জাতীয়

অবসরসীমা ৬২ করার প্রস্তাব, প্রবেশে বাড়ছে না বয়স

By Daily Satkhira

December 31, 2017

সরকারি কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বয়স তিন বছর বাড়িয়ে ৬২ করতে চান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই প্রস্তাব পাঠিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতে প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেনের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

এই দুই ক্ষেত্রে বয়স বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী চিঠিতে বলেছেন, ‘আমাদের দেশে সরকারি চাকরির বয়সসীমা হলো ৫৯ বছর। এই বয়স আমাদের ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী ছিল ৫৭ বছর। ১৯৭২ সালের জীবনসীমা ছিল মাত্র ৪৮ বছর। এই দিক বিবেচনা করলে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়স বাড়িয়ে ৬২ নির্ধারণ করা যায়।’

২০১১ সাল থেকে সরকারি কর্মচারীরা ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীরা ৬০ বছর বয়সে অবসরে যান। এর আগে ৫৭ বছরে অবসরে যেতে হতো সরকারি কর্মচারীদের।

জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বছরের শেষ দিকে সরকার জাতীয় নির্বাচন করতে চায়। এই নির্বাচন সামনে রেখে ২১ লাখ সরকারি কর্মচারীর ভোট পাওয়া ক্ষমতাসীন দলের একটি স্বাভাবিক লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই সরকারের শীর্ষ মহলে সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়স বাড়ানোর বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণের দিকেই হাঁটছে সরকার। তা ছাড়া সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা শিগগিরই অবসরে যাচ্ছেন। চাকরির অবসরের বয়স বাড়লে তাঁদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে না।

জনপ্রশাসনের এসব কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, সরকারের এক শ্রেণির কর্মকর্তা যাঁরা চাকরিজীবনের শেষ সময়ে রয়েছেন তাঁরা আরো বেশি সময় চাকরি করার জন্য অবসরের বয়স বাড়াতে চান। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছরের বেশি। তা ছাড়া মানুষের দক্ষতা ও সক্ষমতা বেড়েছে। এগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। তা না হলে একটা বড় অংশ অবসরে চলে যাবে। অবসরপ্রাপ্ত একটা বিশাল জনগোষ্ঠী সমাজকে টানতে হবে। তা ছাড়া বর্তমান সরকারের নীতি হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহ করা। কারণ এতে পদোন্নতির স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁরা বিভিন্ন সার্ভিসের অবসরের বয়স সমন্বয়ের কথা বলছেন। তাঁদের মতে, এক দেশে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের অবসরের বয়স ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ভিন্ন হলেও খুব বেশি পার্থক্য থাকা উচিত নয়।

জনপ্রশাসনের ওই কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছরে চাকরি থেকে অবসরে যান। বিচারপতিরা অবসরে যান ৬৭ বছর বয়সে। সে ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৬২ হলে সবার অবসরের বয়স কাছাকাছি থাকবে।

চাকরি থেকে অবসরের বয়স বাড়ানোর উদ্যোগ শুরু হলেও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক গত ২১ নভেম্বর সংসদে জানিয়েছেন।

জুনিয়র সরকারি কর্মচারীদের মতে, অবসরের বয়স বাড়ানোর চেয়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো জরুরি। কারণ একজন শিক্ষার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করতে প্রায় ২৭ থেকে ২৮ বছর লেগে যায়। এই দীর্ঘ শিক্ষাজীবন শেষে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক চাকরিতে প্রবেশের প্রস্তুতি শুরু করতে না করতেই সময় শেষ হয়ে যায়। সরকারি এই বাধ্যবাধকতার কারণে দেশের যুবসমাজ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে বর্তমানে ৬০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তাঁদের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে আইডি কার্ডের আদলে বিশেষ কার্ড তৈরি করা হবে। সিনিয়র সিটিজেনরা বিশেষ মর্যাদা ভোগ করবেন। বিশেষ করে তাঁরা চিকিৎসাসেবা সুবিধা পাবেন। পরিবহনে কম ভাড়ায় ভ্রমণ করতে পারবেন। এ ছাড়া বসবাসের জন্য তাঁদের বিশেষ আবাসন সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। গড় আয়ু বাড়ার কারণে সিনিয়র সিটিজেন করার বয়সও ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং প্রশাসনসংক্রান্ত একাধিক গ্রন্থের লেখক মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। সেই হিসাবে অবসরের বয়সসীমাও বাড়ানো যায়। তবে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চাকরিতে প্রবেশের বয়সও বাড়ানো উচিত। তবে দুই দিকের বয়সসীমাই এক বছরের বেশি বাড়ানো উচিত নয়। ’

তিনি বলেন, ‘অবসরের বয়স এক বছরের বেশি বাড়ালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাবে। আর চাকরিতে প্রবেশের বয়স এক বছরের বেশি বাড়ানো হলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। তাই দুই দিকেই সমান বাড়ানো উচিত। ’

বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের সভাপতি আল আমিন রাজু বলেন, ‘স্নাতকোত্তর শেষ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ২৭ থেকে ২৮ বছর লেগে যায়। এরপর বিসিএস দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে নিতেই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হয়ে যায়। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা দরকার। ’

তিনি বলেন, স্নাতকোত্তর পাস করতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সময় লাগে। সব বিশ্ববিদ্যালয় যদি ২৪ বছরের মধ্যে স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারে তাহলে বয়স বাড়ানোর দরকার হবে না। কিন্তু সেটা তো হওয়ার নয়। কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব কম সময়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিয়ে দেয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে।