যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সমঝোতায় ব্যর্থ হলে কী হবে তা নিয়ে জল্পনা চলছে। শনিবার মধ্যরাত থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের চলাবস্থা শুরু হয়েছে। সমঝোতা না হলে এই অবস্থা চলতেই থাকবে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে ১৬ দিনের জন্য মার্কিন সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছিল।
অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত একটি বিল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভায় পাস হয়। কিন্তু গতকাল এটি উচ্চকক্ষ পার্লামেন্ট সিনেটে পাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পেতে ব্যর্থ হয় বিলটি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন ও সীমান্ত সুরক্ষা নীতি ঘিরে সৃষ্ট বিতর্ক থেকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অচলাবস্থা সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রভাব ফেলবে। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার ওপর দৃষ্টি ফেলা যাক :
গৃহায়ন ও নগর উন্নয়ন
এই সংস্থার প্রায় ৮০ হাজার কর্মচারীর চাকরি খোয়াবে। তবে গৃহহীনদের জন্য জরুরি সেবা ও ঋণ অনুমোদনের কার্যক্রম চলবে।
পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা বা ইপিএ
এপিএর ১৪ হাজার ৫০০ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বে। তারা ছুটিতে যেতে বাধ্য হবে। গত শুক্রবার অবশ্য সংস্থাটির স্কট প্রুইট বলেন, সরকারি অর্থায়ন না থাকলেও তাঁর সংস্থা আরো এক সপ্তাহ কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
শিক্ষা
এই মন্ত্রণালয়ের প্রায় চার হাজার কর্মচারীর চাকরি থাকবে না। সরকারি অর্থায়ন ছাড়া এই বিভাগের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে।
বাণিজ্য
এই মন্ত্রণালয়ের ৪৮ হাজার কর্মচারীর মধ্যে ৯০ শতাংশই চাকরি খোয়াবে। বৈজ্ঞানিক ও অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম থমকে যাবে। এগুলোর মধ্যে আছে ন্যাশনাল ওশানিক অ্যাটমসফেয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সেন্সাস ব্যুরো ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এছাড়া মৎস্যবিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম চলবে।
শ্রম
এই মন্ত্রণালয়ের ১৫ হাজার কর্মচারীর ৮০ শতাংশ ছাঁটাই হবে। তবে বেকার ভাতা দেওয়া হবে।
অভ্যন্তরীণ (ইন্টেরিয়র)
এই মন্ত্রণালয়ের ৭০ হাজার কর্মচারীর মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি চাকরি খোয়াবে। আগের অচলাবস্থায় জাতীয় উদ্যান বন্ধ হলেও এবার খোলা থাকবে। তবে কিছু সেবা কমে যাবে যেমন, বিশ্রামাগার আগের মতো পুরোপুরি চালু থাকবে না।
ট্রেজারি
৮৮ হাজার কর্মচারী বেশির ভাগের চাকরি থাকবে না। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবা বিভাগের কর্মচারীরা ছাঁটাইয়ের আওতার বাইরে থাকবে। কারণ এখন কর দেওয়ার সময়।
স্বাস্থ্য ও মানবিক সেবা
৮২ হাজার কর্মীর অর্ধেক ছাঁটাইয়ের শিকার হবে। এর মধ্যে যারা অনুদান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত তাদের সংখ্যাই বেশি।
প্রতিরক্ষা
এই বিভাগের সাত লাখ ৪০ হাজার বেসামরিক কর্মচারীর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের চাকরি থাকবে না। এছাড়া কংগ্রেস ভোট না দিলে সামরিক কর্মকর্তারাও বেতন পাবেন না।
পরিবহন
এই বিভাগের ৫৫ হাজার কর্মচারী কাজ করছে। এর মধ্যে অর্ধেকের কম কর্মচারীর চাকরি চলে যাবে। তবে আকাশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানের নিরাপত্তা পরীক্ষা কার্যক্রম অক্ষত থাকবে।
বিচার
এই বিভাগের এক লাখ ১৫ হাজার কর্মচারীর মধ্যে ৮০ শতাংশই তাদের কাজ চালিয়ে যাবেন। কারণ তারা জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও ফৌজদারি বিচার কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন
সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকা মানুষ সুবিধা পেতে থাকবেন। ৬৩ হাজার কর্মচারীর বেশির ভাগেরই কর্মে নিয়োজিত থাকবে।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা
দুই লাখ ৪১ হাজার কর্মচারীর মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশের চাকরি থাকবে না। এগুলোর মধ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন, গবেষণা, নীতিমালা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রশিক্ষণ কাজে নিয়োজিতদের বাড়িতে থাকতে হবে। তবে শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা, পরিবহন সুরক্ষা প্রশাসনের কর্মচারীরা নিয়োজিত থাকবেন।
ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্স (প্রবীণদের সংস্থা)
সংস্থাটির তিন লাখ ৭৭ হাজার কর্মীর ৯৬ শতাংশ কাজ চালিয়ে যাবে। হাসপাতাল চালু থাকবে। তবে শিক্ষা সহায়তা ও বিভিন্ন বিষয়ের আবেদনের সাড়া দেরিতে মিলবে।
পররাষ্ট্র
এই মন্ত্রণালয়ের কতজন কর্মচারী চাকরি হারাবেন তা প্রকাশ করা হয়নি। পাসপোর্ট সেবা চালু থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পাসপোর্ট কার্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে।
জ্বালানি
সংস্থাটির ছাঁটাই সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে ২০১৩ সালে ৬৯ শতাংশ কর্মীর চাকরি চলে গিয়েছিল।
কৃষি
পুষ্টি কর্মসূচি, নারী ও শিশুবিষয়ক কর্মসূচি চালু থাকবে। বর্তমানে ছাঁটাই সম্পর্কে কোনো তথ্য মেলেনি।