শ্যামনগর প্রতিনিধি: বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের বঙ্গপসাগর উপকূলবর্তি সুন্দরবন বেষ্টিত দেশের সর্ববৃহত উপজেলা শ্যামনগর। এখানে ঘনবসতি কম থাকলেও জনসংখ্যা কম নয়। এ উপজেলায় প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষের বাস। দুর্যোগ প্রবণ বাংলাদেশের মধ্যে এটি একটি অন্যতম দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হয় সাধারণ মানুষদের। তাছাড়া এই এলাকায় দারিদ্রতার হার অনেক বেশি। প্রকৃতির নানান বেখেয়ালি বৈশিষ্ট্যের কারনে এই এলাকার মানুষের মধ্যে রোগ ব্যাধির প্রকোপ দেশের অন্য উপজেলা গুলোর তুলনায় একটু বেশি। চিকিৎসার জন্য এই উপজেলায় কোন উন্নত ব্যবস্থা না থাকার কারণে এখানকার অল্পসংখ্যক বিত্তশালীরা দেশের বা বিদেশের উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোর দারস্থ হন। কিন্তু সমস্যার কথা হলো শ্যামনগরের বৃহত্তর নিম্ন আয়ের দারিদ্র শ্রেণির মানুষের একমাত্র আশা ভরসার স্থান শ্যামনগর সদর হাসপাতালে নেই তেমন কোন উন্নত ব্যবস্থা আর না থাকলেও নেই যথাযথ ব্যবহার। শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ডাক্তার শুন্যতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও লোকবলের অভাবে ভেঙে পড়েছে এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা। এখানকার চিকিৎসা সেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সঙ্কা দেখা দিয়েছে। আইলা বিধ্বস্ত অবহেলিত এ জনপদের সাধারণ মানুষ তাই তাদের নূনতম স্বাস্থ্যসেবা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২০০৮ সালের ১৫ মে ৩০ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। হাসপাতালটি ৩০ শয্যা থাকাকালীন যে সুবিধা ছিল ৫০ শয্যার ক্ষেত্রেও একই সুবিধা। হাসপাতালে প্রতিনিয়তই শতাধিক রোগী ভর্তি থাকতে দেখা যায়। চিকিৎসা সেবার জন্য এখানে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতির সুবিধা থাকলেও ডাক্তার ও লোকবলের অভাবে সেগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবহার না হওয়ার আগেই তা নস্ট হওয়ার উপক্রম। হাসপাতালে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় গরীব রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিকসহ জেলা শহরে ছুটতে হয়। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিকসহ নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয় অনেক রোগীকে। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য এখানে কিছু সুবিধা থাকলেও সেগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ডাক্তার ও লোকবলের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি। শ্যামনগর হাসপাতালে ডাক্তারদের পদসংখ্যা ৩৪ হলেও আছেন মাত্র চারজন। এর মধ্যে দু’জন আছেন প্রেষণে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিভাগে নির্ধারিত কোনো ডাক্তার নেই। আর সেবিকা ২৫ জনের স্থলে আছেন ২২ জন। তারমধ্যে তিনজন আছেন প্রেষণে। ওয়ার্ড বয় তিনজনের স্থলে আছে দু’জন। ল্যাবরেটরি এটেনডেন্ট পদটি বরাবরই প্রেষণে আছে। অপারেশন থিয়েটার বয় প্রেষণে আছে। মালি পদটিও প্রেষণে আছে। সুইপার মাত্র পাঁচজন। আয়া দু’জনের স্থলে আছে একজন। এছাড়া শ্যামনগর হাসপাতালে বিভিন্ন শ্রেণিতে শূন্য পদ খালি আছে ৮৬জন। উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এলাকার সাধারণ মানুষ শ্যামনগর সদর হাসপাতালের এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য প.প. কর্মকর্তা টিএইচএ ডা. আব্দুল গফুর জানান, লোকবলের অভাবে সঠিক সেবা দেওয়া কষ্টকর। তারপরও আমরা সীমিত ডাক্তার ও আনুসঙ্গিক জনবল নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সেবা দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন ডা. তওহিদুর রহমান বলেন, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সময় লাগবে।