ইতহাসও ঐতিহ্য: বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসের কথা উঠলে ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টান বা বৌদ্ধধর্মের কথাই আগে মনে আসে। এর সঙ্গে যোগ করা যাক ইহুদি, পার্সি, জৈন বা শিখ ধর্মানুসারীদের কথা। এর বাইরে অন্যান্য ধর্মের কথা আমরা বিশেষ জানি না বললেই চলে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই প্রচলিত ধর্মগুলোর বাইরেও বিশ্বে আরো বেশ কিছু ধর্ম আছে, যেগুলো বহু প্রাচীন। আবার বেশ কিছু ধর্ম আছে, যার অনুসারীর সংখ্যা নিতান্তই হাতেগোনা। এমনই কিছু ধর্মের কথা জানিয়েছে লিস্টভার্স ডটকম।
ইয়াজদানিজম: ইরাক, ইরান আর তুরস্কজুড়ে বিস্তৃত জাগরোস পর্বতমালায় প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এই ধর্মের উদ্ভব। এটি আবার ‘ইয়ারাসিম’, ‘ইয়াজিদিজম’ আর ‘ইশিকিজম’—এ তিনটি শাখায় বিভক্ত। মূলত কুর্দি জনগোষ্ঠীর মানুষ ইসলাম গ্রহণের আগে এই ধর্ম পালন করতেন। এমনকি এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ কুর্দিরা ইসলাম গ্রহণ করলেও তাদের সংস্কৃতিতে ইয়াজদানিসমের প্রভাব লক্ষণীয়। একেশ্বরবাদী এই ধর্মের পবিত্র গ্রন্থের নাম ‘কিতেবা চিলুই’। বর্তমানে ৮ থেকে ১৫ লাখ মানুষ ইয়াজদানিসমের অনুসারী। ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেট নামধারী জঙ্গিগোষ্ঠী এই ধর্মের অনুসারীদের ওপর ব্যাপক নিধনযজ্ঞ চালালে আন্তর্জাতিক মহল ইয়াজিদিদের নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
রাস্তাফারিয়ানিজম: ১৯৩০ সালে ইথিওপিয়ায় সম্রাট হাইলে সেলাসি ক্ষমতায় বসেন। ওই একই সময় জ্যামাইকাতে রাস্তাফারিয়ানিজমের উদ্ভব হয়। এই ধর্মের অনুসারীদের মতে, ইথিওপিয়া থেকেই মানবজাতির উদ্ভব ও বিকাশ, সেখানকার রাজা তাই রাস্তাফারদের কাছে যারপরনাই পবিত্র মানুষ হিসেবে বিবেচিত। অ্যামহারিক ভাষায় ‘রাস’ মানে হলো রাজা, আর ‘তাফারি’ হচ্ছে হাইলে সেলাসির পুরো নামের প্রথম অংশ। রাস্তাফারিয়ানদের একটি বিচিত্র ব্যাপার হচ্ছে, তাঁরা সাধনার অংশ হিসেবে গাঁজার ব্যবহারকে বৈধ দৃষ্টিতে দেখেন। বর্তমানে বিশ্বে কমবেশি ১০ লাখের মতো রাস্তাফার আছেন। বিশ্বখ্যাত গায়ক বব মার্লেও একজন রাস্তাফার ছিলেন।
কেমেটিজম: আনুবিসসহ প্রাচীন মিসরীয় দেবদেবীদের আমরা অনেকেই চিনি। বইপত্র বা চলচ্চিত্রে প্রায়ই এঁদের উল্লেখ দেখা যায়। রোমান, আরব আর ফরাসি শাসনের প্রভাবে এসব দেবদেবী একরকম লুপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন বলা চলে। মূলত মার্কিন ইজিপ্টোলোজিস্ট তামারা সিউদার হাত ধরে ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে কেমেটিজমের উদ্ভব। এরা আবার নানা ভাগে বিভক্ত। প্রাচীন মিসরের আরেক নাম ছিল কেমেট।
উইক্কা: জেরাল্ড গার্ডনার নামক এক ব্রিটিশের হাত ধরে ১৯৫০-এর দশকে উইক্কা ধর্মের উৎপত্তি। নানা শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত এই ধর্মের অনুসারী সংখ্যা এখন প্রায় দেড় লাখ। প্রাচীন পৌত্তলিক কিছু ধারার সঙ্গে আধুনিক কিছু চিন্তাভাবনার সমষ্টিতে এই ধর্মের সৃষ্টি। ‘বুক অব শ্যাডোস’ হচ্ছে তাঁদের পবিত্র গ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি। উইক্কানরা বিশ্বাস করে, ঈশ্বর দুজন—একজন দেবতা আর একজন দেবী। চন্দ্র ও সূর্যকলা অনুসারে তাঁদের আরাধনা করেন উইক্কানরা। এই উৎসবের নাম যথাক্রমে এসবাথ ও সাবাথ। অঞ্চলভেদে উইক্কানদের উপাসনার ধরনে নানা বিভিন্নতা দেখা যায়।
কাওদাইজম: ১৯২৬ সালে ভিয়েতনামের তায়নিন শহরে এ ধর্মের জন্ম। এই ধর্মে উপাস্য ঈশ্বরের নামও কাও দাই। অহিংসা, ভোগবাদের প্রতি বিতৃষ্ণা এবং পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের ওপর জোর দেয় এই ধর্ম। ফাপ চান থ্রুয়েন, তান লুয়াতসহ বেশ কিছু ধর্মগ্রন্থ মেনে চলেন কাও দাই ধর্মের উপাসকরা। তায় নিন শহরের বিশাল কাও দাই মন্দির হলো এই ধর্মের তীর্থস্থান। বিশ্বে এই ধর্মের উপাসকের সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ।
ম্যান্ডিজম: একেশ্বরবাদী এই ধর্মের উদ্ভব দক্ষিণ লেভান্তে। ফিলিস্তিন, জর্ডান, ইসরায়েল নিয়ে গঠিত এলাকাকে দক্ষিণ লেভান্ত বলা হয়। প্রাচীনত্বের বিচারে এটি খ্রিস্টান ধর্মের সমসাময়িক। বর্তমানে বিশ্বে মাত্র ৭০ হাজারের মতো ম্যান্ডেজিমের উপাসক আছেন। ২০০৩-এর যুদ্ধের আগে এঁদের প্রায় সবাই ইরাকে বসবাস করতেন। নিভৃতচারী এই ধর্মের অনুসারীদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। এই ধর্মের অনুসারীরা মান্ডাইক নামের এক প্রাচীন, লুপ্তপ্রায় ভাষায় কথা বলে থাকেন।