আন্তর্জাতিক

যে ৫ ইস্যুতে হিলারি-ট্রাম্পের জয়-পরাজয় নির্ধারণ!

By Daily Satkhira

November 06, 2016

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আমেরিকায় এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারাভিযানকে ঘিরে রয়েছে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যক্তিত্বের লড়াই। নীতির পার্থক্য নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে লড়াই সেভাবে সামনে আসেনি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি মূল ইস্যুতে হিলারি ক্লিন্টন আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার অবস্থান কোথায়? অভিবাসন: এটাকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যবহার করছেন তার তুরুপের তাস হিসাবে। আমেরিকা আর মেক্সিকো সীমান্তে দু হাজার মাইলের বেশি দুর্ভেদ্য দেওয়াল তুলে দেবার যে আহ্বান মি: ট্রাম্প জানিয়েছেন। তার সমালোচকরা যদিও বলছেন তা অবাস্তব এবং বিশাল ব্যয়সাপেক্ষ। কিন্তু তার এই আহ্বানে সমর্থন রয়েছে রিপাবলিকান দলের।

মি: ট্রাম্প বৈধ অভিবাসন কমানোর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, নথিবিহীন যেসব অভিবাসীকে নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া প্রেসিডেন্ট ওবামা নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে পেছিয়ে দিয়েছেন তিনি তা আবার চালু করার পক্ষে। অবৈধ যেসব অভিবাসী আমেরিকায় বসবাস করছে। তাদের সংখ্যা কমাতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চান তিনি।

মি: ট্রাম্প আগে বলেছিলেন আমেরিকার মাটিতে যে এক কোটি ১০ লাখের বেশি নথিবিহীন অভিবাসী রয়েছে, তাদের তিনি দেশত্যাগে বাধ্য করবেন এবং সমস্ত মুসলমানের আমেরিকায় ঢোকা বন্ধ করে দেবেন- সে বক্তব্য থেকে তিনি আপাতত সরে এসেছেন। কিন্তু তার এই নীতি তিনি পরিত্যাগ করেননি।

হিলারি ক্লিন্টন বলেছেন, আমেরিকায় নথিবিহীন যেসব অভিবাসী ও তাদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একপাক্ষিকভাবে নির্বাহী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তাদের থাকার বিষয়কে বৈধতার দেবার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চান।

মিসেস ক্লিন্টন অভিবাসন নীতির সার্বিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া আমেরিকায় আছেন, তাদের স্থায়ী ও বৈধভাবে দেশটিতে থাকার এবং তাদের মার্কিন নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া। বেসরকারিভাবে পরিচালিত আটককেন্দ্রের তিনি বিরোধী এবং বলেছেন দেওয়াল তোলা সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি ”মূর্খ পদক্ষেপ”।

পররাষ্ট্র নীতি:

হিলারি ক্লিন্টন মার্কিন সেনেটার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে তার কার্যকালে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বেশ কট্টরপন্থী বলে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি ইরাকে আমেরিকান যুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অবশ্য এখন তিনি বলছেন তার আগের ওই অবস্থানের জন্য তিনি অনুশোচনা করেন।

ওবামা প্রশাসনের মধ্যে যারা লিবিয়ায় মার্কিন বিমান হামলা চালানোর পক্ষে তদ্বির করেছেন মিসেস ক্লিন্টন তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন।

সিরিয়ায় কথিত ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকার বিস্তৃত ভূমিকা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ এলাকা জারি করা এবং সিরীয় বিদ্রোহীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া। তবে তিনি বলেছেন সিরিয়ায় স্থল সৈন্য মোতায়েনের তিনি বিপক্ষে।

তিনি কুর্দী পেশমের্গা যোদ্ধাদের সশস্ত্র অভিযানে সমর্থন দিয়েছেন। আফগানিস্তানে আমেরিকান সেনা উপস্থিতি বজায় রাখার পক্ষে তিনি এবং নেটোয় আমেরিকার ভূমিকাকেও তিনি সমর্থন করেন। মিসেস ক্লিন্টন মনে করেন নেটো জোটে থাকাটা ইউরোপীয় মিত্রদের হাত শক্ত করার এবং রুশ শক্তির বিরোধিতা করার জন্য প্রয়োজন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরাক যুদ্ধের এবং মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন গোড়া থেকেই তিনি ইরাক যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন, যদিও তার এই বক্তব্যের সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

মিঃ ট্রাম্প রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতি জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন আমেরিকা ইউরোপ আর এশিয়ায় মিত্র অবশ্যই চায়।

কিন্তু এসব দেশকে এই জোটে থাকার জন্য তাদের জাতীয় বাজেট থেকে তাদের ভাগের অর্থ দিতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে সবসময়েই আমেরিকার স্বার্থকে সবার উপরে রাখতে হবে।

অন্যদিকে, মিঃ ট্রাম্প আই এস দমনে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন এবং কোনো কোনো সময় এমন কথাও বলেছেন যে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকার কয়েক হাজার স্থল সেনা পাঠানো উচিত।

তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস মোকাবেলায় নেটোর আরো ভূমিকা রাখা উচিত। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন নেটো জোটের ব্যয়ের একটা বড় অংশ দেয় আমেরিকা। তার বক্তব্য জোটের সদস্যদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আরও অর্থ ব্যয় করা উচিত।

শরণার্থী: ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে কোনো কোনো এলাকা- যেমন মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো থেকে শরণার্থী নেওয়া আমেরিকার জন্য বড়ধরনের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করবে। তার বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেছেন সিরীয় শরণার্থীরা প্রধানত তরুণ অবিবাহিত পুরুষ।

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত না “কঠোর বাছাই” প্রক্রিয়া চালু করতে পারছে, ততক্ষণ আমেরিকায় বাস করতে ইচ্ছুক কোনো শরণার্থী গ্রহণের প্রক্রিয়া আমেরিকাকে স্থগিত রাখতে হবে।

তিনি চান চরমপন্থীদের শনাক্ত করার জন্য এই বাছাই প্রক্রিয়ায় মতাদর্শের পরীক্ষাও অর্ন্তভূক্ত করা উচিত।

তিনি জোর দিয়ে বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা থেকে যারা পালাচ্ছে তাদের জন্য নিরাপদ এলাকা তৈরি করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোরই আরও উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ সিরীয় ও ইরাকী শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।

হিলারি ক্লিন্টন আমেরিকায় সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি চাইছেন যুক্তরাষ্ট্রে সিরীয় শরণার্থীর বর্তমান সংখ্যা যা বছরে ১০ হাজার, তা বাড়িয়ে ৬৫ হাজারে উন্নীত করতে। মিঃ ট্রাম্প ইতিমধ্যেই বলেছেন এটা ৫৫০ শতাংশ বৃদ্ধি।

তবে তিনিও বলেছেন, যে শরণার্থীদের “সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই” করতে হবে। কোনো দেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বর্তমান আবেদন প্রক্রিয়ায় এখনই বেশ কয়েকটি স্তর রয়েছে এবং শরণার্থীরা জানেন না কোনো দেশে তাকে আশ্রয় দেওয়া হবে।

মিসেস ক্লিন্টন বলেছেন, সহিংসতা এবং দমনপীড়ন থেকে পালানো মানুষদের স্বাগত জানানোর ইতিহাস আমেরিকার আছে এবং তিনি সেই ধারা অব্যাহত রাখতে চান।

জলবায়ু পরিবর্তন:

পরিবেশ বিষয়ে হিলারি ক্লিন্টন ডেমোক্রাটিক পার্টির মূলধারার নীতিতেই বিশ্বাসী। তিনি মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির কারণ এবং জ্বালানি শিল্পের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষপাতী তিনি।

আলাস্কায় তেলের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় খনন এবং ক্যানাডা থেকে তেল আনার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের তিনি বিরোধী। তবে ফ্র্যাকিং অর্থাৎ তেল অনুসন্ধানের জন্য খনন বন্ধ রাখার জন্য পরিবেশবাদীদের দাবিতে তিনি কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ওয়েবসাইটে পরিবেশ বিষয়ে কোনো অবস্থান তুলে ধরেননি। তার ভাষণে এবং বিতর্কে তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের” জন্য পরিবেশের দোহাই দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর নিয়মকানুন তৈরির তিনি বিরোধী।

তিনি পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার পক্ষে। কিন্তু এনভায়রমেন্টাল প্রোটেকশান এজেন্সির তহবিল তিনি ছাঁটতে চান। মানুষের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এই ধারণাকে তিনি মনে করেন “ভূয়া”। তিনি বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেওয়া প্যারিস চুক্তি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তি তিনি “বাতিল” করে দিতে চান।

গর্ভপাত:

হিলারি ক্লিন্টন গর্ভপাত বিষয়ে ডেমোক্রাট দলের বর্তমান নীতিই অব্যাহত রাখতে আগ্রহী। বিশ সপ্তাহ গর্ভাবস্থার পর গর্ভপাত ঘটানো যাবে না এমন কোনো নিয়ম চালু করার তিনি বিরোধী।

গর্ভপাত যারা করেন তাদের কার্যকলাপের ওপর আরো বিধিনিষেধ আরোপ করে আইন প্রণয়নের তিনি বিরোধী। যুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এমন নারীদের গর্ভপাতের ব্যবস্থা করে যেসব বেসরকারি সংস্থা তাদের কেন্দ্রীয় সরকারি তহবিল থেকে অনুদান দেওয়ার পক্ষে হিলারি ক্লিন্টন।

কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে প্ল্যানড পেরেন্টহুড নামে নারীদের স্বাস্থ্যসেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া অর্থসাহায্য সম্প্রতি কাটছাঁট করার সমালোচনা করেছেন মিসেস ক্লিন্টন।

তিনি বলেছেন, এই স্বাস্থ্যসেবার আওতায় গর্ভপাতও পড়ে।

মার্চ মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন গর্ভপাত অবৈধ করা উচিত। তিনি বলেন, যেসব মহিলা গর্ভপাত করান তাদের জন্য “কোনো না কোনো ধরনের শাস্তির” ব্যবস্থার তিনি পক্ষে। তবে তিনি এধরনের বক্তব্য প্রথমে করলেও মিঃ ট্রাম্পের প্রচারণা দপ্তর কিছুদিনের মধ্যেই এই বিবৃতি প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের প্রার্থী মিঃ ট্রাম্প মনে করেন- গর্ভপাতের বৈধতার প্রশ্নটি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। যারা গর্ভপাত করছে কোনরকম ফৌজদারি সাজা তাদেরই দেয়া উচিত।

মিঃ ট্রাম্প বলেন, “ধর্ষণ, অজাচার এবং প্রসূতির জীবনসঙ্কট”এর বেলায় তিনি ব্যতিক্রম হিসাবে গর্ভপাতকে গ্রহণ করতে রাজি আছেন। প্ল্যানড পেরেন্টহুড সংস্থার তহবিল তিনি বন্ধ করে দিতে চান। ২০০০ সাল পর্যন্ত মিঃ ট্রাম্প গর্ভপাতকে সমর্থনই করেছেন।

কিন্তু তিনি বলেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের মত তিনি এখন এ ব্যাপারে তার মত বদলেছেন। -বিবিসি।