অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীতে ধর্ষণের শিকার এক শিশুর (১১) ছেলেসন্তান হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটি একটি সন্তান প্রসব করে। এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে ৩০ বছরের ওই যুবককে গত ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ও পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ওই যুবককে শিশুটি মামা বলে ডাকত। শিশুটির পরিবার আর গ্রেপ্তার যুবক পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাস করত। শিশুটির মায়ের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে যুবক তাদের বাসায় যাতায়াত করতেন। শিশুটির মা চাকরিজীবী। মায়ের অনুপস্থিতিতে তখন ওই যুবক শিশুটির বাসায় আসত।
শিশুটি ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আদালতকে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। আদালতকে শিশুটি বলেছে, তার মা যখন বাসায় থাকতেন না, তখন ওই যুবক তাদের বাসায় আসতেন। একাধিকবার যুবক তাকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু ভয়ে সে তার মাকে কিছুই জানায়নি।
শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার অনেক পরে তার মা ঘটনা জানতে পারে। শিশুটির কাছ থেকে ঘটনা জানার পর তিনি বাদী হয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি ওই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। এর পরদিন পুলিশ ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।
শিশুটির বাবা বিদেশে থাকেন। মায়ের সঙ্গে থাকত শিশুটি। মায়ের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে শিশুটি তাকে মামা বলে ডাকত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিশুটির একজন আত্মীয় বলেন, যুবকের সঙ্গে অন্তত দশ বছর আগে থেকে তাদের পরিচয়। তাদের বাসায় আসত, খাওয়াদাওয়া করত। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি যে এগারো বছরের এক ছোট্ট শিশুর সঙ্গে এমন অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ করবে।
শিশুটির আত্মীয় আরও বলেন, এ বছর শিশুটি পিএসসি পরীক্ষা দেয়। শিশুটি তখন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। তখনো বুঝতে পারেননি শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা। মেয়েটির মা এজাহারে বলেছেন, গত বছরের মে প্রথম ওই যুবক তাদের বাসায় এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রথম ধর্ষণ করেন। এরপর থেকে তিনি যখন বাসায় থাকতেন না, তখন একাধিকবার শিশুটিকে ধর্ষণ করেছে ওই যুবক। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হাসপাতালে শিশুটির আলট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়। শিশুটির কিছু পরিবর্তন হলেও ঘুণাক্ষরে তাঁর মাথায় আসেনি মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। পেটে টিউমার হয়েছে এমনটা ভেবেই তিনি ডাক্তারের কাছে যান, এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাম করান।
এরপর শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করানো হয়। ওসিসির সমন্বয়ক চিকিৎসক বিলকিস বেগম বলেন, ধর্ষণের শিকার অন্তঃসত্ত্বা শিশুটি তাঁদের তত্ত্বাবধানে ছিল। আর শিশুটিকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন ওসিসির আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার। ১২ ফেব্রুয়ারি শিশুটিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে সে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এরপর সেদিকে শিশুটিকে তার মায়ের জিম্মায় দেন ঢাকার শিশু আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সালাউদ্দিন বলেন, আজ একটি ছেলেসন্তান জন্ম দিয়েছে শিশুটি। দুজনই ভালো আছে।
আর সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কুদ্দুস ফকির বলেন, শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবকের বিরুদ্ধে শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।