অনলাইন ডেস্ক: সব দলের অংশগ্রহণে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি সত্ত্বেও চলমান রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিএনপিকে সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে কোনো ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হলে তাঁর দল বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণাও দেয়, তাতেও টলবে না ক্ষমতাসীন দল। সাজার কারণে বিএনপিপ্রধান নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হলে বিষয়টি আদালতের বলে নিজেদের দায় এড়াবে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকাজও শেষ হওয়ার পথে। আগামী মার্চ বা এপ্রিলে ওই মামলার রায় হতে পারে। তাতেও খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে আপিল করে সাজা স্থগিত না করাতে পারলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হলে এবং সে ক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিলে কী হবে, সে আলোচনা এখন আওয়ামী লীগের অন্দর মহলে মুখ্য হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন নয়—এমন ঘোষণা দিয়ে বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকায় আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা থেকে শুরু করে সাতক্ষীরা ও ময়মনসিংহের সংঘর্ষের ঘটনা সে ইঙ্গিতই বহন করে বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা বলেন, দুর্নীতিবাজের তকমা ঢাকতে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। ওই বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা এরই মধ্যে বিএনপির বিরুদ্ধে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করার পাঁয়তারার অভিযোগ করেছেন। তবে বিএনপি যে অবস্থানই নিক না কেন, আওয়ামী লীগ তা আমলে নেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অসাংবিধানিক যেকোনো দাবি প্রতিহত করা হবে। বিভিন্ন অজুহাতে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন ভণ্ডুল করে একটা অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আনতে চায়। তারা নানা রকম বিভ্রান্তিকর কথা বলে। সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ নানা সময়ে বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি করছে। মূলত এগুলো নির্বাচন ভণ্ডুলের চেষ্টা। তাদের এই অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে ১৪ দল মাঠে থাকবে। মোহাম্মদ নাসিম গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের বাইরে বিএনপির কোনো দাবি মানা হবে না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতি করে জেলে গেছেন। এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কি পারবেন না সেটি আদালত ও নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে। তবে কোনো দুর্নীতিবাজের জন্য একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ার মতো কোনো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাদের উচিত আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এখনই নেতৃত্ব পরিবর্তন করা। তিনি আরো বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে বিএনপিকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হবে আওয়ামী লীগই—এমনটাই মনে করেন দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। প্রায় প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন দলের ‘বিদ্রোহীরা’। শুধু অভ্যন্তরীণ এই সংকট নয়, আন্তর্জাতিক মহলের কাছে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করাটা হবে তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপিকে ছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করতে গিয়ে গত চার বছরে তারা বিষয়টি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। এ নিয়ে বিভক্ত আন্তর্জাতিক মহলকে সামলাতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে সরকারকে। তাই বিএনপির সমর্থক বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তিতে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা রয়েছে। আবার খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে এলে নিজেদের ভরাডুবির আশঙ্কাও আছে আওয়ামী লীগ নেতাদের। এ অবস্থায় পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত করতে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করুক—এমন প্রত্যাশা করার মতো নেতাকর্মীর সংখ্যাও আওয়ামী লীগে কম নয়। আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অবশ্য বলেন, ‘গতবার বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, এটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত ছিল। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝাতে আমাদের খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। এবার তারা নির্বাচনে না এলে কিভাবে বিশ্বকে সামাল দেব তা সময় বলে দেবে। তবে বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, এটা পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক আদালত বলেছেন। আর বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা দুর্নীতিবাজ, সেটিও বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণিত। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরদিন জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, একপক্ষীয় এবং নিম্ন অংশগ্রহণের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রাণহানি ও সহিংসতার ঘটনায় মহাসচিব দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিবদমান পক্ষগুলো কোনো ধরনের মতৈক্যে পৌঁছতে ব্যর্থ না হলে একটি শান্তিপূর্ণ, সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব হতো।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।