আজকের সেরা

রাজনৈতিক দলে ঢুকে সংঘবদ্ধ হচ্ছে একাত্তরের দালালরা

By Daily Satkhira

December 31, 2017

অনলাইন ডেস্ক: একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সন্তান-স্বজনরা সারাদেশে সংঘবদ্ধ হচ্ছে। পাক বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত শান্তি কমিটির প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, এমন ব্যক্তি ও তাদের সন্তান-স্বজনদের কেউ কেউ নানা কৌশলে ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দলগুলোতে ঢুকে পড়েছে। তবে বিএনপি তাদের আদি পিতা। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই দলটিতে তারা আছে এবং থাকবে। এখন ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন করে সংঘবদ্ধ হচ্ছেন তারা। নানা কিছুর বিনিময়ে কোথাও কোথাও খোদ প্রশাসনও তাদের সহযোগিতা করছে। আবার স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোরও পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে শান্তি কমিটির এক সময়ের দাপটের নেতাদের সন্তান-স্বজনরা। যদিও ক্ষমতাসীন দল-জোটের শীর্ষ নেতারা নিয়মিতই বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে কোনো আপস নয়, সেখানে খোদ তাদের প্রশ্রয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের সংঘবদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী অনেকে।

আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেওয়া শান্তি কমিটির নেতা ও তাদের সন্তান-স্বজনসহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই হত্যা-সন্ত্রাস-নাশকতা মামলার আসামি বলেও অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে শান্তি কমিটির নেতা ও তাদের সন্তান-স্বজনরা তাণ্ডব ও নাশকতা চালায়, সরকারি গাছ কেটে ফেলে। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ চালায়। পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে। ওই ঘটনায় সারাদেশে স্থানীয় প্রশাসন একাধিক মামলা করেন। তবে দায়েককৃত মামলার আসামিরা প্রশাসন ও সরকারি দলের নেতাদের ম্যানেজ করে দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেক মামলার চার্জশিট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আগুন সন্ত্রাসে জড়িত শান্তি কমিটির নেতা ও তাদের সন্তান-স্বজনসহ জামায়াত শিবিরের অনেক নেতা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও প্রশাসন তাদের ধরতে পারছে না। এছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ভেড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন খোলস বদলে। ওই চেষ্টার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়েছেন। এমনকি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পাওয়ার জোর চেষ্টায় রয়েছেন।

শান্তি কমিটির নেতা ও তাদের সন্তান-স্বজনদের ক্ষমতাসীন দলে প্রবেশের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডসহ কেন্দ্রীয় নেতারা কিছুই জানেন না। তবে বিষয়টি যে ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে সেটি ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল নেতারা অনুধাবন করতে শুরু করেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ইতোমধ্যে ৫০ সহস্রাধিক শান্তি কমিটির সঙ্গে জড়িতসহ জামায়াত-শিবিরের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগে যোগদান করেছেন। কেউ কেউ পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ। আবার কেউ কেউ পদ না পেলেও আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের অর্থের বিনিময়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। কেউ কেউ বাবা-ভাই কিংবা স্বজনদের রক্ষা করতে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন কিংবা দল করেন। আবার যেসব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে তাদের স্বজনরা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।

জানা গেছে, সংঘবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যেই স্বাধীনতাবিরোধী আদর্শের মানুষেরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ছত্রছায়ায় আছেন। একই সঙ্গে অতীত অপকর্ম থেকে রেহাই পাওয়া, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আগামী নির্বাচনে জনগণ থেকে দলকে বিচ্ছিন্ন করার টার্গেট নিয়েও তারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপিরা নিজেদের আলাদা বলয় সৃষ্টি করতে শান্তি কমিটির নেতা ও তাদের সন্তান-স্বজনদের থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের দলে গুরুত্ব পদ দিয়েছেন। এতে দলের ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক ত্যাগী নেতা এখন এলাকা ছাড়া। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এত উন্নয়নের পরও তৃণমূলে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

জানা গেছে, তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন শান্তি কমিটির নেতা ও তাদের সন্তান-স্বজনরাসহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। আর এসব নেতাদের পূর্বসূরিদের খোঁজ নিলেও দেখা যাবে, তাদের পরিবারের কেউ না কেউ শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন। এদিকে তাদের ক্ষমতাসীন দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে সহজ হয়েছে পদ বেচা-কেনার কারণে। আওয়ামী লীগের কমিটির গঠনের ক্ষেত্রে উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে পদ বেচা-কেনার ঘটনা ছিল অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। আর অর্থের বিনিময়ে এসব পদে এসেছে শান্তি কমিটির নেতা ও তাদের সন্তান-স্বজন এবং জামায়াত-শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী আদর্শের নেতাকর্মীরা। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশে নিয়োগসহ স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে স্থানীয় এমপিদের ছত্রছায়ায় অনুপ্রবেশকারীরাই মূল কলকাঠি নাড়ছেন। ২০১৭ সালে ঘটে যাওয়া খুন-খারাবি থেকে শুরু করে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জমি দখল, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, দখলবাজি, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে লুটপাটসহ নানা কর্মকাণ্ডে মূল ভূমিকা পালন করছে এসব অনুপ্রবেশকারী। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুইটি গ্রুপ হয়ে গেছে। একটি গ্রুপে ত্যাগী নেতারা রয়েছেন, অন্য গ্রুপে শান্তি কমিটির নেতা ও তাদের সন্তান-স্বজনরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শান্তি কমিটির নেতা ও তাদের সন্তান-স্বজন এবং জামায়াত-শিবির আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি যে দলেই থাকুক না কেন তাদের চরিত্র কোনো দিন পরিবর্তন হবে না। তাদের উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের প্রতিশোধ ও স্বাধীনতাবিরোধী চেতনা বাস্তবায়ন করা।