ভিন্ন স্বা‌দের খবর

আজব দুনিয়া; চেয়ারে বসলেই মৃত্যু!

By Daily Satkhira

December 26, 2017

কখনো কখনো নিরপরাধ কোনো কিছু হয়ে উঠতে পারে অভিশাপ কিংবা ভয়ঙ্কর কোনো কারণ। আবার সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা বা অভিশাপ অতি সাধারণ একটি জিনিসকেও রাতারাতি নিয়ে আসতে পারে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এমনই এক নিরীহ গাছের বস্তু হচ্ছে একটি সাধারণ চেয়ার। কয়েকশ বছরের পুরনো এই চেয়ারটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক রহস্যময় মৃত্যুর নির্মম ইতিহাস।

চেয়ারকে সবাই আরামের প্রতীক হিসেবে জানে। কিন্তু সেই আরামের প্রতীক যদি হয়ে ওঠে মৃত্যুর কারণ- তাহলে বিষয়টি অস্বাভাবিকই হওয়ার কথা। কিন্তু চেয়ার অব ডেথ বা মৃত্যু চেয়ারের গল্প যেন অস্বাভাবিকতাকেও হার মানায়।

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত এই চেয়ারটি রয়েছে ইংল্যান্ডের উত্তর ইয়র্কশায়ারের বাসবি স্টুপ ইন [Busby Stoop Inn] নামে এক সরাইখানায়। কেবল এই চেয়ারটির কারণেই জায়গাটি সমগ্র ইংল্যান্ডের মানুষের কাছে এক রহস্যময় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অবশ্য চেয়ারটির অভিশপ্ত ইতিহাসের সঙ্গেও এই সরাইখানাটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

মূল ঘটনাটি বেশ পুরনো। সেই ১৭০২ সালের কথা। সে বছর থমাস বাসবি নামে একজন অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হয়। অপরাধী যত ভয়ঙ্করই হোক না কেন, মৃত্যু দণ্ডাদেশ কার্যকর করার আগে তার শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়ার নিয়ম সেই তখন থেকেই প্রচলিত ছিল। আর তাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে থমাসের মৃত্যু দণ্ডাদেশ কার্যকর করার আগে তার শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে থমাস এক অদ্ভুত আবদার করে বসে। সে অতিপ্রিয় পানশালাতে গিয়ে নিজের প্রিয় চেয়ারে বসে জীবনের শেষ খাবার খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ফলে থমাসের শেষ ইচ্ছা পূরণের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। খাবার শেষ করে চেয়ারটি ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় থমাস। এরপর বক্তৃতার ঢঙে বলে ওঠে ‘সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি। এটা আমার প্রিয় চেয়ার। আমি আর কখনো এটাতে বসার সুযোগ পাব না। তাই বলে দিচ্ছি, এই চেয়ারে যে বসবে সে হঠাৎ করেই মারা যাবে।’ ঘটনাটি পানশালার সবাইকে ভড়কে দিয়েছিল। এরপরের ২০০ বছর পার হয়ে গেলেও চেয়ারটি সেই পানশালাতেই রয়ে যায়। কিন্তু কেউ সেটিতে বসত না।

কিন্তু তাহলে এটি অভিশপ্ত হলো কী করে? ইতিহাস সে-ই রেখেছে বলেই কিন্তু চেয়ারটির নাম দেওয়া হয়েছে মৃত্যু চেয়ার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একজন বৈমানিক সেই পানশালাতে এসে অভিশপ্ত চেয়ারে বসলেন। সে দিন তার কিছু হলো না। তবে এরপর তিনি আর যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেননি। এর বাইরে আরো ক’জন সৈন্য এই চেয়ারে বসেছিলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এদের কেউই কখনো জীবিত ফিরে আসেননি। ১৯৬৭ সালে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর দুইজন পাইলট ওই চেয়ারে বসেছিলেন। খাবার-দাবার শেষে পানশালা থেকে বের হয়েই তারা এক ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। আর সেই দুর্ঘটনায় দু’জনই মারা যান। এসব ঘটনার পর এই চেয়ারটির দুর্নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

লোকমুখে গল্পটি বেশ জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। তবে যথারীতি এমন অভিশাপে বিশ্বাস করেন না এমন লোকেরও অভাব ছিল না। ১৯৭০ সালে একজন স্থপতি এই চেয়ারে বসে অভিশাপকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিশাপকে ভুল প্রমাণের আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

যেদিন চেয়ারটায় বসেছিলেন, ঠিক সেদিন বিকালেই এক গর্তে পড়ে মারা যান ওই স্থপতি। এরপর আরেক ছাদ ঢালাইকারী ওই চেয়ারে বসেন। তিনিও এখানে বসার পর অভিশাপের বিষয়টি রীতিমতো হেসে উড়িয়ে দেন। এই লোকটি ছাদ থেকে পড়ে যান এবং মৃত্যুবরণ করেন। আরেকজন মহিলা এই চেয়ারে বসার পর মস্তিষ্কের টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মারা পড়েন। এভাবে সত্যি সত্যি এই চেয়ারের সঙ্গে আকস্মিক মৃত্যুর যোগসাজেশের অদ্ভুতুড়ে উদাহরণ দিন দিন বাড়তেই থাকল। শুধু তাই নয়, এত বছর ধরে অনেকেই মৃত থমাসকে পানশালায় ঘুরে বেড়াতে দেখেছে বলে দাবি করেছে। ক্রমাগত এসব ভয়াবহ ঘটনা দেখে পানশালার কর্তৃপক্ষ এই চেয়ারটি ওখানকার বেসমেন্টে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু যে লোকটি এই চেয়ার বহন করছিল, সে ওই বেসমেন্টে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য চেয়ারের উপর বসে পড়ে। সে দিনই লোকটি এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। ১৯৭২ সালে অভিশপ্ত এই চেয়ারটি স্থানীয় জাদুঘরে দিয়ে দেওয়া হয়। এখনো সেখানেই রয়েছে এটি। চেয়ারটি মাটি থেকে পাঁচ ফুট উপরে ঝুলিয়ে রেখে প্রদর্শন করা হচ্ছে, যাতে সেটিতে কেউ বসতে না পারে।

চেয়ারের অভিশাপের বিষয়টিকে অনেকেই হয়তো মানতে চাইবেন না। কিন্তু থমাসের ঘটনাটি মিথ্যা নয়। ইতিহাস বলছে, এই চেয়ারে বসা মানুষগুলোর করুণ পরিণতিও মিথ্যা নয়। তাহলে কী সত্যি চেয়ারটি অভিশপ্ত?