জাতীয়

রামপালে নতুন সুন্দরবন

By Daily Satkhira

February 26, 2018

বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মধ্যে ৪২০ একর জমির ওপর সুন্দরবন তৈরি করছে বন বিভাগ। রোপণ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই সবুজ বেষ্টনী ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি ঢাকার আগারগাঁওয়ে বন ভবনে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোল পাওয়ার কম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে বন বিভাগের চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে বাগেরহাট সামাজিক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পের মুখ্য আহরণ (প্রকিউরমেন্ট) কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধান বন সংরক্ষক মো. সফিউল আলম চৌধুরী, উপপ্রধান বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোল পাওয়ার কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নরেশ আনান ও উপমহাব্যবস্থাপক প্রাতিক শিবাস্ত উপস্থিত ছিলেন।

ডিএফও মো. সাইদুল ইসলাম জানান, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোল পাওয়ার কম্পানি তাঁদের কাছে ৪২০ একর জমি হস্তান্তর করেছে। এসব জমির নিচু অংশে অর্থাৎ জোয়ার-ভাটা প্রবহমান নদী-খালের চরে সুন্দরবনের গরান, গেওয়া, কেওয়া, বাইন, গোলপাতা এবং সুন্দরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হবে। একই সঙ্গে উঁচু জমিতে বট, তমাল, নারিকেল, সুপারি, হিজল, জারুল, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, নাগেশ্বর, দেবদারু, কড়ই, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি গাছ রোপণ করা হবে, যা উপকূলের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বেগ কমিয়ে দেবে। এই বন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করবে। পশু-পাখিসহ বন্য প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে। পাশের নদী-খালে মাছের খাবার বৃদ্ধি পাবে।

সাইদুল ইসলাম আরো জানান, সাত কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয়ে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২০ সাল পর্যন্ত বৃক্ষ রোপণ করা হবে। দুটি মিনি নার্সারি এবং ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট থাকবে। সুন্দরবন প্রজাতির প্রতিটি গাছ তিন ফুট দূরত্বে এবং দেশি প্রজাতির গাছ ছয় থেকে ২০ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হবে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে সামাজিক বন বিভাগ। তিনি বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ। এর মাধ্যমে পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি হবে।’

সমালোচনা

এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষিজমি রক্ষা ও সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক সুশান্ত কুমার দাস বলেন, ‘মানুষকে বোকা বানাতে ওই এলাকায় সুন্দরবন গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে।’

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘গাছ রোপণ করে বনায়ন করা সম্ভব; কিন্তু সুন্দরবন তৈরি করা সম্ভব নয়। দুই দেশের সরকার যত কথাই বলুক না কেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে ক্ষতির প্রভাব কমাতে পারবে না।’

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে হাজার বছর ধরে নিজে নিজেই সুন্দরবন গড়ে উঠেছে। মানুষ ইচ্ছা করলেই তা গড়ে তুলতে পারে না। গড়ে তোলার যে কথা বলা হচ্ছে, তা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা।’

রয়েছে সম্ভাবনা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও কাঠ প্রযুক্তি অনুষদের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘ওই এলাকায় সুন্দরবন গড়ে তোলা সম্ভব। সুন্দরবন প্রজাতির গাছ জন্মানোর জন্য ওই মাটি ও পানি উপযোগী। সে ক্ষেত্রে সঠিক প্রজাতির গাছ নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দক্ষতার সঙ্গে গরানজাতীয় গাছ রোপণ করতে হবে।’

ড. মাহমুদ জানান, জোয়ার-ভাটা প্রবহমান নদী-খালের চরে প্রথম পর্যায়ে গরান, গেওয়া, কাঁকড়া, বাইন ও কেওড়া প্রজাতির গাছ রোপণ করতে হবে। পরে ধাপে ধাপে সুন্দরবনের অন্য প্রজাতির গাছ রোপণ করতে হবে। সুন্দরবন গড়ে তোলা হলে গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘উপকূলে মানবসৃষ্ট সুন্দরবন গড়ে তোলার সক্ষমতা বন বিভাগের রয়েছে।’

রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে কি না—প্রশ্ন করা হলে মাহমুদ বলেন, ‘যেকোনো স্থানে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। তবে ওই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কী অর্জন হবে, কী ক্ষতি হবে, তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’

উল্লেখ্য, এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে বালু ভরাট করা হয়েছে। প্রকল্পের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২১ সালে কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।