে দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এই উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বিদেশি একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় বিচারের মুখে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সৌদি আরবে। এরপর কম্বোডিয়া সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গত ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন।

নোটিশে যা বলা হয়েছে : গত মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হয়ে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এই উকিল নোটিশ পাঠান। রেজিস্টার্ড ডাকযোগে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানায় উকিল নোটিশটি পাঠানো হয়। নোটিশে খালেদা জিয়া ও তার ছেলেদের সম্পর্কে শেখ হাসিনা যে অভিযোগ এনেছেন তাকে সাজানো, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিদ্বেষমূলক আখ্যা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার সুনাম বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ এনেছেন শেখ হাসিনা। এ অভিযোগ খালেদা জিয়ার প্রতি অবমাননা ও ঘৃণার সৃষ্টি এবং তাকে হাস্যকর করার জন্য করা হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য এবং নিজের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য এ অভিযোগ সাজানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে নোটিশে।

নোটিশে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে আরও বলা হয়, ‘আপনার এই বেপরোয়া ও বিদ্বেষপূর্ণ কটূক্তি একাধারে পরনিন্দা, অপবাদপূর্ণ ও মানহানিকর, যা খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ সুনাম, সম্মান, সততা এবং মর্যাদাকে বিনষ্ট করার এবং দেশ-বিদেশে তাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে খাটো করার হীন উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এই মানহানিকর বিবৃতির কারণে অপূরণীয় লোকসান ও ক্ষতি হয়েছে, যার জন্য আইনত আপনি দায়ী।’

রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সম্প্রতি জিয়া পরিবার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, সেসব অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে বিএনপি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল। দুঃখজনকভাবে তারা মুখে নানা কথা বললেও অভিযোগ প্রমাণে কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই দলীয় অঙ্গীকার অনুযায়ী খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া এবং তার ছেলেদের সম্পর্কে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সাজানো ও বিদ্বেষমূলক। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির জনপ্রিয় নেতা খালেদা জিয়ার সুনাম নষ্ট করতে এ অভিযোগ করা হয়েছে।

এ সময় আইনি নোটিশে স্বাক্ষরকারী ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, নোটিশের মাধ্যমে তারা খালেদা জিয়ার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আইনি নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সব জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আউটলেটে যথাযথভাবে প্রকাশ ও প্রচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫-এর সামনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন মঙ্গলবার উকিল নোটিশ পাঠানোর কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশে খালেদা জিয়ার কোনো শপিং মল বা সম্পদ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য খালেদা জিয়ার জন্য মানহানিকর।

আইনগতভাবেই মোকাবেলা: মতিয়া চৌধুরী

শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া আইনি নোটিশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আইনিভাবেই বিষয়টি মোকাবেলা করবে।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যে সময় খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি দেশে-বিদেশে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে, দুর্নীতির মামলায় তাদের শুনানি চলছে, ঠিক এ সময়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই খালেদা জিয়া আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে এই আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি জানান, ১২টি দেশে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের এক হাজার দুইশ’ কোটি মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ এসেছে। এ সময় তিনি ২০০১ সাল-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের ‘দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে’র বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বলেন, খালেদা জিয়া জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের জন্য খালেদা জিয়াকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিদেশে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছে কোনো তথ্যপ্রমাণ আছে কি-না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই মুখপাত্র বলেন, অবশ্যই তথ্যপ্রমাণ আছে। তাছাড়া বিভিন্ন অনলাইনে এই বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘উকিল নোটিশ এখনও তাদের কাছে পৌঁছেনি। গণমাধ্যম থেকে তারা নোটিশের বিষয় জানতে পেরেছেন। নোটিশ পেলে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন একেএম এনামুল হক শামীম, ফরিদুন্নাহার লাইলী, সুজিত রায় নন্দী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার, পারভীন জামান কল্পনা, আনোয়ার হোসেন, মারুফা আখতার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং প্রমুখ। সমকাল