ফিচার

সাতক্ষীরায় ডিবির এসআই রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে হাজারও অভিযোগ; সংখ্যালঘু কুমারেশ আজও বাড়ি ছাড়া

By Daily Satkhira

January 19, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় ডিবি পুলিশের এস আই রোকনুজ্জামানের অত্যাচার ও চাঁদাবাজির কারণে ঘরছাড়া হয়েছেন কালিগঞ্জের কুমারেশ দাশ নামে এক পান ব্যবসায়ী। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার নিকট থেকে চার দফায় হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ৬৪ হাজার টাকাসহ চার চারটি ব্যাংক একাউন্টের চেক। আর এস আই রোকনুজ্জামানের দাবী কৃত চাঁদার বাকি এক লক্ষ টাকা না দেওয়ায় ফেরত পাননি জোর করে খালি চেকে স্বাক্ষর করে নেওয়া পান বিক্রেতা কুমারেশ দাশের ওই চারটি চেক। গত এক মাস ধরে মামলার ভয় দেখিয়ে আবারও ৪ লক্ষ টাকা দাবী করা হয়েছে তার নিকট। যে কারনে কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের শৈলপুর গ্রামের বাসিন্দা তারাপদ দাশের ছেলে পান বিক্রেতা কুমারেশ দাশ আজও গ্রেফতার ও ক্রসফায়ার আতংকে নিজ বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। খোজ খবর ও তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের তৎকালিন সেকেন্ড অফিসার এস আই শফিকুল ও তার সহযোগী এস আই রোকনুজ্জামান ও এস আই মোরশেদ খোদ ডিবি অফিসের ভিতরেই গড়ে তোলেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। তাদের কাজ ছিল ব্যবসায়ীসহ বভিন্ন ব্যক্তিকে তুলে এনে মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া। ডিবি অফিসের পাশে পোষ্ট অফিসের পাশ্ববর্তী পুলিশের পরিত্যক্ত একটি ভবন ছিল এই গ্রুপের একটি টর্চার সেল। সেখানে বিভিন্ন সময় লোক ধরে এনে পুলিশ সুপারের গোপন করে আটকিয়ে রাখা হত। এলাকাবাসী জানলেও এস আই শফিকুল, এস আই রোকনুজ্জামান ও এস আই মোরশেদের ভয়ে কেউ পুলিশ সুপারকে জানাতে শাহস পেত না। এভাবে তারা পুলিশ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে সাতক্ষীরা ডিবি অফিসকে রুপান্তরিত করে মানুষ কেনা বেঁচার হাটে। কিন্তু নবাগত পুলিশ সুপার যোগদানের পর ডিবি পুলিশের সেকেন্ড অফিসার এস আই শফিককে বদলি করা হয় কলারোয়া থানায়। এর পর থেকে ডিবি পুলিশের হয়রানি বন্ধ হলেও বন্ধ হয়নি এস আই রোকনুজ্জামানের অত্যার ও চাঁদাবাজি। গত বছরের ৩১ জুলাই ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে নোটিশ করা হয় কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের শৈলপুর গ্রামের বাসিন্দা তারাপদ দাশের ছেলে পান বিক্রেতা কুমারেশ দাশকে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নোটিশে বাদি করা হয় একই উপজোর একই ইউনিয়নের সাতবসু গ্রামের রমজান আলীর ছেলে আফজাল হোসেনকে। গত বছর ৯ আগস্ট এস আই রোকনুজ্জামান ধমকদিয়ে কুমারেশ দাশকে ডিবি অফিসে হাজির হয়ে বাদিকে ৪ লক্ষ টাকা পরিষোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে। কিন্তু এঘটনার আগেই আফজাল হোসেনের নিকট থেকে সুধে করে নেওয়া ১লাখ ৫০ হাজার টাকা সুদে আসলে পরিশোধ করেছিলেন কুমারেশ দাশ। ঘটনার দিন ৯ আগষ্ট সকালে সাতক্ষীরা ডিবি অফিসে হাজির হতেই এস আই রোকনুজ্জামান জোরকরে ৪ লাখ টাকার একটি কাগজে স্বাক্ষর করে লকাপে আটকিয়ে রাখেন পান বিক্রেতা কুমারেশ দাশকে। বলা হয় আফজাল হোসেনের নিকট থেকে ধার বাবদ নেওয়া ৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ না হলে ফেনসিডিল মামলায় চালান করে দেওয়া হবে। এভাবে এক দিন এক রাত আটক রাখার পর প্রতিবেশি রবিউল ও নুরইসলাম ডিবি অফিসে এসে দারগা রোকনুজ্জামানকে ২৪ হাজার টাকা দিলে দাবীকৃত ৪ লাখ টাকা পরিশোধের ১ মাসের সময় বেঁধে দিয়ে ইসলামি ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখার একটি খালি চেকে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই পান বিক্রেতা কুমারেশকে। এর ভিতর এক মাস যেতে না যেতেই দারগা রোকনুজ্জামান ওই পান বিক্রেতার বাড়ীতে গিয়ে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে মালুরবাচ্চা বলে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে এবং মাদারচোদ বলে টাকা নিয়ে অফিসে আসতে বলে। এঘটার দুই দিনের মাথায় কুমারেশ তারই পরিচিত সাতক্ষীরা জেলা তাঁতী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ধুলিহরের তুহিন খানকে নিয়ে ডিবি অফিসে হাজির হলেও দারগা রোকনুজ্জামানের হাত থেকে রেহায় মেলেনি কুমারেশের। বরং আরও তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন দারগা রোকনুজ্জামান। পরে বাড়ী থেকে তার স্ত্রী পূর্ণিমা দাশ গহনা বন্দক ও ধার দেনা করে দ্বিতীয় দফায় ২০ হাজার টাকা দারগার হাতে দিলে শান্ত হয় এস আই রোকনুজ্জামান। কিন্তু আরও একটি ইসলামি ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখার খালি চেকে স্বাক্ষর করে নেয় রোকনুজ্জামান। এ ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় রাত ৮টার দিকে অফিসে ডেকে তৃতীয় দফায় কুমারেশকে আটক রাখা হয়। ৪ লাখ টাকা দিলে রাতেই ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান সাতক্ষীরা অন্তরা মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটারের মালিক জেলা তাঁতী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন খান। তাকে বাঁচানোর জন্য দলীয় পরিচয় দিলেও তাতে কোন কাজ হয়নি। তুহিনের ভাষ্যমতে টাকা না দেওয়ায় রাত ১২টার সময় দারোগা কুমারেশকে মালুর বাচ্চা বলে ডেকে আবাদের হাটে কুলবাগানে নিয়ে ক্রসফায়ার দেওয়া হবে বলে উজু করায়। এক পর্যায়ে আবারও তৃতীয় দফায় ২০ হাজার টাকা ও কুমারেশের স্বাক্ষর করা ফাকা দুটি ব্যাংক একাউন্ট চেক নিয়ে ওই রাতেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। গত বুধবার সাতক্ষীরায় এসে সাংবাদিকদের কাছে কাঁদতে কাঁদতে ডিবি দারগা রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন কালিগঞ্জের পান ব্যবসায়ী কুমারেশ দাশ। বর্তমানে তিনি দারগা রোকনুজ্জামানের অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এব্যাপারে এস আই রোকনুজ্জামান জানান, ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কুমারেশকে চিনি না। কিছুক্ষন বাদে তিনি জানান এস আই মোরশেদ চেনে। বিষয়টি সাতক্ষীরা অন্তরা মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটারের মালিক তুহিন মিমাংশা করে দিয়েছে। আর পাটকেলঘাটার বিষয়। গত পরশু সিসি নিয়ে বদলি হয়ে যশোর চলে আসছি। বদলি হলে অনেক অভিযোগ উঠে। তথ্য অনুসন্ধ্যানে এস আই রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসেছে আরও রোমহর্ষক কাহিনী। ঘটনা গত বছরের অক্টোবর মাসের। কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের চাঁদপুরের বাসিন্দা মাদক ব্যবসায়ী মহিদুলের ছেলে শিবির ক্যাডার আলিমকে আটক করে ৮১ হাজার টাকায় রফাদফার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। ওই মাসেই একই উপজেলার একই ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ভ্যানচালক আক্তার হোসেনকে জোর করে ধরে এনে মাদকব্যবসায়ী বলে ডিবি অফিসে এক রাত এক দিন আটক রাখে। পরে মোটা অংকের টাকায় রফাদফা হলে মুক্তি মেলে ওই ভ্যান চালকের। ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর পাটকেলঘাটা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ভ্যারাইটি স্টোরের মালিক বাবুকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলে ডিবি পুলিশের এস আই শফিকুলের নেতৃত্বে এস আই রোকনুজ্জামান সহ বেশ কয়েক জন ডিবি পুলিশ জোর করে আটক করে নিয়ে আসে। ওই দিন রাত ৪ টার সময় বাবুর স্ত্রী এসে ২লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলে মুক্তি মেলে তার স্বামীর। এর কদিন যেতে না যেতেই পাশ্ববর্তী ব্যবসায়ী পাটকেলঘাটার আল্লার দান ক্লথ স্টোরের মালিক অহিদকে রাত ৮টার দিকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে আটক করে নিয়ে আসে এস আই রোকনুজ্জামান ও এস আই শফিকুল। কিন্তু ওই রাতেই মোটা অংকের টাকায় মুক্তি মেলে অহিদের। এমন অসংখ্য ব্যবসায়ীকে অহেতুক আটক করে হয়রানি করা হয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ চান ভুক্তভোগীরা।