সৌদি আরবে এই প্রথমবারের মতো মেয়েদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদনপত্র ছাড়া হয়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরবের সমাজে যেসব বড় পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে – এ ঘোষণা হচ্ছে তার মধ্যে সর্বশেষ।
দেশটির কিছু প্রদেশে সৈনিকের পদে সৌদি মেয়েদের জন্য আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় । এ মাসের শেষ নাগাদ পর্যন্ত আবেদনপত্র গৃহীত হবে। অবশ্য এই নারী সৈনিকদের ভুমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তাদের সরাসরি যুদ্ধ করতে হবে না। তারা বরং কাজ করবেন নিরাপত্তা বিভাগে।
আবেদন করার জন্য ১২টি যোগ্যতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তাদের বয়েস অবশ্যই ২৫ থেকে ৩৫ এর মধ্যে হতে হবে এবং কমপক্ষে হাই স্কুল পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।
সম্প্রতি সৌদি আরবে অনেকগুলো পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো খবর হয়েছে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এসব আধুনিকায়নের পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ইতিমধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ‘বদলে দেবার’ এক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এ বছর জুন মাস থেকে সৌদি আরবে মেয়েরা গাড়ি চালানোর অধিকার পেতে যাচ্ছেন।
দুই সপ্তাহ আগে একজন শীর্ষস্থানীয় সৌদি ধর্মীয় নেতা শেখ আবদুল্লাহ আল-মুতলাক বলেন, সৌদি নারীদের ঘরের বাইরে কালো আবায়া পরতেই হবে এমন কোনো কথা নেই, সংযত পোশাক পরলেই হলো।
শেখ মুতলাকের ওই উক্তি দেশটিতে ব্যাপক সাড়া ফেলে, এবং এর পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা বিতর্ক শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি আরবে মেয়েদের ফুটবল খেলা দেখতে মাঠে যাবার অনুমতি দেওয়া হয় – যা ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা।
সৌদি আরবের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানেও মেয়েদের অংশ নিতে দেওয়া হয় যা এর আগে কখনো ঘটেনি। রাজপথে ইলেকট্রনিক মিউজিকের তালে তালে সৌদির ছেলে-মেয়েরা সেদিন একসঙ্গে নেচেছিলেন, যে দৃশ্য সেখানে আগে কখনো দেখা যায়নি।
ডিসেম্বর মাসে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম প্রকাশ্য সংগীতানুষ্ঠান। ওই কনসার্টে হাজার হাজার নারীর সামনে গান করেন একজন লেবাননি গায়িকা হিবা তাওয়াজির।
সৌদি আরবে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাণিজ্যিক সিনেমা নিষিদ্ধ ঝিল। এ বছর মার্চ মাস থেকেই সে দেশে আবার সিনেমা চালু হচ্ছে।
তবে অতি রক্ষণশীল ওয়াহাবী সুন্নি মতাদর্শ অনুসরণকারী দেশ সৌদি আরবে এখনো মেয়েরা পুরুষদের অনুমতি ছাড়া পাসপোর্টের আবেদন করতে পারেন না, বিদেশে যেতে পারেন না, বিয়ে করতে পারেন না বা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারেন না।
কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সে দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার অংশ হিসেবে আগামী দশকে সেখানকার বিনোদন শিল্পে প্রায় সাড়ে ছয় শ কোটি ডলার লগ্নি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।