ফিচার

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়োগে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি!

By Daily Satkhira

February 22, 2018

নিজস্ব প্রিতবেদক: সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আউট সোর্সিং পদে চাকুরি নামক সোনার হরিণ দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে কোটি কোটি টাকার অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক মাস যাবত মেডিকেলের প্রকল্প পরিচালক থেকে প্যাথলজিস্ট পর্যন্ত সকলে আর্থিক সুবিধার পর নিয়োগের নামে পরিচয়পত্র দিয়ে কাজে যোগদান করিয়েছেন অসংখ্য প্রার্থীদের। মেডিকেলের প্যাথলজিস্ট শুব্রত কুমার দাস ও তার সহযোগি বশির আহম্মেদ এর বিরুদ্ধে রয়েছে এসব ভূয়া নিয়োগ ও পরিচয়পত্র প্রদানের গুরুতর অভিযোগ। অভিযোগের তীর মিলেছে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও। ভুক্তভোগিরা প্রতারণার স্বীকার হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরনাপন্য হলেও সেখানেও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। প্রতারক নিয়োগ চক্রটি কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়ে এখন চাকুরি প্রার্থীদের জীবন নাশের হুমকী দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাগেরহাট জেলা ও থানার রণভূমি গ্রামের খান শওকাত আলীর ছেলে খান আসাদুজ্জামান জানান, একটি ব্যাংকে চাকুরি সূত্রে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল গ্রামে অবস্থানকালিন সময়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট যশোর জেলার কেশবপুর থানার কাবিলপুর গ্রামের সুকুমার দাসের ছেলে সুব্রত দাসের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয় সুত্রে এক পর্যায়ে বন্ধুত্ব এরপর মেডিকেলে চাকুরির টোপ দেয় আসাদ্জ্জুামানকে। তিনি প্রথমে নিজের স্ত্রী ও পরে শালিকাকে চাকুরির জন্য যোগাযোগ করতে থাকেন। এরপর বিগত ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে সুব্রত তার শহরের খুলনার রোড এলাকার ভাড়া বাড়িতে বসে তার নিকট থেকে ৩ লক্ষ টাকা প্রথমেই গ্রহণ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বাগেরহাট জেলা ও থানার দক্ষিণ খানপুর গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে মিলন শেখ এর নিকট থেকে ২ লাখ টাকা, একই থানার রণভূমি গ্রামের আজহার আলির ছেলে সাইফুল ইসলামের নিকট থেকে ৩ লক্ষ টাকা, উত্তর খানপুর গ্রামের আবু তালেব এর ছেলে আবু হাসান এর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা, খোকন শেখ এর ছেলে তানভীর হোসেন এর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা, বাগমারা গ্রামের ফজলুল রহমানের মেয়ে মনিরা খাতুন এর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা, চুলকাটি গ্রামের ইব্রাহিম শেখ এর ছেলে ইবাদুল হোসেন টিপুর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা এবং উক্ত জেলার ফকিরহাট থানার দাড়িয়া গ্রামের জাফর শেখ এর ছেলে হাসানুর রহমান এর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করে। যা সর্বমোট ২৩ লাখ টাকা। খান আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, এসব টাকা গ্রহণের সময় শহরের পলাশপোলের মৃত তোফাজ্জেল বিশ^াসের ছেলে ফিরোজ বিশ্বাস, একই এলাকার মৃত আব্দুল আনাম খানের ছেলে ইউসুফ খান পলাশ, নারিকেলতলার আশরাফুল ইসলাম ঝড়–, জেলার দেবহাটার কুলিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ এর ছেলে হাসানুর জামান কারিগরসহ অনেকের সামনে এসব টাকা সুব্রত দাস গ্রহণ করেন। সাংবাদিকদের তিনি আরও জানান, বিপুল অংকের এসব টাকা গ্রহণ করে মাস্টার রোল পদে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তাদেরকে ভূয়া নিয়োগ ও পরিচয় পত্র দেয়া হয়। আবেদনকারিরা পরিচয়পত্র পেয়ে এক থেকে দেড় বছর চাকুরিও করে কিন্তু এক/ দুই মাস ৬ হাজার টাকা করে বেতন দেয়ার পর আর তাদের বেতন দেয়া হয়না। এ সময় তাদেরকে জানানো হয় মাস্টার রোলে থাকার পর যেসময় সরকারিভাবে নিয়োগ প্রদান করবে সেই সময়ে তাদের নিয়োগ হবে। ইতোমধ্যে এসব নতুন চাকরিদাতাদের বেতন না দেয়ায় তারা অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে করতে জায়গা ছাড়তে শুরু করে। শহরের পলাশপোলের মৃত তোফাজ্জেল বিশ্বাসের ছেলে ফিরোজ বিশ্বাস জানান, ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সরকারিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে নতুন নতুন প্রার্থী এনে তাদের নিকট থেকে আবারো লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চাকুরি দেয়ার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে এই চক্রটি। পরিস্থিতি বুঝে এসব টাকা প্রদানকারিরা বেতন না পাওয়ায় সাতক্ষীরা ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হয়। তখন তাদের নিকট থেকে লিখে নেয়া হয় আমি চাকরি করব না স্ব-ইচ্ছায় চলে যাচ্ছি। প্রার্থীদের অনেকেই টাকা ফেরতের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তাদেরকে নানাভাবে হুমকী দেয়া হয়। টাকা গ্রহণের সময় সামনে থাকা আশরাফুল ইসলাম ঝড়– ও তার লোকজনকে দিয়ে নানাভাবে জীবন নাশের হুমকীসহ মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে শহর ছাড়া করার পরিকল্পনাও করে প্যাথলজিস্ট সুব্রত ও তার কথিত ক্যাডার ঝড়–। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে গেল বছরের ১৪ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানায় খান আসাদুজ্জামান সকলের পক্ষে একটি অভিযোগ দাখিল করেণ। সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মারুফ আহম্মদ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন এএসআই শাহিনুর রহমানকে। এ এস আই শাহিনুর রহমান যথারিতি প্রাথমিক তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান। এক পর্যায়ে শাহিনুর রহমান ভূয়া চাকুরিদাতা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট সুব্রত দাস ও তার আরেক সহযোগিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। এ সময় চাকুরী প্রার্থী আরও অনেকে হাজির হয় টাকার দাবিতে সদর থানার গোল ঘরে। প্যাথলজিস্ট শুব্রত দাসের উপস্থিতিতে পুলিশি তদন্তে এবং চাকুরি প্রার্থীদের সামনে হিসাব করে ২৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকার দাবীদাররা থানায় হাজির হয়ে টাকার দাবি করেন। এএসআই শাহিনুরের সামনে সেখানেই টাকা প্রদানকারিদের সকলকে ২০ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার শর্তে ৫শ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর ও লিখিত পড়িত করে থানা থেকে মুক্তিপান প্রতারক চক্রের হোতা সুব্রত দাস। স্ট্যাম্পে উল্লেখ থাকে যে, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে দুই কিস্তিতে ২০ লাখ টাকা এএসআই শাহিনুরের মাধ্যমে ভুক্তভোগিদের ফেরত দিবেন সুব্রত দাস। শর্ত সাপেক্ষে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে দিয়ে থানা থেকে মুক্তির পর শুরু হয় নতুন খেলা। নির্ধারিত সময়ে থানায় টাকা জমা না দিয়ে পুলিশকে পক্ষে নেয়ায় এবার চাকরি প্রত্যাশিত টাকা প্রদানকারিরা আর থানায় পাত্তাই পায় না। টাকা চাইলে তাদেরকে নানাভাবে হুমকী দিতে থাকে বলে জানান খান আসাদুজ্জামান ও ফিরোজ বিশ্বাব। এব্যাপারে এএসআই শাহিনুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, সুব্রতর ব্যাপারে দাখিলকৃত অভিযোগের তদন্তকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে নিযুক্ত করার পর আমি তদন্ত করে অভিযোগ বর্ণিত ঘটনার সত্যতা পাই। সেমোতাবেক সুব্রতকে থানায় এনে অভিযোগকারিদের সামনেই টাকা ফেরতের শর্তে স্ট্যাম্পে লিখিত পড়িত করে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর লিখিত স্ট্যাম্প ও আনুসাঙ্গীক কাগজপত্র ওসি স্যার আমার নিকট থেকে নিয়ে নেন। আর আমাকে জানায় তুমি থাম-আমি দেখছি। অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে পুরো ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার। বর্তমানে টাকা প্রদানকারি চাকরি প্রত্যাশিতরা প্রথমে প্যাথলজিস্ট সুব্রতর নিকট থেকে প্রতারণার শিকার হয়, পরে পুলিশের নিকট থেকেও প্রতারণার স্বীকার হয়ে এখন পথে পথে ঘুরছে তারা। এব্যাপারে সাতক্ষীরা মেডিকেলের প্যাথলজিস্ট সুব্রতর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি চাকরি দেয়ার কে। এখানে কাজ শেখার জন্য কয়েকজন এসেছিল, যেহেতু কোটি কোটি টাকার মেশিন রয়েছে তাই জামানত হিসেবে ২০ হাজার করে টাকা নিয়েছিলাম ৫/৬ জনের নিকট থেকে। পরে তারা অসেনি। আসলে এবং টাকা ফেরত চাইলে যেকোন সময় ফেরত দেয়া হবে। একই সময়ে থানায় বসে আলোচনা হলেও কোন লিখিত পড়িত হয়নি বলে দাবী করেন তিনি। টাকা গ্রহণের চেক ও ভূয়া পরিচয় পত্র কিভাবে দিলেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে সুব্রত বলেন, এসব কোন ব্যাপার নয়! এ বিষয়ে মেডিকেলের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলার জন্য তার ০১৭১৩-১০৮০৩১ নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি রিসিভ না করে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। মেডিকেলের বর্তমান সুপারেন্ডটে- ডা. শাহজান আলী জানান, আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। কিছুই জানিনা। তবে কম বেশি এসব সমস্যার কথা শুনেছি।ঘটনার সুষ্ট তদন্ত করে জড়িত প্রতারক চক্রদের আইনের আওতায় আনার দাবী ভুক্তভোগিদের।