আন্তর্জাতিক

সিরিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েলের বিমান হামলা

By Daily Satkhira

February 11, 2018

সিরিয়া থেকে পাঠানো ইরানের একটি ড্রোন ইসরায়েলের সীমায় ঢুকে পড়েছে—এমন অভিযোগ এনে গতকাল শনিবার সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সিরিয়ার ভেতর সিরীয় স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালায় ইসরায়েল। এদিকে ইসরায়েলের অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ অ্যাখ্যা দিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ইরান, রাশিয়া ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। আবার হামলা হলে সবগুলোর নিষ্ঠুর জবাব দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয় তারা।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, গতকাল সিরিয়া থেকে পাঠানো একটি ইরানি ইউএভি (চালকবিহীন আকাশযান তথা ড্রোন) ইসরায়েলের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে। দ্রুত সেটাকে চিহ্নিত করে ভূপাতিত করা হয়। এরপর সিরিয়ার ভেতর ডজনখানেক হামলা করে ইসরায়েল।

এ হামলার শুরুতে ইসরায়েলের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তাদের নিজেদের সীমানার ভেতর ভূপাতিত হয়। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বিধ্বস্ত বিমানটির দুই পাইলটই জীবিত আছেন, তবে তাঁদের একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বিমানটি সিরিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

এফ-১৬ বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর সিরিয়ার ভেতর ১২টি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায় আইডিএফ। হামলার কিছুক্ষণের মধ্যে বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, এর মধ্যে তিনটি সিরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং চারটি ইরানি লক্ষ্যবস্তু ছিল। আইডিএফের দাবি, সিরিয়ার ভেতরে যে নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ইরান ড্রোন পাঠিয়েছে, সেই নিয়ন্ত্রণকক্ষেও হামলা চালানো হয়।

আইডিএফের আরেক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের বিমানবাহিনীকে লক্ষ্য করে সিরিয়া বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। সিরিয়াও জানায়, গতকাল তারা ইসরায়েলের দুটি বিমান হামলা প্রতিহত করেছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সানার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের মধ্যাঞ্চলে আমাদের সেনা ঘাঁটিগুলোর একটিতে গতকাল ভোরে ইহুদিবাদী শত্রুরা এক নতুন আগ্রাসন চালিয়েছে। আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেটি প্রতিহত করেছে এবং একাধিক (ইসরায়েলি) বিমানকে আঘাত করেছে।’

ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় হোমস প্রদেশে বেশ কয়েকটি সেনা ঘাঁটিতে ইসরায়েল গতকাল হামলা চালায়। এসব ঘাঁটিতে মিত্র দেশ ইরান ও রাশিয়ার সেনাও মোতায়েন রয়েছে। সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীকে শক্তিশালী করতে ইরান ও রাশিয়া সেখানে তাদের সেনা মোতায়েন করেছে।

সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের গতকালের এ মুখোমুখি অবস্থানের জন্য ইরানকে দায়ী করেছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কর্নিকাস টুইটারে লেখেন, ‘ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের মারাত্মক লঙ্ঘনের জন্য ইরান দায়ী।’ সিরিয়ায় হামলার পর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে ফোন কনফারেন্সে বলেন, সিরিয়া ও ইরান ‘আগুন নিয়ে খেলছে’। কিন্তু ইসরায়েল ‘পরিস্থিতির অবনতি চায় না’।

এদিকে ইরান বলছে, ইসরায়েলের সীমায় ড্রোন অনুপ্রবেশের ‘মিথ্যা’ অজুহাতে সিরিয়ার ভেতর হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপত্র বাহরাম ঘাসেমি গতকাল বলেন, ‘ইরান বিশ্বাস করে, আত্মরক্ষা নিশ্চিত করার অধিকার সিরিয়ার আছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ অঞ্চলে তাঁদের অপরাধ ঢাকতে অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।’ সিরিয়ার ভেতর ইরানের কোনো সামরিক উপস্থিতি নেই, শুধু ‘সিরীয় সরকারের অনুরোধে সামরিক উপদেষ্টা’ রয়েছে বলে দাবি করেন ঘাসেমি।

রাশিয়া, লেবাননের হিজবুল্লাহসহ সিরিয়ার অন্য মিত্রদের নিয়ে ইরান একটি যৌথ বিবৃতিও দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অধীকৃত ফিলিস্তিনের আকাশসীমায় ড্রোন হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলি শত্রুদের দেওয়া বিবৃতি মিথ্যাচার এবং অভিযোগ ছাড়া আর কিছুই নয়।’ বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ইসরায়েল যে ড্রোন লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, সেটা কাজে লাগানো হচ্ছিল ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো, প্রধানত দায়েশের (ইসলামিক স্টেট তথা আইএস)’ বিরুদ্ধে। ইসরায়েল আরো হামলা চালালে সেগুলোর ‘নিষ্ঠুর জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছে সিরিয়ার মিত্ররা। সূত্র : এএফপি।