আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ!

By Daily Satkhira

January 21, 2018

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয় বছরে পা দিতে না দিতেই সরকারি কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো মারাত্মক ঝক্কির মুখে পড়ে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতার মুখে স্বল্পকালীন বরাদ্দ আটকে যাওয়ায় গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সরকারি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। এতে বেতনবিহীনভাবে ছুটিতে যেতে বাধ্য হচ্ছে এক-চতুর্থাংশ সরকারি কর্মী। যার প্রভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, রাজস্ব, সামাজিক নিরাপত্তা, আবাসন, শ্রম ও পরিবেশ বিষয়ক দপ্তরগুলোর কাজের গতি মারাত্মক হ্রাস পাবে। দুর্যোগকবলিত মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।

এসবের জন্য ডেমোক্র্যাটদের দুষেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পরিস্থিতির চাপে তিনি দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণের উৎসব আয়োজনও বাতিল করেছেন।

অর্থসংকটে থাকা মার্কিন প্রশাসন সরকারি কাজকর্ম চালু রাখার জন্য চার সপ্তাহের একটি খণ্ডকালীন বাজেট পাসের তোড়জোড় শুরু করে। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে তা পাসও হয়ে যায়। তবে গত শুক্রবার সেটা আটকে যায় মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে। ১০০ সদস্যের সিনেটে শুক্রবার মধ্যরাতের ভোটাভুটিতে রিপাবলিকানদের প্রস্তাবটি ৫০-৪৯ ভোটে আটকে যায়। স্বল্পকালীন বাজেটটি পাস করার জন্য রিপাবলিকানদের ৬০টি ভোটের প্রয়োজন ছিল। অভিবাসীবিষয়ক একটি বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে বাকি ১০টি ভোট টানতে তারা ব্যর্থ হয়।

শিশুকালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারী অভিবাসীদের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে প্রণীত ডেফারড অ্যাকশন অন চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডিএসিএ) শীর্ষক কর্মসূচি নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতার জেরে বাজেটটি আটকে যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময় ডিএসিএর তীব্র বিরোধী। এ কর্মসূচি বাতিলে তাঁর জোর চেষ্টা সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে আটকে যায়। সেই একই ইস্যু নিয়ে দুই দলের মতৈক্য না হওয়ায় শুক্রবার মধ্যরাতে চার সপ্তাহের স্বল্পকালীন বাজেট পাসও আটকে যায়। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল এখন আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি কাজ চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাসের চেষ্টায় কাজ চালাচ্ছেন। গতকালই প্রস্তাবটি সিনেটে তোলার কথা।

সিনেটে সংখ্যালঘু ডেমোক্র্যাটদের নেতা চাক শুমার ভোটাভুটি শেষে বলেন, ‘প্রত্যেক আমেরিকান জানে, হোয়াইট হাউস, সিনেট, হাউস (অব রিপ্রেজেনটেটিভ) রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। সরকারি কাজ চালু রাখা তাদের দায়িত্ব। সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে আমাদের সঙ্গে কাজ করার দায়িত্বটা তাদের ওপর বর্তায়। প্রতিটি ধাপে তাদেরই নিয়ন্ত্রণ এবং শাসন করার দায়িত্বটা তাদের। অথচ দেখুন, তারা ব্যর্থ হয়েছে।’ শুমার জানান, ডিএসিএ চালু রাখা নিয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছানোর স্বার্থে মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্পের কথিত দেয়াল নির্মাণ নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটরা; কিন্তু ডিএসিএ নিয়ে তারা কোনো আপস করতে একেবারেই রাজি নয়।

উল্লেখ্য, ডিএসিএ কর্মসূচি ড্রিমার্সখ্যাত সাত লাখ অবৈধ অভিবাসীকে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে।

ট্রাম্প অবশ্য স্বল্পকালীন বরাদ্দ পাস আটকে যাওয়ার দায় ডেমোক্র্যাটদের ওপর চাপিয়েছেন। টুইটারে তিনি দাবি করেছেন, ‘কর হ্রাসের বিপুল অর্জনকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সরকারি কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে চায়’ ডেমোক্র্যাটরা। ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্ট তাঁর আনন্দ উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা পর্যন্ত বাতিল করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে অভিষেকের দ্বিতীয় বছরের প্রথম দিন ছিল গতকাল। বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট পদ অর্জনের এক বছর পূর্তি উদ্‌যাপনের জন্য তিনি ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে তাঁর নিজের রিসোর্ট মার-এ-লাগোয় সময় কাটানোর আয়োজন করেছিলেন। সিনেটে বিপর্যয়ের জেরে তিনি সেসব বাতিল করে রাজধানীতেই থাকছেন।

অন্যান্য রিপাবলিকান নেতাও ডেমোক্র্যাটদের দোষী করছেন। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা, সেনা পরিবার, ঝুঁকিপূর্ণ শিশু, সব আমেরিকানকে সেবা প্রদানে আমাদের দেশের সক্ষমতা—সব কিছুর ওপরে তারা আজ (শুক্রবার) রাতে রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছে।’ সেই সঙ্গে তিনি এটাও বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা তাদের বেপরোয়া দাবি আদায়ে আমাদের বৈধ নাগকিরদের জিম্মি করে রাখলেও অবৈধ নাগরিকদের মর্যাদার ব্যাপারে আমরা সমঝোতায় যাব না।’

কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের উত্থাপিত প্রস্তাবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি কাজ চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়। সেই সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের কাঙ্ক্ষিত ‘দরিদ্র শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা’ শীর্ষক কর্মসূচিতে আগামী ছয় বছরের জন্য পুনরায় অনুমোদন প্রদানের বিষয়টিও রাখা হয়। কিন্তু ডিএসিএ কর্মসূচিতে বরাদ্দ না থাকায় ডেমোক্র্যাটরা বেঁকে বসেন, যদিও রিপাবলিকানদের দাবি, ওই কর্মসূচি নিয়ে তোড়জোড়ের কিছু নেই। কেননা সেটার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৫ মার্চে।

স্বল্পকালীন বাজেট আটকে যাওয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীরা পরস্পরকে দুষলেও জনগণ দায় চাপাচ্ছে রিপাবলিকানদের ওপরই। ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসির জরিপে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্প প্রশাসনকে দোষী মনে করে। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটদের ওপর দোষারোপ করছে মাত্র ২৮ শতাংশ।

উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় কাদের বেশি, তা নিয়ে বিতর্ক হলেও বাস্তবতা হলো, গতকাল থেকে বেতনবিহীন সাময়িক ছুটিতে যেতে শুরু করেছেন সরকারি কর্মীরা। সিনেটে ভোটাভুটির পরই এসংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছেন হোয়াইট হাউসের বাজেট পরিচালক মিক মুলভেনে।

অর্থাভাবে সরকারি দপ্তর বন্ধ হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে এবারই প্রথম নয়। ১৯৯০ সালে দুইবার এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে এ সংকটের মুখে পড় মার্কিন প্রশাসন। সেবার প্রায় আট লাখ লোককে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়। আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িসের হিসাব বলছে, এবার মোট ৩৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর মধ্যে প্রায় সাড়ে আট লাখ লোককে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হবে।

এই বিপুলসংখ্যক লোককে ছুটিতে পাঠানো হলেও চালু থাকছে হোয়াইট হাউস, কংগ্রেস, কেন্দ্রীয় বিচারব্যবস্থা, প্রবীণ সেনাদের হাসপাতাল, সামরিক কার্যক্রম। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক, সীমান্ত, অভিবাসন বিষয়ক বেশ কয়েকটি দপ্তরের কাজ পুরোদমে চালু থাকবে। স্কুল আর গণপরিবহনব্যবস্থাও চালু থাকবে। জাতীয় উদ্যান আর জাদুঘরগুলো খোলা থাকবে বটে, তবে এসব খাতের অনেক কর্মীকে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হবে। আর এসব কিছুর সঙ্গে চালু থাকবে ট্রাম্পের সহযোগীদের সঙ্গে রুশ কূটনীতিকদের আঁতাতের বিরুদ্ধে বিশেষ প্রসিকিউটর রবার্ট মুয়েলারের তদন্ত কার্যক্রম।

অর্থাভাবে কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠানোর কারণে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা দপ্তরের কাজে স্থবিরতা আসবে। সেনা সদর দপ্তর পেন্টাগনের প্রায় সাত লাখ ৪০ হাজার বেসামরিক কর্মীর মধ্যে তিন-চতুর্থাংশকে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হবে। এর ফলে পেন্টাগনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি নিরাপত্তা খাতসহ অনেক কর্মসূচিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। কন্ট্রাক্টররা নতুন কোনো কাজের অনুমতি আদায় করতে পারবে না এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতেও তাদের বেশ বেগ পেতে হবে। সূত্র : এএফপি।