পর্যটনের নতুন গন্তব্য হয়ে উঠছে ‘দ্বীপের রানি’ খ্যাত ভোলার সর্বদক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সমুদ্র ছুঁই ছুঁই এই এলাকায় নতুন আকর্ষণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ‘জ্যাকব টাওয়ার’। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের আদলে নির্মিত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার এই ওয়াচ টাওয়ারটি গতকাল বুধবার বিকেলে উদ্বোধন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
অত্যাধুনিক স্থাপত্যকলার নান্দনিক বৈভব নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ২২৫ ফুট উচ্চতার টাওয়ারটির উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জ্যাকব টাওয়ারটি বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সব উদ্যোক্তাকে এগিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘চরফ্যাশনের রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়নের চিত্র দেখে আমি অভিভূত, আনন্দিত।’
চরফ্যাশন পৌরসভার এই টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। প্রায় ২০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। টাওয়ারটির ডিজাইন করেছেন স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন। গত বছর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নির্মাণাধীন প্রকল্পটি পরিদর্শন করে এর নামকরণ করেন ‘জ্যাকব টাওয়ার’।
ওয়াচ টাওয়ারটিতে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার। এর সাহায্যে পর্যটকরা চরকুকরিমুকরি, তারুয়া সৈকত ও বঙ্গোপসাগরের একটি অংশসহ চারপাশের ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পর্যবেক্ষণ ও উপভোগ করতে পারবে। টাওয়ারে উঠতে জনপ্রতি প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা।
সরকারি টিবি হাই স্কুল মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল হামিদ বলেন, ‘চরফ্যাশনের উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি। আজ বাস্তবে দেখে আমি মুগ্ধ। আপনাদের ভোটে পর পর দুই দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের নেতৃত্বে এই এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে যাচ্ছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যটনশিল্পের পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটেছে। সেই চিন্তাধারায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বাধুনিক ও সুউচ্চ জ্যাকব টাওয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে এক নতুন ধারা যোগ হয়েছে। এই টাওয়ার দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।’ তিনি বলেন, ‘পর্যটনশিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করতে পর্যটকের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘শিক্ষা একটি জাতির উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিককে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। ২১ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে। সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে চলছিল নির্যাতন। আমাকে ও জ্যাকবকে এলাকায় আসতে দেওয়া হয়নি। কায়কোবাদ হত্যা মামলায় আমাদেরকে আসামি করে জেলে নির্যাতন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভোলার চারটি আসনের মধ্যে চরফ্যাশন-মনপুরা উপজেলায় জ্যাকব সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছে। চরফ্যাশন একদিন জেলা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমার সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।’