আসাদুজ্জামান: কালিগঞ্জে শিক্ষকের ফরমায়েস মতো পাম্প থেকে পেট্রোল আনতে না পারায় মারপিটের শিকার হয়েছে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্র। একইভাবে ওই শিক্ষকের নির্যাতনের শিকার হয়েছে ছাত্রটির সহপাঠি ফুফাতো ভাইও। এ ঘটনা জানিয়ে একজন অভিভাবক উপজেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগও দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে নির্যাতনকারী শিক্ষক কামরুল ইসলাম মারপিটের কথা স্বীকার করে বলেন ‘ঘটনাটি মিটমাট করে নেওয়া হয়েছে। আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম হেড স্যারকে সাথে নিয়ে’। অপরদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিমল রায় বলেন ‘ পেট্রোল কেনার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া বুধবার আমার স্কুলে সংরক্ষিত ছুটি ছিল। কি ঘটেছে জানিনা । তবে ছেলেটির অভিভাবক বলেছেন শনিবার স্কুলে এসে সব মিটিয়ে নেবো’। কালিগঞ্জের নারায়নপুর গ্রামের অভিভাবক আবদুল হান্নান জানান তার ছেলে হাসিবুল হোসেন পলক ও ভাগনে আল যুবায়ের রাকিব উত্তর কালিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তিনি অভিযোগ করে বলেন বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কামরুল ইসলাম মঙ্গলবার তার ছেলেকে এক লিটারের দুটি বোতল দিয়ে এক কিলোমিটার দুরে কালিগঞ্জ পেট্রোল পাম্প থেকে তার মোটর সাইকেলের জন্য পেট্রোল আনতে পাঠান। বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে ছেলেটি সাইকেলে পাম্পে গেলে সে শিশু হওয়ায় পাম্প কর্তৃপক্ষ তাকে পেট্রোল দেয়নি। পরে সে বাজারের একটি দোকান থেকে পেট্রোল কিনে নিয়ে আসে। এতে ওই শিক্ষক প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার তাকে মারপিট করেন। তার দেহের বিভিন্ন স্থানে কাটা ও ফোলা দাগ হয়ে যায়। এতে তার ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হয়। আবদুল হান্নান আরও অভিযোগ করেন যে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে শিক্ষক কামরুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন ‘ প্রয়োজনে আপনার ছেলেকে ওষুধ কেনার টাকা দিয়ে দেবো ’ । তিনি জানান পরে বিষয়টি লিখিত অভিযোগ হিসাবে কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দেওয়া হয়েছে । ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন বিষয়টি তদন্তের জন্য দিন নির্ধারন করেছেন। আবদুল হান্নান আরও বলেন শুধু তার ছেলে নয় তার ভাগনে একই শ্রেণির ছাত্র আল যুবায়ের রাকিবকেও বেধড়ক মারপিট করেছেন ওই শিক্ষক। রাকিবের মা রোকেয়া খাতুন জানান তার ছেলে রাকিব শিক্ষকের মারের যন্ত্রনা লাঘবে রোজই দুটি করে মোটা কপড়ের প্যান্ট পরে স্কুলে যায়। তিনি জানান বিষয়টি সম্পর্কে তার কাছে জানতে গিয়েই তিনি তার ওপর দৈনিক দৈহিক নির্যাতনের তথ্য জানতে পারেন । তার ছেলের দেহের বিভিন্ন স্থানে কাটা ও ফোলা দাগ রয়েছে। সে ভয়ে স্কুলে যেতে চায়না । আহত হাসিবুল ইসলাম পলক কালিগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন ‘ আমার জন্য নয়, হেড স্যারের জন্য পেট্রোল আনতে পাঠানো হয়েছিল। তা ছাড়া ছেলে দুটি খুবই বেয়াদবি করে । তাই মারধর করেছি । কিন্তু সেতো মিটে গেছে’। এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফারুক হোসেন জানান তিনি এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ক্লাস্টার কর্মকর্তা সহকারি শিক্ষা অফিসার প্রভাত কুমার রায়কে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এদিকে নির্যাতিত ছাত্র হাসিবুল হোসেন পলকের মা পলি খাতুন জানান ‘ আমার বাড়িতে প্রধান শিক্ষক পরিমল কুমার ও শিক্ষক কামরুল ইসলাম এসেছিলেন। তারা বলেছেন আপনার বাড়িতে আজ দুই জন শিক্ষক আসায় আপনার বাড়ির মাটি ধন্য হয়ে গেছে । তবে একটু মার হয়তো বেশি হয়ে গেছে। আপনারা শনিবার ছেলেকে নিয়ে স্কুলে আসেন , একটা মিটমাট করে নেওয়া যাবে’। প্রধান শিক্ষক পরিমল কুমার রায় জানান ‘ আমি এ ব্যাপারে কিছু জানিনা। তবে পেট্রোল কেনার কোনো ঘটনা নেই। মারপিটের খবর শুনে পলকদের বাড়ি গিয়েছিলাম। ওরা বলেছেন শনিবার এসে নিজেরাই মিটিয়ে নেবেন’।