জাতীয়

সর্বোচ্চ নিরাপত্তার চাদরে সারা দেশ

By Daily Satkhira

February 08, 2018

রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা জোরদারে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ-র‌্যাব। নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীসহ সবকটি বিভাগীয় শহর এবং বেশির ভাগ জেলায় র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি নামানো হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রাজধানীতে নামানো হয়েছে ২০ প্লাটুন বিজিবি। নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে বিভিন্ন জেলায় নতুন করে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। অন্যদিকে গত কয়েক দিনে কেবল ঢাকাতেই বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের অন্তত দুই হাজারের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দলটির। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও যুবদল উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীরসহ দলের কেন্দ্রীয় ও নগর নেতাদের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালায়। এর মধ্যে আটক করা হয়েছে বিএনপির তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নজরুল ইসলাম, এসএম সায়েমসহ বেশকয়েক নেতা-কর্মীকে।

এদিকে নিয়মিত মামলার আসামির পাশাপাশি এই গণগ্রেফতারে থানার হাজতগুলোতেও তিল ধারণের কোনো ঠাঁই নেই। গতকাল নিরাপত্তা নিয়ে পৃথকভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। প্রত্যেকেই নিজ নিজ বক্তব্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা বলেছেন তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি দেশে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হতে দেওয়া হবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের যা যা করার তাই করবে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায়-পরবর্তী বাংলাদেশ ভালো থাকবে। জানা গেছে, খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে আগামী তিন দিন পুলিশের পাশাপাশি মাঠে থাকবে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জোরদার চেকপোস্টে তল্লাশি : বিশেষ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ডিএমপি এলাকায় কর্মরত সব সংস্থার সদস্যের ছুটি গতকাল থেকে বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। রায়-পরবর্তী সহিংসতা হতে পারে- এমনটি বিবেচনায় রেখে সম্ভাব্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় সহিংসতা হতে পারে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি কারা এগুলো ঘটাতে পারে তাদেরও একটি সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই তালিকা আইন প্রয়োগকারী প্রতিটি সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। নাশকতা হতে পারে এমন সম্ভাব্য স্পটগুলোতে আগে থেকেই পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। তারা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। গতকাল সারা দিন সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ ও র‌্যাব। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, রিকশা, মোটরসাইকেল, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। তল্লাশি করা হচ্ছে সঙ্গে থাকা ব্যাগ, বস্তা ও লাগেজ। রেলপথ, সড়কপথ ও নৌপথসহ সব খানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনও। সন্দেহ হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশ ও র‌্যাব বলছে, নাশকতায় আশঙ্কায় তাদের ধরা হচ্ছে। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে রামপুরা টেলিভিশন ভবনের সামনে চেকপোস্ট বসিয়েছে র‌্যাব-৩ এর একটি টিম। তখন ওই টিমের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর আবদুল্লাহ আল মারুফ। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ সতর্কতার অংশ হিসেবে এই চেকপোস্টটি বসানো হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে রাজধানীর বাইরে থেকেও যানবাহন প্রবেশ করে। তবে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান অবহিত করেছেন, পুরো ব্যাটালিয়নের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চিত্র। অনেকটা একই চিত্র অন্য সব ব্যাটালিয়নগুলোতেও। র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ৬টি চেকপোস্ট বসিয়েছে র‌্যাব। একসঙ্গে ৫টি প্যাট্রল টিম বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। তবে বইমেলাকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য সময় ২টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হলেও এবার বসানো হয়েছে ৩টি। একই সঙ্গে রাখা হয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্স। সাদা পোশাকেও অনেকগুলো টিম কাজ করছে বইমেলা এলাকায়। দুপুরে রাজধানীর প্রবেশমুখ আবদুল্লাহপুরে র‌্যাব-১ এর চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মেজর ইশতিয়াক। বিপরীত পাশেই ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। এ ব্যাপারে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, একসঙ্গে আমরা ৫টি চেকপোস্ট পরিচালনা করছি। তবে রাজধানীর প্রবেশমুখ আবদুল্লাহপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনের দিকে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে। এর বাইরে পুরো ব্যাটালিয়নে টহল দিচ্ছে ৫টি বিশেষ প্যাট্রল। সাদা পোশাকেও র‌্যাব সদস্যরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার প্রবেশমুখ সাইনবোর্ড এলাকায় দেখা গেছে, আগের তুলনায় চেকপোস্টে দ্বিগুণের বেশি জনবল বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহভাজন বাস, লেগুনা, ব্যক্তি ও মোটরসাইকেলে তল্লাশি চালানো হয়। বেলা ২টার দিকে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী মোটরসাইকেল আরোহী দুই যাত্রীকে নামিয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হয়। ঢাকায় যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। সদুত্তর দেওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। যাত্রাবাড়ী মোড় এবং সায়েদাবাদ চেকপোস্টে সন্দেভাজন সব ধরনের যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। রিকশা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও ভ্যানিটি ব্যাগ তল্লাশি করা হয়। হেঁটে যাওয়া ব্যক্তিরাও তল্লাশি থেকে বাদ পড়েননি। তাদের মানিব্যাগ, হাতে থাকা ব্যাগ, প্যান্টের পকেট চেক করাসহ মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হয়।

জানা গেছে, গাবতলী পর্বতা সিনেমা হলের সামনে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশনসহ শতাধিক স্পটে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাব। বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ, রেলের ছাদে ভ্রমণকারী এবং কমলাপুর বা বিমানবন্দর স্টেশনে সন্দেহভাজন হিসেবে ঘোরাফেরা যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। এসব অভিযোগে গতকাল অর্ধশত ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং অনেককে মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য রেঞ্জ ডিআইজি ও কমিশনারদের সঙ্গে আইজিপির একটি ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে। সারা দেশে পুলিশের কী প্রস্তুতি রয়েছে, আরও কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সেসব বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এক বিন্দু ছাড় নয় : কেউ সহিংসতা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এক বিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, ‘কেউ শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সহিংসতা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কোনোও ধরনের নৈরাজ্য ঠেকাতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য পুলিশি যত কৌশল রয়েছে, সবকিছুই আমরা নিয়েছি।’ গতকাল ডিএমপি সদর দফতরে অনির্ধারিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি আরও বলেন, একটি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আমরা প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের গুজব-শঙ্কার কথা শুনছি। আমরা এসব বিষয়ে অবগত। নগরবাসীকে রক্ষার জন্য, সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। সরকারের সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। আমরা নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নাগরিকের নিরাপত্তায় হুমকি তৈরি করতে পারবে না। সে জন্য যা কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, আমরা নেব।

বিএনপির পক্ষ থেকে গণগ্রেফতারের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর পুলিশের প্রধান বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে মানুষের কথা বলার অধিকার রয়েছে। যে কেউ এটা বলতে পারেন। এ প্রসঙ্গে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমি শুধু বলব, কোনো গণগ্রেফতারের ঘটনা নেই। এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে দিলে আমি তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যেভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, আগুন সন্ত্রাস-বোমা সন্ত্রাস করা হয়েছে; তখনকার মতো যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা কঠোর হাতে দমন করার জন্য, জনগণের সুরক্ষার জন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ নেব। সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেব। কোনোভাবেই নাগরিকদের সুরক্ষা বিঘ্নিত করার সুযোগ আমরা দেব না।

বিজিবি মোতায়েন : নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার অংশ হিসেবে রাজধানীর সড়কগুলোতে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকায় ২০ প্লাটুন এবং বাইরে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে এমন অনেক জেলায় আরও ৭০ থেকে ৮০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরেও বিভিন্ন জেলা প্রশাসন থেকে বিজিবি মোতায়েনের প্রস্তাব এসেছে বলে জানা গেছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসীন রেজা বলেন, ঢাকায় ২০ প্লাটুন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭০ থেকে ৮০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে বিজিবি চাওয়া হয়েছে।

পাঠাওসহ তিন রাইড সেবা বন্ধ আজ : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ঢাকায় মটরসাইকেল রাইড সেবা বন্ধ রাখছে তিন প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী আজ সারা দিন সেবা বন্ধ থাকছে বলে পাঠাও, মুভ ও বাহনের। সেবা বন্ধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গতকাল রাতে গ্রাহকদের কাছে এসএমএস পাঠিয়েছে মটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ‘পাঠাও’ কর্তৃপক্ষ। এতে লেখা হয়েছে, ৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টা থেকে পাঠাও রাইড সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকার কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় পাঠাও ফুড সার্ভিস চালু থাকবে।