পেনশনের টাকা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি পাঠিয়েছেন দুর্নীতিসহ ১১ অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করা বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এই চিঠি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে আসে।
এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। পদত্যাগী এই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ ১১ অভিযোগ থাকায় তিনি এখন অবসরোত্তর সুবিধা পাবেন কি না সে বিষয়টিও পর্যালোচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ঠিকানা ব্যবহার করে ডাকযোগে পেনশন প্রাপ্তির চিঠিটি পাঠিয়েছেন বিচারপতি এস কে সিনহা। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বরাবরে লেখা ওই চিঠিতে বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘আমি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি যা গত ১১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসরকালীন যেসব প্রাপ্য রয়েছে তা পাওয়ার অধিকারী আমি। যেদিন থেকে আমার অবসরকালীন দিন শুরু হয়েছে সেদিন থেকে আমার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন বলেন, পেনশনের টাকা চেয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতির একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। এখন প্রসেস করা হচ্ছে। শিগগিরই এটি অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পেনশন পাবেন। এই নিয়মেই বিচারপতিদের পেনশন ছাড় করা হয় বলেও জানান তিনি।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র বলেন, সাধারণত চাকরির মেয়াদ ৮ বছর হলেই বিচারপতিরা অবসরকালীন ছুটি পেলেও, দুর্নীতিসহ ১১ অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করা বিচারপতি সিনহা এসব সুবিধা পাবেন কি না, সে বিষয়ে বিভিন্ন আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আইনের বাইরে গিয়ে কোনো কাজই করা হবে না বলেও জানান তিনি। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই যুদ্ধাপরাধের একটি মামলার শুনানিতে একাত্তরে নিজের শান্তি কমিটির সদস্য থাকার কথা তুলে ধরে আলোচনায় আসেন বিচারপতি সিনহা। তারপর প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়ে বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ নানা সময় তুলে আলোচনার জন্ম দেন তিনি। নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন নিয়ে তার সঙ্গে সরকারের বিরোধ হয় আলোচিত। এরপর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপন নিয়েও সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন চলে বিচারপতি সিনহার। তার শেষ বিতর্কের শুরু সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে, যা প্রথমে ছুটি এবং শেষে পদত্যাগে গিয়ে শেষ হলো।