তালা

তালায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসি রুমে, ফ্যানগুলো অচল থাকে ৫০ টাকার অভাবে! প্লাস্টার খসে দুর্ঘটনার আশংকা

By Daily Satkhira

February 13, 2018

মীর জাকির হোসেন, তালা: তালা উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষ ও পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলা সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনের অন্যতম মাধ্যম তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। রিপোর্টার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র নানান সম্ভাবনা, সমস্যা ও দূর্নীতি বিষয়ে সার্বিক অবস্থা সরজমিনে দেখার পর ইতোমধ্যে গনমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ৩ পর্বের রিপোর্টের আজ দ্বিতীয় পর্ব। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী সংকট রয়েছে অকল্পনীয়! একইসাথে এখানকার অ্যাম্বুলেন্স, এক্সরে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনো ম্যাশিন অচল রয়েছে দীর্ঘদিন। তার সাথে অত্যাধুনিক অপারেশন রুম থাকলেও অ্যানেস্থিসিয়া ও সার্জন না থাকায় রোগীদের অপারেশন করানো যাচ্ছেনা। সরজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগীদের ওয়ার্ডের ফ্যানগুলো মাসের পর মাস অচল থাকায় রোগীদের চরম ভোগান্তীতে থাকতে হয়। অধিকাংশ ফ্যানগুলো সামান্য ২০ বা ৫০ টাকা ব্যয় করলেই সচল হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিলাস বহুল এসি রুমে বসে অফিস করায় রোগীদের দুরাবস্থা দেখার সুযোগ তিনি পাননা! পরিচ্ছন্ন কর্মী সংকটের কারনে হাসপাতালের পুরুষ, মহিলা ও কেবিনের বাথরুমগুলো ব্যবহারে সম্পূর্ন অনুপযোগী হয়ে রয়েছে দীর্ঘ বছর ধরে। কোন সুস্থ্য বা অসুস্থ্য মানুষ বাথরুমে গেলে সেখানকার নোংরা ও দূর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের কারনে তাকে অধিকতর অসুস্থ্য হতে হয়। হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরবারহ করা খাদ্য’র মান ও পরিমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সবসময়। হাসপাতালের ভিতরে বিড়াল আর বাহিরে রয়েছে কুকুরের অবাদ বিচরন। পুরাতন ভবনের ভিতরে, বাহিরে, ওয়ার্ডে দেওয়ালের ও ছাদের প্লাষ্টার খসে পড়ছে। নতুন ভবনের একাধিক স্থানেও একই অবস্থা হওয়ায় যে কোনও সময় দূর্ঘটনার আশংকা বিদ্যমান রয়েছে। রোগীদের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ন এক্সরে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়ায় ভোগান্তীর শেষ নেই আগত সেবা গ্রহিতাদের। মেশিনটি ঠিক করার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার আবেদন করলেও, সমস্যা সমাধানে আজ পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র “স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন” নামের একটি কমিটি থাকলেও তার মিটিং হয়না বছরের পর বছর। ফলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত হচ্ছেনা এবং কার্যকরি সমাধান হচ্ছেনা। ফলে তালাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাজিব সরদার হাসপাতালের নানান সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, রোগী ওয়ার্ডে যে সকল ফ্যান অচল রয়েছে তা’ গরম পড়ার আগেই ঠিক করা হবে। তাছাড়া, পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্ন কর্মীর অভাবে হাসপাতালের বাথরুম ও ওয়ার্ডের পরিবেশ উন্নত করা যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, হাসপাতালের জন্য ৫টি পরিচ্ছন্ন কর্মীর পদ থাকলেও মাত্র ১টি পদে কর্মী আছে। ৪টি পদ শূণ্য থাকায় বিল্লাল ও পারভীন নামের দুজনকে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ দিয়ে কোনও ভাবে কাজ করানো হচ্ছে। আরও এই দুটি পদের কর্মীদের বেতনের টাকা প্রতি মাসে হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তার ও কর্মচারী এবং এখানকার একটি এনজিও এর কাছ থেকে নিয়ে পরিশোধ করা হয়। ডাক্তার রাজিব সরদার জানান, হাসপাতালে আগত মায়েদের প্রসব পরবর্তী ও পূর্ববর্তী আধুনিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মায়েরা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। কিন্তু অন্য রোগীদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। প্রাপ্তি কম হওয়ায় হাসপাতালে আগত রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী ওষুদ সরবারহ করা যাচ্ছেনা। তাছাড়া ৫টির মধ্যে ১টি অক্সিজেন ফ্লোমিটার ভাল থাকায় মূমূর্ষ রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছেনা। তাছাড়া এখানে কর্মরত ডেন্টিস্ট সুমাইয়া বিনতে মুছা ও অর্থোপেডিক্স ডাক্তার জাহিদ ফেরদৌস ডেপুটেশনে যথাক্রমে সাতক্ষীরা সদর ও ঢাকার কুর্মীটোলা হাসপাতালে রয়েছে। যেকারনে সংশ্লিষ্ট রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে। হাসপাতালের এক্সরে ও অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করাসহ সকল সংকট সমাধানের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। অবিলম্বে সকল সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।