সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে লা লিগার আগের দুই এল ক্লাসিকো জিতেছিল বার্সেলোনা। জিতলো আবারও। ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবার রিয়ালের মাঠে টানা তিনটি লিগ ম্যাচ জিতলো কাতালান জায়ান্টরা। শনিবার এই লা লিগা মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনা ৩-০ গোলে হারালো ১০ জনের রিয়ালকে।
লিগের গত মৌসুমে বার্নাব্যুতে ৩-২ গোলে জিতেছিল বার্সেলোনা। তার আগেরবার ঘরের মাঠে রিয়াল হারে ৪-০ গোলে। তবে এরনেস্তো ভালভারদে দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা দুটি এল ক্লাসিকো এই মৌসুমে হেরেছিল বার্সা। গত আগস্টে স্প্যানিশ সুপার কাপের দুই লেগে ৩-১ ও ২-০ গোলে তাদের বিপক্ষে জিতে শিরোপা হাতে নেয় রিয়াল। লিওনেল মেসি ও লুই সুয়ারেসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে শেষ পর্যন্ত প্রথম এল ক্লাসিকো জয়ের স্বাদ পেলেন অ্যাথলেটিক বিলবাওর সাবেক কোচ।
গত সপ্তাহে গ্রেমিওকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিয়াল। ওই ম্যাচের পরই ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো আবদার করেছিলেন, এল ক্লাসিকো শুরুর আগে যেন বার্সা তাদের ‘গার্ড অব অনার’ দেয়। সেই আবদার পূরণ হচ্ছে না, স্পষ্ট জানিয়ে দেয় বার্সা। প্রত্যাখ্যাত হয়ে বার্সার ‘গায়ে জ্বালা’ ধরাতেই বিশেষ ‘পার্টি’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রিয়াল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। ২৩৭তম এল ক্লাসিকোতে উল্টো তাদের সামনে জয় উদযাপন করলো বার্সা।
শুরু থেকে বল দখল, বার্সার রক্ষণে আক্রমণ চালানোয় এগিয়ে ছিল রিয়াল। বার্সা প্রথমবার প্রতিপক্ষের ডিবক্সে ঢুকেছিল ১০ মিনিটে। দুই মিনিটে রোনালদোর হেডে বল জড়ায় জালে। কিন্তু তাকে উদযাপন করতে দেননি লাইন্সম্যান, উড়ান অফসাইডের পতাকা। আরও কয়েকবার লক্ষ্যে শট নিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে রিয়াল।
তবে বার্সা প্রথমবার প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেয় ৩০ মিনিটে। মেসির চমৎকার পাস থেকে শট নিয়েছিলেন পাউলিনিয়ো, কিন্তু ব্রাজিলিয়ানের চেষ্টা গোলবারের উপর দিয়ে আলতো করে পাঠিয়ে দেন কেইলর নাভাস। পরের মিনিটে রোনালদোর কোনাকুনি শট পা দিয়ে ঠেকান বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন। বিরতিতে যাওয়ার আগে ৩৯ মিনিটে শেষবার সুযোগ হারায় অতিথিরা। আবারও পাউলিনিয়োর হেড রুখে দেন নাভাস। ৪২ মিনিটে রিয়ালের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয় করিম বেনজিমার হেড পোস্টে লেগে।
প্রথমার্ধ যদি রিয়ালের হয়, তবে শেষ ৪৫ মিনিট কেবলই বার্সার। ৫৪ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। মাঝমাঠে স্বাধীনভাবে বল নিয়ে ডিবক্সের দিকে এগিয়ে যান ইভান রাকিতিচ, এরপর বল বাড়িয়ে দেন সের্হিয়ো রবের্তোর দিকে। তার ক্রস থেকে সহজে লক্ষ্যভেদ করেন সুয়ারেস।
দলে একটি দুটি বদল আনার পরিকল্পনা করছিলেন জিনেদিন জিদান। কিন্তু ৬৩ মিনিটে আবার পিছিয়ে পড়ে তার দল। সুয়ারেস দুইবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হন, প্রথমবার নাভাস ও পরেরবার পোস্টে লাগে। কিন্তু পাউলিনিয়ো ফিরতি শট নিয়েছিলেন লক্ষ্যে, ঝুঁকিপূর্ণ ওই চেষ্টা হাত দিয়ে আটকে দেন দানি কারভাহাল। বল লক্ষ্যভেদ হলেও রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান এবং কারভাহালকে দেখান লাল কার্ড। স্পট কিকে মেসি শক্তিশালী শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। লা লিগায় রিয়ালের বিপক্ষে এটি ছিল আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ১৭তম গোল। লিগের ইতিহাসে মাদ্রিদের ক্লাবের বিপক্ষে এত গোল আর কেউ করেনি।
শেষদিকে নেমে মার্কো আসেনসিও ও গ্যারেথ বেল রিয়ালকে ম্যাচে ফেরানোর সব চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু টের স্টেগেন ওয়েলস তারকাকে রুখে দেন। রোনালদোর ক্রস থেকে সের্হিয়ো রামোসও টপকাতে পারেননি বার্সা গোলরক্ষকের বাধা। বরং ইনজুরি সময়ে আবারও তাদের জালে বল পাঠায় লিগের শীর্ষ দল। মেসির পাস থেকে অ্যালেইক্স ভিদাল দলের তৃতীয় গোল করেন।
এই জয়ে ১৭ ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকলো কাতালান জায়ান্টরা। আর এক ম্যাচ কম খেলে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে রিয়াল। বার্সার চেয়ে ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে দুইয়ে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ (৩৬)। অবশ্য শনিবার ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে জিতলে অ্যাতলেতিকোকে টপকে দুই নম্বরে উঠবে ভ্যালেন্সিয়া (৩৪) । অর্থাৎ, অন্তত ৮ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে বছর শেষ করবে শীর্ষে থাকা বার্সা।