অনলাইন ডেস্ক: বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও আসলে এরা খুব বেশি আলাদা নয়। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। উদ্ভিদের উপর বিভিন্ন অ্যানেস্থেসিয়ার (চেতনানাশক ওষুধ বা রাসায়নিক পদার্থ) প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, চেতনানাশক ওষুধে মানুষ ও পশু-পাখির মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় একই প্রতিক্রিয়া ঘটে উদ্ভিদেও। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরেন্স এবং জার্মানির বন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় অক্সফোর্ড অ্যাকাডেমিক জার্নালে। বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদের উপর অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে লজ্জাবতী, মটর, সানডিউ ও ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ (এক প্রজাতির গাছ যা ফাঁদ পেতে মাছি শিকার করে) এ চার প্রজাতির উদ্ভিদ বাছাই করেন। গাছগুলোর মূল লিডোকেইন নামক একপ্রকার স্নায়ু শিথিলকারী পদার্থে ডুবানো হয়। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, উদ্ভিদগুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রকার অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা। গবেষণার আরেকটি বিষয় হলো, উদ্ভিদের মধ্যে এসব অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাব মানুষ বা অন্য প্রাণীদের মতোই কিনা তা জানা। অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্ভিদগুলোর অঙ্গের ছবি ধারণ করেন বিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, এ পরিস্থিতিতে মানুষ বা পশু-পাখির কোষে যে ধরনের প্রতিক্রিয়ার দেখা মেলে একই প্রতিক্রিয়া ঘটে উদ্ভিদের কোষে। তাছাড়া, সবগুলো উদ্ভিদেই অ্যানেস্থেসিয়া একইরকম প্রভাব ফেলতে দেখা যায়। এর প্রভাবে প্রতিটি গাছেই আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয় এবং সেগুলো অসার হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের কথা বলা যেতে পারে। এ উদ্ভিদের পাতা অনেকটা চোয়ালের মতো। কোনো পোকা এর চোয়ালসদৃশ পাতার সংস্পর্শে এলে পাতার সাহায্যে পোকাটিকে আঁটকে ফেলে এরা। তাই এদের নাম ফ্লাইট্র্যাপ, অর্থাৎ মাছির ফাঁদ। বিজ্ঞানীরা দেখেন, অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাবে ফ্লাইট্র্যাপগুলোর পাতা স্বাভাবিক আচরণ করছে না। এদের মাছি ধরার ফাঁদ অকেজো হয়ে যায় এবং হজম ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়। ওষুধের প্রভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে এদের ১৫ মিনিট সময় লাগে। একই প্রতিক্রিয়া দেখায় লজ্জাবতী, তবে এদের স্বাভাবিক হতে সময় লাগে ৭ ঘণ্টা।