আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন স্তরে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা, স্বচ্ছ ও দক্ষ প্রার্থী মনোনয়নসহ সরকারের নয় বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে জনগণের সামনে তুলে ধরতে দলীয়ভাবে কাজ শুরু হয়েছে। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে সারা দেশে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি না আসায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন ১৫৩ জন। এবার গণজোয়ার নেই, অন্যদিকে বিএনপিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ফলে প্রার্থী বাছাইয়ে দলকে বিশেষভাবে যত্নশীল ও সচেতন হতে হবে। সেইসঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো যেমন জরুরি, তেমনি প্রয়োজন সরকারের সাফল্য প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সারা দেশের জনগণের সামনে তুলে ধরা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আগামী নির্বাচনেও নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে জনগণের দোরগোড়ায় যাওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা।
দলের শৃঙ্খলা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা : খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র দলীয় কোন্দল এবং নেতা-কর্মীদের ক্ষমতার দম্ভ ও অসংযত আচরণ দলকে আরও পিছিয়ে দিচ্ছে। দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, বান্দরবান, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, ফেনী ও সিরাজগঞ্জ জেলাকে বিরোধপূর্ণ এলাকা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব জেলায় ধারা উপ-ধারায় রাজনীতি চলছে। পদ-পদবি ধরে রাখা, সুবিধাভোগী সুবিধাবঞ্চিত থাকা ও ব্যক্তিগতস্বার্থ থেকে সৃষ্ট এসব বিরোধ কোথাও কোথাও মহীরুহ আকার ধারণ করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনপ্রিয়তার চেয়ে দলীয় কোন্দল মেটানোটাই বেশি জরুরি বলে মনে করছেন তারা। অবশ্য তৃণমূলের কোন্দল মেটাতে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৫টি টিমে বিভক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সারা দেশে ব্যাপক নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলমান এই সাংগঠনিক সফরে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে আরও শক্তিশালী করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক ভুলত্রুটিগুলো সমাধানের চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সর্বশেষ অবস্থান জানার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
স্বচ্ছ প্রার্থী নিশ্চিত করা : নির্বাচনে জয় লাভের জন্য স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, রাজনৈতিক ঐতিহ্য, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সদ্ভাব, জনসম্পৃক্ততা রয়েছে— এমন রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করতে হবে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। সূত্র মতে, বাদ পড়তে যাচ্ছেন বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন প্রায় ৭০ এমপি। এদিকে এলাকায় উন্নয়ন, জনপ্রিয়তা, কোন্দল, দুর্নীতিসহ বিগত কয়েক বছরের এমন নানা বিষয় তুলে ধরে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি-মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত আমলনামা তৈরি করা হয়েছে। একাধিক গোপন জরিপের মাধ্যমে প্রত্যেক আসনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি প্রার্থী বাছাই করছে দলটি। এ বিষয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগে অগণিত নেতা-কর্মী। দলে কারও অবদানই কম নয়। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
সরকারের উন্নয়ন প্রচার : আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, সরকারের উন্নয়ন দৃশ্যমান। উন্নয়ন সর্বত্র সমানভাবে হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তা সঠিকভাবে প্রচার হচ্ছে না। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বারবার সরকারের উন্নয়ন চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানালেও প্রচারে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন অনেকেই। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে উন্নয়ন-সাফল্য প্রচারের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। একদিকে দলের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে, অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর পক্ষ থেকে বিগত দিনের উন্নয়ন তথ্য প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত নয় বছরে সরকারের অর্জন বিশাল। সমুদ্র বিজয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও দেশে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি, বেকারত্ব দূর করা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া, মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি— সব ক্ষেত্রে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এসব দেশের মানুষ জানে। আর আমরা ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক সফরে বর্ধিত সভা, কর্মিসভা, উঠান বৈঠক, পথসভা এবং জনসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো তুলে ধরছি। এর বাইরে সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো নিজস্ব কর্মকৌশলে তাদের সাফল্য তুলে ধরছে।