নিজস্ব প্রতিবেদক : রসরাজ দাস নামের এক অশিক্ষিত মৎস্যজীবির ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে ইসলাম ধর্মালম্বীদের ধমীয় অনুভুতিতে আঘাত আনা হয়েছে এমন অভিযোগের যথাযথ তদন্ত না করেই ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের দু’শতাধিক ঘরবাড়ি ও ১৬টি মন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানোর পর আগুন দেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত রসরাজ দাসের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জেলেপাড়ায় হলেও সেখান থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হিন্দুদের জমি দখল করে নেওয়ার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি নাসিরনগরে হিন্দুপাড়ায় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। নাসিরনগর উপজেলা সদরের সরকারি কলেজ ও সরকারি স্কুল মাঠে যারা প্রশাসনের কাছ থেকে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে উস্কানিমূলক জোরালো বক্তব্য দিয়ে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করার কথা বলে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়িয়েছিল তাদেরসহ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দাতাদের নাম এজাহারে উল্লেখ না করে পুলিশ অজ্ঞাতনামা এক হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে নিজেদের আর্থিক বাণিজ্যের পথ হাসিল করেছে। হামলার পরবর্তী নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক থাকার কথা বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এমনকি ঘটনার ভয়াবহতা সরেজমিনে দেখে এসে প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী সাঈদুল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজে হিন্দু সম্পদায় সম্পর্কে যে কটাক্ষ করেছেন তা মৌলবাদিদের উৎসাহিত করেছে। দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের এ ধরণের বক্তব্যের কারণে বৃহষ্পতিবার রাতে নাসিরনগরে আরো পাঁচটি হিন্দু বাড়িতে আগুণ লাগানো হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে একের পর হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিচার না হওয়ায় হবিগঞ্জের মাধবপুরে প্রতিমা ভাঙচুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক শক্তি এ ধরণের ঘটনা ঘটাতে সাহস পেয়েছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও হবিগঞ্জের মাধবপুরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে শুক্রবার সকাল ১১ টায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা আরো বলেন, বর্তমানে ক্ষতাসীন দলের নেতা কর্মী ও জামায়াত শিবির ছেড়ে আসা নব্য আওয়ামী লীগাররা যেভাবে একের পর এক হিন্দু ধর্মালম্বীদের নারী ও সম্পদ, আশাশুনির শ্রীউলা ও সদরের ধুলিহরের শালিখা মন্দিরের জমিসহ বিভিন্ন মন্দিরের জমির উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে তাতে তাদের দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং এ দেশকে সকল ধর্মালম্বীদের বসবাসের যোগ্য করে তুলতে বর্তমান সরকারকে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বাতিল করে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে এসে সকল ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু সরকার বলে প্রমান করতে হবে। সবশেষে বক্তারা ঘটনার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। একইসাথে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা ছাড়াও অতি দ্রুত সরকারি খরচে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি নির্মান ও পূর্ণবাসনের দাবি জানান। তবে নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে ও মন্দিরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালানোর সময় যে সমস্ত মুসলিম যুবক হামলাকারিদের প্রতিহত করতে এগিয়ে এসেছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখা ও বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ সদর উপজেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসুচি চলাকালে প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি বিশ্বজিৎ কুমার সাধু। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি মঙ্গল কুমার পাল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য গোষ্ট বিহারী মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নারায়ন মজুমদার, সদর শাখার সম্পাদক নিত্যনন্দ আমিন, জয়মহাপ্রভু সেবক সংঘের কেন্দ্রীয় পরিষদের সহ-সভাপতি ডাঃ সুশান্ত ঘোষ, বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শিবপদ গাইন, আশাশুনি শাখার সভাপতি সুবোধ চক্রবর্তী, কলারোয়া শাখার সভাপতি সিদ্ধেশ্বর চক্রবর্তী, দেবহাটার সম্পাদক চন্দ্রকান্ত মল্লিক, মানবাধিকার কর্মী মাধব দত্ত, অপরেশ পাল, বিকাশ দাস, সুধাংশু সরকার, প্রমুখ।