নিজস্ব প্রতিবেদক: ভালোভাবে বেঁচে থাকা, পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে সকলকে ছেড়ে মানুষ পাড়ি জমায় বিদেশে কাজের সন্ধানে। কিন্তু কিচু কিছু সময় স্বপ্ন হয়ে যায় দুঃস্বপ্ন। এমনই এক দুঃস্বপ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি গ্রামের হতভাগ্য যুবক মোমিনুল ইসলামের। ভাগ্য বদলের জন্য ২০১২ সালে বৈধভাবে লিবিয়াতে পাড়ি জমান মোমিনুল ইসলাম। ২০১৭ সালের ৪ আগষ্ট লিবিয়া থেকে অপহরণ হন মোমিনুল। দীর্ঘ ৬ মাস আটক রেখে তার উপর চালানো হয় অমানুসিক নির্যাতন। আর নির্যাতনের সেই ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটে পাঠিয়ে বাড়ির মানুষদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। লিবিয়ার সেনাবাহিনী মোমিনুলকে উদ্ধার করে দেশে পাঠালেও মোমিনুর হারিয়েছে চলাফেরা করার শক্তি। চোঁখে মুখে ভয়ের ছাপ আর নির্যাতনের চিহ্ন তার সমস্ত শরীরে। মোমিনুল ইসলাম বলেন, আমাকে লিবিয়া থেকে অপহরণ করেছিলো। বাঙ্গালী চারজন আর লিবিয়ার দুইজন। মোট ৬ জন। লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ধরে ছাপারতা আরেকটা প্রদেশ নিয়ে যায়। সেখানে খুব নির্যাতন করতো। আগুন দিয়ে পোড়াতো, প্লাস্টিক গলিয়ে আমার শরীরে ফেলতো, হাতে পায়ে পেটাতো। এসব ভিডিও ধারণ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এরপর চাঁদা দাবি করে দশ লাখ। বাড়ির সর্বস্ব বিক্রি করে ৮ লাখ টাকা দেয় আমার পরিবার। পরবর্তীতে আরো ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। মোমিনুল ইসলাম আরো বলেন, “অপহরণের সাথে জড়িত টাঙ্গাইল জেলার সরোয়ার ডুবাইল গ্রামের সরোয়ার, বাগবাড়ী গ্রামের আমজাদ আলী, সিলেট জেলার ফজলুল করিম সেই সাথে লিবিয়ার তিনজন। নির্যাতনের কথা কি বলবো দিনে তিনবার পেটাতো আর একবার অল্প খেতে দিতো আর শুধু টাকা চাইতো। নির্যাতনের চিহ্ন আমার শরীরে দেখুন।” মোমিনুলের বাবা আব্দুল আজিজ সরদার বলেন, এ ঘটনায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ও একটি মানি লন্ডারিং মামলা করি। পরবর্তীতে মামলাটি সিআইডি হেড কোয়ার্টার তদন্ত করে। পরবর্তীতে লিবিয়ার সেনাবাহিনী মুক্তিপণের টাকাসহ দুই লিবিয় ও এক বাংলাদেশীকে আটক করে মোমিনুল ইসলামকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠায়। ১৩ ডিসেম্বর বুধবার মোমিনুল বাড়িতে ফিরলেও হারিয়েছে চলাফেরা করার শক্তি, উঠে দাঁড়াতে পারে না এখন। লিবিয়ায় আটক দুই লিবিয়ার অপহরণকারীকে ২০ বছর করে কারাদ- ও সিলেটের ফজলুল করিমকে ১৫ বছর কারাদণ্ড প্রদান করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। আর সরোয়ার লিবিয়ায় পলাতক রয়েছে। ছেলের এমন ঘটনার বিচার দাবি করে মোমিনুলের বাবা আজিজুল ইসলাম আরো বলেন, “আমি সরকারের কাছে বিচার চাই। আমার ছেলেরে পঙ্গু করে দেছে আমি এর বিচার চাই।” স্থানীয় কাশিমাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আব্দুর রউফ বলেন, “বৈধ পথে বিদেশ গিয়ে অপহরণের শিকার হয় মোমিনুল। নির্যাতনের চিহ্ন তার সমস্ত শরীরে। বাংলাদেশি ও লিবিয়ার দুইদল সন্ত্রাসী তাকে আটক করে মুক্তিপণ নিয়েছে। জীবিত উদ্ধার হয়ে মোমিনুল দেশে ফিরেছে এটা ভাগ্যের ব্যাপার। যারা বিদেশে কাজ করে তারা যেন নিরাপদে কাজ করতে পারে এমন যেন নির্যাতনের স্বীকার না হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটা আমাদের দাবি। ” এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার ভারপপ্রাপ্ত কর্মকর্র্তা সৈয়দ আব্দুল মান্নান বলেন, “লিবিয়ায় মোমিনুল অপহরণ হওয়ার পর তার বাবা আমার কাছে এসেছিলেন আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য। আমি পরামর্শ প্রদান করি। তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তাছাড়া টাঙ্গাইলের এক মহিলাকে ৮ লাখ টাকাও দেয়। সে মহিলাও আটক হয়েছে। এরপর মানি লন্ডারিং একটা মামলা হয়। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছেন। ইতোমধ্যে মোমিনুল লিবিয়া থেকে উদ্ধার হয়েছে। তিনি বর্তমানে বাড়িতে রয়েছেন।