যত দিন যাচ্ছে, কোহলি যে একদিন টেন্ডুলকারের রেকর্ড সব ভেঙে দেবেন এ নিয়ে সন্দেহ করার মানুষদের সংখ্যা কমছে। অন্তত সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি রেকর্ডটা ভাঙা তো এখন খুবই সম্ভব মনে হচ্ছে। সেঞ্চুরি করাটা কোহলি এত নিয়মিত ঘটনায় পরিণত করেছেন, খবর হিসেবে এ এখন আর কৌতূহল জাগানিয়া নয়। ওহ, আরেকটি সেঞ্চুরি, আচ্ছা।
ওয়ানডেতে ৩৫ তম আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের ৫৬ তম সেঞ্চুরি আজ করে ফেললেন বিরাট কোহলি। এই সিরিজেই তাঁর তৃতীয় সেঞ্চুরি। ২৯ বছর বয়স। কোহলির ফর্ম, ফিটনেস আর ক্যারিয়ারের যে ধারাবাহিকতা; শচীন টেন্ডুলকারের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড টিকে থাকবে কি না, এই সংশয় এখন পাঁড় টেন্ডুলকার ভক্তেরাও প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। কোহলির সেঞ্চুরির কাব্যগাথা লিখতে গিয়ে ম্যাচের ফলটাই বলা হয়নি। না বললেও চলত আসলে। কোহলির সেঞ্চুরির চেয়ে এই সিরিজে ভারতের জয় আরও নিয়মিত ঘটনা। ২৫ বছর যে মাটিতে কখনো সিরিজ জেতেনি ভারত, না ওয়ানডে না টেস্ট; সেখানে টেস্টে না-পারার কষ্টটা রঙিন পোশাকে কী উজ্জ্বলভাবেই না মিটিয়ে দিল কোহলির দল। জিতল ৫-১ ব্যবধানে। মাঝখানে একটা ম্যাচ বৃষ্টির কারণে আয়তনে কমে না এলে এই সিরিজের ফল যে ৬-০ হতো না, এমনটা জোর দিয়ে কেউ বলতে পারবে না। বিশেষ করে ৫ ম্যাচে ভারতের দাপুটে জয়ের ধরন দেখে। যার শেষটা আজ তারা করল ৮ উইকেট আর ১০২ বল হাতে রেখে। নিজেদের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা এমন অসহায়, এমন বিপন্নবোধ খুব বেশিবার করেনি। ৫-১-এ সিরিজ হারও তাদের জন্য বিরলতম ঘটনা। কোহলি-ধাওয়ানের দুর্দান্ত ফর্মের কারণে এই সিরিজে ভারতের বোলাররা আড়ালে চলে যাচ্ছে। ভারতে বোলার হিসেবে জন্ম নিলে যা মেনে নিতে হয় সবাইকে। তবুও চাহাল-যাদবের ঘূর্ণির কারণে আলোচনা হচ্ছিল। আজও ভারতের জয়ের ভিত্তি বোলারদের গড়ে দেওয়া। যদিও তাতে নায়ক শার্দুল ঠাকুর। ভারতের ওয়ানডে দলে এখন অশ্বিন-জাদেজাদেরই জায়গা পাওয়া কঠিন। শার্দুল তা জানেন বলেই ৫ মাস পর দলে ফিরে দারুণভাবে জ্বলে উঠলেন। ১৩৬ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা যে প্রথম ৫ উইকেট হারিয়েছিল, এর তিনটিই শার্দুলের। তাঁর এই আঘাতে শেষ পর্যন্ত ২০৪ রানে অলআউট স্বাগতিকেরা। ৫২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে এই সফরে ওয়ানডেতে না হলেও টেস্টে ভারতীয় পেসারদের অবদানের কথাও আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন এই তরুণ। ওয়ানডে সিরিজে যদিও প্রথমবার কোনো ভারতীয় ম্যাচে তিন বা এর বেশি উইকেট নিলেন, স্পিনাররা যেখানে নিয়েছেন ছয়বার। লক্ষ্যটা ২০৫ দেখে কোহলি-ভক্তদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হয়তো ছিল, যাহ আরেকটা সেঞ্চুরির সুযোগ নষ্ট হয়ে গেল। গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রোহিত শর্মা আজ ১৫ রান করে ফেরাতে ভারতের কেউ কেউ খুশি হয়েছিলেন কি না, তাও সরাসরি নাকচ করে দেওয়া যাচ্ছে না। এরপরই কোহলি নামলেন। আর ১৯টি চার ও ২ ছক্কায় করলেন ১২৯! দুই শর মতো লক্ষ্য যে ম্যাচে, তাতেও কোহলির সেঞ্চুরি! কোহলির সেঞ্চুরি থামানোর একটা উপায় হতে পারে ভারতকে ৯৯ কিংবা এরও কম লক্ষ্য দেওয়া! কোহলিও আজ তিনবার পুরস্কৃত হলেন। ম্যাচ সেরা, সিরিজ সেরা এবং দলীয় ট্রফি! একটাও তার হাতে বেমানান লাগল না। ভারতকেও যোগ্যতম দল হিসেবে উদ্যাপন করতে দেখা গেল। এই ভারত অবিশ্বাস্য, তার চেয়েও অবিশ্বাস্য এই কোহলি!