‘সহনশীল’ মাত্রায় ঘুষ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি ঘুষ গ্রহণে বাধা দেওয়ার সাহস নেই বলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ যে বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তবে মন্ত্রীর নিজেকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়াকে সাহসিকতা হিসেবে দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। এই সাহসিকতার ধারাবাহিকতায় শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন– এমন প্রত্যাশা টিআইবির।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) টিআইবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রত্যাশা জানানো হয়।
শিক্ষামন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর ওই বক্তব্য যেমন জাতির জন্য উদ্বেগজনক, তেমনি এতে কেবল তার নিজের বিভ্রান্তি ও হতাশার প্রতিফলন ঘটেছে। মন্ত্রীর বক্তব্যে এটাও পরিষ্কার যে, ইতোপূর্বে শিক্ষাখাতে টিআইবির একাধিক গবেষণায় উঠে আসা ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতির চিত্র ও বিশ্লেষণকে তিনি শুধু ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার ও উপেক্ষাই করেননি, বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছেন; যার ফলে তাকে এখন নিজেকে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের হাতে জিম্মি ভাবতে হচ্ছে। তার যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সৎসাহস ও দৃঢ়তা থাকত, তাহলে এমন অসহায়ত্বের মাধ্যমে দুর্নীতির আরও বিস্তার ঘটানোর প্রেসক্রিপশন দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। সেক্ষেত্রে তিনি তার দাবি অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার কার্যকর প্রয়োগ করতে পারতেন।’
ঢালাওভাবে সব সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে আখ্যা দেওয়াকে অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে টিআইবি। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সব সহকর্মীসহ শিক্ষামন্ত্রীর নিজেকে চোর সম্বোধন জনমনে সরকার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ধারণার অবতারণা করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোসহ সব উন্নয়নমূলক ভবিষ্যত রূপরেখায় সব ধরনের ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতি নির্মূলের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যেই লক্ষ্যপূরণে সরকার ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এমন সময়ে জাতির ভবিষ্যত বিনির্মাণে নিবেদিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো সংবেদনশীল একটি মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের বক্তব্য কোনও অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়।’
শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘নিজেকে দুর্নীতিগ্রস্তের দলভুক্ত করা যদি সৎসাহসের পরিচয় হয়, তবে আমরা তাকে প্রশংসা করি, একইসঙ্গে এই সৎসাহসের ধারাবাহিকতায় তিনি নৈতিক অবস্থান থেকেই পদত্যাগ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। নিজেকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করা যদি তার ক্ষোভ ও অসহায়ত্বের প্রকাশ হয়ে থাকে, তবে পদত্যাগের পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় যদি তিনি দুর্নীতিমুক্ত প্রমাণিত হন, তাহলে তিনি দেশবাসীর প্রশংসার পাত্র হতে পারেন।’