পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি : যাদের কারণে দেশে বুক ফুলিয়ে বসবাস করছি তাদেরকে কিছুই দিতে পারিনি বরং যারা শহিদ হয়েছে তাদের বধ্যভূমিকে করছি অপমানিত, করছি অবহেলা! ৩০লাখ মানুষের তাজা রক্তে ভেজা বাংলাদেশ, অসংখ্য মা, বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ; যারা এতা বড় ত্যাগ স্বীকার করে বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা বালাদেশ নামক একটি ভূখ-কে ঠাঁই করে দিয়েছে আজ তারা প্রতি পদে পদে অবহেলিত। আর হায়েনারা যাদের প্রকাশ্য গুলি ও ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছে তাদের স্মৃতিস্তম্ভ (বধ্যভূমি) আজ অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কর্তৃপক্ষের তেমন কোন দৃষ্টি নেই এই বধ্যভূমির দিকে। পাটকেলঘাটা থানার পারকুমিরার একাত্তরের বধ্যভূমি টি অযতœ আর অমর্যাদায় মধ্যে পড়ে রয়েছে। দীর্ঘ ৪০বছর পরও পাকহানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের সাক্ষ্য বহনকারী এই বধ্যভুমিটি সংরক্ষণের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এখও পর্যন্ত।
পাটকেলঘাটা থানার পারকুমিরার গণহত্যা একটি সম্মুখ যুদ্ধ। ১৯৭১সালের ২৩এপ্রিল পাটকেলঘাটার সন্নিকটে পারকুমিরা নামক স্থানে ৭৯জন গ্রামবাসীকে পাকসেনারা সেদিন ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। এর মধ্যে ৪৯জনের লাশ পারকুমিরার বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। স্বাধীনতার পর একে একে ৪৬টি বছর অতিবাহিত হলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সেখানে বিভিন্ন মৌসুমে ফসলের সমারহে ভরে যায়। সরেজমিনে জানা যায়, স্বাধীনতার ৪৬বছর অতিবাহিত হলেও দীর্ঘদিনে পারকুমিরায় ৭৯জন শহিদের গণকবর আজও সংরক্ষিত হয়নি। কাশীপুর গ্রামের শেখ হায়দার আলীকে পাকসেনারা গায়ে পাট জড়িয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে। সেদিনের সেই হত্যাযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শী মৃত কার্তিক চন্দ্র দে এর স্ত্রী চপলা রানি দে (৭৫), শেখ নেছার আলীর স্ত্রী কুলসুম বিবি (৬০), কানাই লালের পুত্র বিশ্বনাথ রায় (৫৮) এবং শহিদ পরিবারের সন্তান শেখ নুরুল ইসলাম ও শেখ টিপু সুলতান (৫০) সেদিনের সেই বর্বর হত্যাযজ্ঞের লোমহর্ষক কাহিনি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, সেদিন ছিল শুক্রবার। মসজিদে জুম্মার আযান হচ্ছিল এ সময় পাটকেলঘাটা থেকে পাকিস্তানী হায়নারা বীর দর্পে পারকুমিরায় গিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীকে আলোচনার কথা বলে একত্রিত করে। লাইনে দাড় করিয়ে দিয়ে সহজ সরল গ্রামবাসীর উপর ব্রাশ ফায়ার করলে ঘটনাস্থলেই ৭৯জন নিহত হয়। এদের মধ্যে যশোর নওয়াপাড়া, চুকনগর, ডুমুরিয়া, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকার আশ্রয় সন্ধানে আশা শরণার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার ৪৬বছর অতিবাহিত হলেও আজও সেই বীর শহিদদের গণকবর রক্ষার্থে সরকারি ভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এবং বধ্যভূমিতে এক মাত্র কালের সাক্ষী হয়ে রয়ে আছে সে দিনের সেই তালগাছ। প্রতি বছর ২৩এপ্রিল শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন দলীয় ভাবে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। কিন্তু বাকী দিন গুলি এই গণকবরের বুকে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। বর্তমানে সেখানে সরিষার হলুদ ফুলের সমারহ। শহিদ পরিবার সহ সর্বমহলের সরকারের কাছে একটাই চাওয়া যেহেতু প্রধান মুন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে ছিলেন সেহেতু তার সরকারের আমলেই শহিদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই বধ্যভূমি রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হোক।