ফিচার

বিএনপির ভাগ্য নির্ধারণ ৮ ফেব্রুয়ারি !

By Daily Satkhira

February 02, 2018

অনলাইন ডেস্ক: ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর আরেকটি নির্বাচনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিএনপি। এ বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে যেকোনও মূল্যে দলটির অংশগ্রহণ দেখতে চান বিএনপি মতাদর্শের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা। তারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হওয়া চলবে না বিএনপির। আর এই বিভ্রান্ত হওয়ার সবরকম সুযোগই আসছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। এদিন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকরা মনে করেন, ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে রায় দেওয়া হবে, এর মধ্য দিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ কারণেই তাদের প্রত্যাশা, ওইদিন বিএনপির উচিত হবে, রায় যাই হোক না কেন, আচরণ ও প্রতিক্রিয়ায় সীমা লঙ্ঘন না করা। এমনকি রায় নিজেদের প্রত্যাশার বাইরে গেলেও প্রতিবাদ কর্মসূচি হতে হবে জোরালো, কিন্তু অহিংস। এর ব্যত্যয় ঘটলে আগামী নির্বাচনের পথরেখা থেকে বিএনপির দূরে সরে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বুদ্ধিজীবীরা।

কেউ-কেউ বলছেন, গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার আদালত থেকে ফেরার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলেও এর পেছনে উস্কানি ছিল অন্য কারও। আর এটি পরিষ্কার হয়েছে ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই। বিএনপির কয়েকশ’ নেতার বাড়িতে পুলিশ ‘হানা’ দিয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি গত শনিবারেই একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, সরকার ঠিক এই ঘটনাই ঘটাবে। যেকোনও শৃঙ্খল সভা-সমিতিতে তারা (একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার নাম উল্লেখ করে) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আর এজন্য বিএনপিকে ধীশক্তি ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে।’ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভাষ্য, ‘৮ ফেব্রুয়ারি যা-ই কিছু হোক না কেন, ওইদিন আসলে বিচারকের পরীক্ষার দিন, স্বাধীন বিচার বিভাগের পরীক্ষার দিন। ঠিক একইভাবে বিএনপিরও পরীক্ষার দিন।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় কিনা, মননশীলতার পরিচয় দেয় কিনা, তা দেখার বিষয়। আশা করবো, তারা কোনোভাবেই কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না। সেদিন সরকারি বাহিনী এবং আরও হাজার দশেক লোক ছড়িয়ে থাকবে। তাদের (বিএনপির) উচিত হবে সতর্ক থাকা।’ ‘বিচার যদি তাদের (বিএনপি) প্রত্যাশার বাইরে যায়, তাহলে সারাদেশে দশ লাখ কালো পতাকা উড়িয়ে দেওয়া, অন্য কিছু না। বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।’-বলেন জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এই পর্যবেক্ষক। তবে কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই সরকার পরিকল্পিতভাবে এ বছর খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টিকে সামনে এনেছে। এ কারণে দেশে রাজনৈতিক সহাবস্থানের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দুর্নীতি নিয়ে কী ঘটনা ঘটেছে, তা বলতে পারবো না। এই মামলাটিকে নির্বাচনের বছরে সামনে আনা হয়েছে। এটা তো অনেক পুরনো মামলা। আরও অনেক মামলা আছে, অনেক দুর্নীতি আছে, সেগুলো নিয়ে এতকিছু হয়নি। কিন্তু খালেদা জিয়ার এই মামলা নিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।’ মান্নার ভাষ্য— ‘একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব করবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না, এটাই ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। আমি মনে করি, সবারই দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত ছিল। একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক পরিস্থিতি যদি বিপদগ্রস্ত হয়, সেটা কাম্য নয়।’ আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যাশা করেন, ‘আমি আশা করবো, বিচারে যেন সবাই আইনের পথে থাকেন। আইনের সব রকম সহায়তা যেন সবাই পান।’ সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অবশ্য এ নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘যা বলার ৮ তারিখের পর বলবো।’ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদলগুলোর সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার পাশে থাকার কথা দিলেও নির্বাচনের বিষয়ে তারা আপষহীন। শরিকদলগুলোর নেতারা মনে করছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করলেও আগামী নির্বাচন থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত হবেন না। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সর্বনিম্ন আশ্বাস পাওয়ার সাপেক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের। জোটের শরিক একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি কী করবে, সেটার ভিত্তিতে রাস্তায় নামতে হবে, এটা কোনও কথা না। যুক্তি দিয়ে বোঝার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সাময়িক আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হতে পারে, সরকারের কী ক্ষতি হবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতার ভাষ্য, ‘পুরো সময়টায় বিএনপি আইনের পথে থেকেছে। এখন রায় হলে কেন রাজনৈতিক কর্মসূচি আসবে? এটা তো হতে পারতো যে, শুরু থেকেই এই মামলায় না লড়া। বিএনপি জোটের বৈঠকেও কোনও কৌশল (আন্দোলনের) বলা হবে না বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। ফলে, আমাদের কী, আমরা তো বেঁচে গেলাম।’ যদিও এ বিষয়ে বিএনপি জোটের জ্যেষ্ঠ নেতা ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন,‘ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর আরোপিত মামলাটি মিথ্যে মামলা, রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার শাস্তি হলে আমরা প্রতিবাদ করবো।’ জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন,‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, তার একটি নির্বাহী কমিটি আছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপারসন। দলের করণীয় ঠিক করতে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। করণীয় ও কৌশল ওইদিন ঠিক করা হবে। যারা পরামর্শ দিয়ে আসছেন ও দিচ্ছেন, তাদের পরামর্শ বিএনপি মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে।’