ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি (কালিগঞ্জ) : কালিগঞ্জের তারালী ইউনিয়নে এক ব্যক্তির মাছের ঘের দখলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে আমিয়ান গ্রামে অরবিন্দু ঘোষ (৪২) ও দীনবন্ধু ঘোষ (৫৫) নামে দুই সংখ্যালঘুর ঘের জবরদখল করে নিয়েছে যুবলীগ নেতার পোষা সন্ত্রাসী বাহিনীরা। এসময় ঘেরের বেড়িবাঁধ কেটে দেয়ায় ভেসে গেছে দেড় লক্ষ টাকার বাগদা চিংড়ি। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কালিগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী অরবিন্দু ঘোষ (৪২)। লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিন ঘটনাস্থলে যেয়ে জানাযায়, উপজেলার আমিয়ান গ্রামের মৃত সূর্য্যকান্ত ঘোষের ছেলে অরবিন্দু ঘোষ ও তার সহোদর ভাই দীনবন্ধু ঘোষ আমিয়ান মৌজায় নিজস্ব ও লীজকৃত সাড়ে ৫ একর জমিতে দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত শান্তিপূর্ণ ভাবে মাছের ঘের করছেন। এর ধারাবাহিকতায় ২ মাস পূর্বে তারা পানি উত্তোলন পূর্বক মাছ চাষ শুরু করেন। সম্প্রতি ওই ঘেরের মধ্যখানে কয়েকজন ব্যক্তির নিকট থেকে ১ একর ৪১ শতক জমি উপজেলার কাঁকশিয়ালী গ্রামের মৃত জাকির হোসেন খন্দকারের ছেলে ও তারালী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন খন্দকার (৩২) ডিড নিয়ে মাছ চাষকৃত ঘেরের অংশবিশেষ জোরপূর্বক দখল নেয়ার পায়তারা শুরু করে। শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশংকায় বিষয়টি কয়েকদিন পূর্বে থানার অফিসার ইনচার্জকে লিখিত ভাবে অবগত করা হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ০২জানুয়ারি’১৮ তারিখে থানায় অনুষ্ঠিত শালিস বৈঠক থেকে শালিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেকেন্ড অফিসার লিয়াকত হোসেন চলতি বছর যেহেতু ২মাস পূর্বে মাছ চাষ শুরু হয়েছে সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবছর উক্ত ১ একর ৪১ শতক জমির হারির টাকা মিলন খন্দকারকে দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। এজন্য অরবিন্দু ঘোষকে ৭ দিনের সময় দেয়া হয়। তবে শালিস বৈঠক চলাকালে মিলন খন্দকারের নিকট তার গৃহীত ডিড এর কপি দেখতে চাইলেও তিনি দেখাতে পারেন নি। পরদিন ০৩জানুয়ারি১৮ তারিখে থানার অফিসার ইনচার্জ মহোদয় অরবিন্দু ঘোষকে থানায় ডেকে নিয়ে উক্ত জমির মধ্য থেকে ৬ বিঘা ছেড়ে দিতে বলেন এবং মিলন খন্দকারকে ওই জমি ভেড়ীবাধ দিয়ে দখলে নিতে বলেন। ওসি নিজেই উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকার জনৈক ভূমি জরিপকারক (আমিন) কে দায়িত্ব দেন ওই জমি মেপে বের করে দেয়ার জন্য। এরপর ০৬জানুয়ারি১৮ তারিখ শনিবার ভোরে অনিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারালী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন খন্দকার ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পূর্ব নলতা গ্রামের জিএম আনছার আলীর ছেলে জি,এম সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে শতাধিক ভাড়া করা সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অরবিন্দু ঘোষ ও দীনবন্ধু ঘোষের পৈত্রিক, এওয়াজ ও লীজকৃত মোট সাড়ে ৫ একরের মধ্য থেকে আড়াই একর জমি জোরপূর্বক দখলে নেয়। এসময় তারা ঘের তছনছ করে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিসাধন করে। সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে ও তথ্য নিতে বাঁধা প্রদান করে সন্ত্রাসী বাহিনী। এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি সনৎ কুমার গাইন জানান, শনিবার সকালে অরবিন্দু ঘোষ ও দীনবন্ধু ঘোষ তাদের মাছের ঘের জোরপূর্বক বাঁধ নিয়ে নেয়ার বিষয়টি আমাকে জানায়। আমি সাথে সাথে বিষয়টি ওসি মহোদয়কে মোবাইলে জানাই। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মাছের ঘেরে ভেড়ীবাধ দিয়ে জবরদখল করে নিয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এব্যাপারে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, জমি নিয়ে থানায় বিচার হয়েছিল। বিচারের পর মিলন ডিডকৃত জমি দখল করে নিয়েছে বলে শুনেছি। আমি এর সাথে সংশ্লিষ্ট নই। এবিষয়ে সহকারী সিনিয়র পুলিশ সুপার কালিগঞ্জ (সার্কেল) মির্জা সালাউদ্দিন বলেন লিখিত অভিযোগ পেয়েছি আইনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।