ধুলিহর প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর বাজারের সাহেব বাড়ি মোড় থেকে পুলিশের কাছ থেকে আসামী ছিনতাইয়ের আড়াই ঘন্টা পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফের সেই আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর মাগরিবের আযানের কয়েক মিনিটি আগে সদরের ফিংড়ী ইউনিয়নের কুলতিয়া ঘোষপাড়া গ্রামের পশু চিকিৎসক সত্যরঞ্জন ঘোষের পুত্র চন্দন ঘোষ (২৬) ভ্যানযোগে আশাশুনি-চাপড়া সড়ক দিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিল। এ সময় ভ্যানটি ধুলিহর এলাকার জাহানাবাজ মাদ্রাসার সামনে বটতলায় পৌছালে ৪ যুবক ২টি বাজাজ ডিসকভার মোটর সাইকেলে এসে পথরোধ করে নিজেদেরকে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্পের সদস্য পরিচয় দিয়ে পিস্তল দেখিয়ে ভ্যান থেকে নামিয়ে নেয় এবং গুলি করার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ফেলে রেখে যায়। ঘটনার রাতেই চন্দন ঘোষ বাদী হয়ে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। চন্দন ঘোষের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের সময় সে একটি মোটর সাইকেলের নাম্বার মুখস্থ করে রাখে। গাড়িটির নাম্বার সাতক্ষীরা হ-১২-৬০৪৬। এই নাম্বারটি খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটর সাইকেলের মালিক দেবহাটা থানার কোমরপুর গ্রামের নুর মোহাম্মাদ সরদারের পুত্র কলেজ শিক্ষক মোঃ তানভীর হোসেন। কিন্তু এই গাড়িটি ২৬/০৫/১৪ তারিখে সে যশোর জেলার কেশবপুর থানার মঙ্গলকোটের বসুন্তিয়া গ্রামের ফজর সরদারের পুত্র হালিম সরদারের নিকট এফিডেভিট মূলে বিক্রয় করে। এরপরে বিনা এফিডেভিটে বা নামপত্তন না করেই ৪ ব্যক্তির কাছ ঘুরে সাতক্ষীরা শহরের নিউ মীর এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে গাড়িটি বাকীতে গত ইং ১৭/০৭/১৭ তারিখে ক্রয় করে ধুলিহর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মোঃ শামছুর রহমান গাজীর পুত্র মোঃ মোমিনুর রহমান গাজী ওরফে মহিন (২৬)। এসব নানান সূত্র ও চন্দনের বর্ননায় ছিনতাইয়ের সাথে মহিনের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমান পায় পুলিশ। তাকে ধরতে পুলিশ কয়েক জায়গায় অভিযানও চালায়। বুধবার (১৭ জানুয়ারী) দুপুর একটার দিকে মহিন ধুলিহর বাজারের সাহেব বাড়ি মোড়ে অবস্থান করছে এ ধরনের একটি সংবাদের ভিত্তিতে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এস, আই অচিন্ত্য কুমার অধিকারী তাকে ধরতে সাইফুল নামের একজন পুলিশ কনষ্টেবলকে পাঠায়। এ সময় এস, আই অচিন্ত্য কুমার অধিকারী একটি মানসিক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাংদহা এলাকায় ছিলেন। সাহেব বাড়ি মোড়ে মহিনকে পেয়ে পুলিশ কনষ্টেবল সাইফুল তাকে আটক করে। কিন্তু ধুলিহর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম শফি খবর পেয়ে লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার নেতৃত্বে জোরপূর্বক মহিনকে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ খবর মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ নড়েচড়ে বসে। ধুলিহর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মহিনকে গোবিন্দপুর খেয়াঘাট এলাকা থেকে এস, আই অচিন্ত্য কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে কনষ্টেবল আনোয়ার, সাইফুল ও বাবুল বিশেষ কায়দায় আটক করতে সক্ষম হয়। আটকের পর মহিনকে সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার পরপরই পুলিশ তৎপর হওয়ায় আসামী ছিনতাইয়ের মূল নায়ক শফি গা ঢাকা দিয়েছে। তাকেও পুলিশ খঁজছে। অপর একটি সূত্র জানায়, ধুলিহর এলাকার চিহ্নিত একটি বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ও এলাকার বাইরে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিবি, সিআইডি ও বিভিন্ন সংস্থার পরিচয় দিয়ে এবং পুলিশ-প্রশাসনের সোর্স পরিচয়ে টাকা ও মালামাল ছিনতাই করে যাচ্ছে। তাদের নামে একাধিক হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও নাশকতার মামলা রয়েছে। মূলত ওই সংঘবদ্ধ ও চিহ্নিত চক্রের সদস্যরা এই ছিনতাইয়ের কাজটি করেছে বলে এলাকার একাধিক সচেতন মহল ধারনা করছে। এই চক্রের অন্যতম সদস্য মহিন। তার নামেও সদর থানা সহ বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, ধুলিহর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম শফি দীর্ঘদিন ধরে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় ভূমি জবর-দখল, চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন অপরাধী তার ছত্রছায়ায় থেকে নানান অপরাধ অব্যাহত রেখেছে। শফি এলাকায় জিরো থেকে হিরো হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও এই শফি ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো। আর এখন সে সমাজে দাপট দেখিয়ে নিজেকে নেতা হওয়ার চেষ্টায় রত আছে। ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এস, আই অচিন্ত্য কুমার অধিকারী মহিনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।