সাবেক মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে চান। সে লক্ষ্যে জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। জামালপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ চৌধুরী। তিনি জামালপুর-৫ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা। শুধু আবদুল লতিফ বিশ্বাস ও ফারুক আহমেদ চৌধুরীই নয় বর্তমানে জেলা পরিষদের
চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এমন প্রায় ৪০ জন আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে ভোট করতে চান। এদের কেউ কেউ বিগত সময়ে দলের এমপি ও মন্ত্রী ছিলেন। জেলা পরিষদ লাভজনক হলেও ‘রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য’ তারা এমপি হতে চান।
আবদুল লতিফ বিশ্বাস জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী-এনায়েতপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। দশম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হন লতিফ বিশ্বাস। নৌকার টিকিট পান ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ মণ্ডল। এবার এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় নির্বাচনী এলাকায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মকাণ্ড জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এমপি হলেও নিজ এলাকা ছাড়াও সারা দেশে সরকারের উন্নয়ন-জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি সংসদের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়। নির্ধারিত একটি এলাকার এমপি হলেও সার্বিকভাবে দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলা যায়। আমি সেটাই করতে চাই। সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যেখানে রাখবেন, আমি সেখানেই থাকব।’
ঢাকার অদূরে গাজীপুরের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ- ডাকসুর সাবেক ভিপি মো. আখতারুজ্জামান। তিনি গাজীপুর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। জোর প্রচার-প্রচারণায় না থাকলেও তার কর্মী সমর্থকরা সেভাবেই মাঠ গোছাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান বলেন, দল যদি ভালো মনে করে এবং সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। ৭ম সংসদে তিনি এই আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন।
জামালপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি এবার জামালপুর-৫ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। ইতিমধ্যে জোর প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। তার প্রতি কেন্দ্রের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলেও দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন।
বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি এই আসনের দুইবারের সাবেক এমপি। বর্তমানে এ আসনের এমপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেব নাথ। জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আলম এমএসসি। তিনি এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি র.আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। পার্বত্য এলাকা খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী। তিনি খাগড়াছড়ির জাতীয় আসন ২৫৮ থেকে নির্বাচন করতে চান। বর্তমানে এ আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
শরীয়তপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছাবিদুর রহমান খোকা সিকদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। খোকা সিকদার এবার শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ) আসন থেকে দলের মনোনয়নে নির্বাচন করতে চান। সেভাবেই তিনি মাঠ গোছাচ্ছেন। এ আসনে বর্তমান এমপি প্রয়াত জাতীয় নেতা আবদুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাক।
ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী। তিনি ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। তিনি সাতক্ষীরা-০২ আসন থেকে নৌকা নিয়ে নির্বাচনে লড়তে চান। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ইতিমধ্যে গণসংযোগ থেকে শুরু করে সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আসনের বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি। নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ড. এবিএম জাফর উল্লাহ নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ আসনের বর্তমান এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দশম সংসদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
নীলফামারি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। তিনি দলের মনোনয়নে জেলার চারটি আসনের যে কোনো একটি থেকে মনোনয়ন চান। এই জেলায় তিনজন আওয়ামী লীগ ও একজন জাতীয় পার্টির এমপি রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন শেখ সামসুল আবেদীন খোকন। আগামীতে তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে দলের টিকিটপ্রত্যাশী। এ আসনে বর্তমানে নিজ দলের এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বিরোধী দলীয় চীফ হুইপের দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এমন আরো ৩০ জন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের টিকিটে এমপি পদে নির্বাচন করতে চান। সে লক্ষ্যে নির্বাচনী এলাকাসহ কেন্দ্রে জোর লবিং তদবির শুরু করেছেন। কেউ কেউ বর্তমান এমপিদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদটি লাভজনক হলেও এমপি পদে আগ্রহী বেশি। এমপি হলে মন্ত্রী হবেন-এমনটাও ভাবছেন কেউ কেউ।