শ্যামনগর ব্যুরো: গত পাঁচদিন যাবৎ শ্যামনগর থেকে দেশের কোন স্থানেই দূরপাল্লার পরিবহন ছাড়ছে না। একারনে আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ-এ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার চার লক্ষাধিক মানুষের দূর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। কালিগঞ্জ লোকাল বাস, মিনি বাস মালিক সমিতির সীমাহিন অনিয়মের কারনেই এই দূর্ভোগ বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। শ্যামনগর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৩টি কোম্পানীর ৫০টি এসি/ ননএসি পরিবহন দেশের বিভিন্ন স্থানে-ঢাকা, রাজশাহী, নারায়নগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, পাবনা, নাটোর, কুষ্টিয়া, পঞ্চগড় ও নীলফামারী সহ দেশের কয়েকটি জেলায় চলাচল করে। দূরপাল্লার এসব পরিবহন বন্ধ থাকায় জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। শ্যামনগর বাস কাউন্টার মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সমিতির সাধারন সম্পাদক আঃ রাজ্জাক জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারী কালিগঞ্জ আঞ্চলিক বাস, মিনি বাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আফছার আলী সরদার স্বাক্ষরিত ২৫ জন পরিবহন মালিক বরাবর ৪৫(২৮)১৮ নং স্মরকে একটি পত্র প্রদান করা হয়। পত্রে ১৩/০২/২০১৮ ইং তারিখের মধ্যে শ্যামনগর ভায়া কালিগঞ্জ রুটে বি.আর.টি এ কর্তৃক প্রদত্ত বৈধ রুট পারমিট প্রদান করার জন্য বলা হয়। এক্ষেত্রে দূরপাল্লার পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা প্রতিটি জেলায় চলাচলের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে রুট পারমিট নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে শ্যামনগর সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, হঠাৎ করে কি কারনে নতুন করে শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ থেকে পরিবহন ছাড়তে আলাদা ভাবে রুট পারমিট প্রয়োজন হচ্ছে তা কোন ভাবেই তাদের বোধগম্য নয়। শ্যামনগর পরিবহন চালক সমিতির সভাপতি মোঃ মানিক ও সদস্য আলমগীর জানায়, বেশ কিছুদিন যাবৎ চেকার নাম ধারী মেহেদী নামের এক ব্যক্তি কালিগঞ্জ লোকাল বাস মালিক সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে দূরপাল্লার গাড়ীতে চেকের নামে কালিগঞ্জ আমতলা মোড়ে যাত্রীদের হয়রানী করে আসছে ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ থেকে চাঁদা নিচ্ছে। চাঁদা না দিলে প্যাসেঞ্জার নামিয়ে দেওয়ার ও প্রমান রহিয়াছে। এধরনের ঘটনা নিয়ে একাধিকবার তাদের সঙ্গে দূরপাল্লা পরিবহন মালিক সমিতির বিবাদও ঘটেছে। শ্যামনগর হাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফিরোজ হোসেন বলেন, শ্যামনগর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় সাধারন যাত্রীরা সহ ব্যবসায়ীরা দারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্যামনগরে বাস যোগে ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের ব্যবসা সমগ্রী শ্যামনগরে আমদানী করে থাকে। গত পাঁচ দিন পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাছাড়া জেলা সদর থেকে শ্যামনগরে মালামাল বহন করে খরচ ও বেশী পড়ায় মালামালের দামও ব্যবসায়ী চড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। শ্যামনগর টার্মিনাল লেবার সমিতির সদস্য শাখয়াত ও আঃ সাত্তার জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব পরিবহন থেকে বিভিন্ন ধরনের মালামাল উঠানো ও নামানোর কাজ করেই তাদের সংসার চলে। গত পাঁচদিন পরিবহন বন্ধ থাকায় তারা অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে। শ্যামনগর বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি এস.এম কামরুল হায়নার নান্টু জানান, কালিগঞ্জ লোকাল, বাস, মিনি বাস মালিক সমিতির কর্মকর্তাদের এহেন সিদ্ধান্তে হাজার হাজার যাত্রী হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে। তাছাড়া মুমুর্ষ রোগীদের জেলা শহরে চিকিৎসায় যেতে বিড়াম্বনা পোহাতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ দিন পরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা সহ সাধারন যাত্রীরা সীমাহিন দূর্ভোগের কবলে পড়েছে। এহেন গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাতক্ষীরা-০৪ আসনের সংসদ সদস্য এস.এম জগলুল হায়দার বলেন, দীর্ঘ ২০/২২ বছর ধরে শ্যামনগর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় দূরপাল্লার গাড়ি গুলি চলছিল। এতে আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ব বৃহৎ এ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষরা দারুন ভাবে উপকৃত হচ্ছিল। তিনি দূঃখ প্রকাশ করে বলেন, দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় তার নির্বাচনী এলাকার হাজার হাজার মানুষ হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে। তিনি এহেন উদ্ভত পরিস্থিতি নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শোয়েব খান জানান, এ মৌসূমে সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যাটকদের শ্যামনগরে প্রচুর পরিমান ভিড় জমে। দূরপাল্লার পরিবহন যোগে দেশের দূর দূরত্ব থেকে সুন্দরবন দেখার জন্য পর্যাটকরা আসে। গত পাঁচদিন পরিবহন বন্ধ থাকায় পর্যাটকদের ভিড় ও কমেছে। সরকার প্রায় ৫/৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।