কালিগঞ্জ

কালিগঞ্জে জেএসসি ও জেডিসির অনুপ‌স্থিত অধিকাংশই মেয়ে শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার !

By daily satkhira

November 07, 2016

এস,এম,আহম্মাদ উল্যাহ বাচ্ছু: কালিগঞ্জে আশংকাজনক ভাবে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। চলতি বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় উপজেলায় মোট অনুপস্থিত শিক্ষার্থী ছিল ১৫০ জন। এর মধ্যে ৯৭ জনই মেয়ে। এই ৯৭ শিশু শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশই বিয়ের পিড়িতে বসতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ কালিগঞ্জ উপজেলাকে দেশের প্রথম বাল্যবিয়ে মুক্ত মডেল উপজেলা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা দেন। তৎপূর্ববর্তী সময়ে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। এ সময় উপজেলার সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। এবং প্রত্যেক ইউনিয়ন কে বাল্য বিয়ে ঘোষনায় অনুষ্ঠানিকতা গ্রহণ করা হয়। এর ফলশ্রুতিতে অভিভাবকরা তাদের শিশুকণ্যাকে বিয়ে দেয়া থেকে কিছুটা সময় বিরত থাকে। সে সময়ে কিছু সংখ্যক বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটলেও সেটা ছিল অনেকটা লোক চক্ষুর অন্তরালে। বর্তমানে আবারও বাল্যবিয়ের প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নির্লিপ্ততার কারণে এটি হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার কালিগঞ্জ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও মোজাহার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভেন্যুতে ২৩ টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬১ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ জনই মেয়ে শিক্ষার্থী। মৌতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সর্বাধিক ৭ জন মেয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। উক্ত ৭ জনের মধ্যে ৪ জনই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা হলো মৌতলার পরমানন্দকাটি গ্রামের রোমেছা, পশ্চিম মৌতলার রুপা পারভীন, রাণীতলার আকলিমা খাতুন, নরহরকাটির মমতাজ পারভীন। উকশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দু’শিক্ষার্থী শরিফা ও রেক্সোনার বিয়ে হয়ে গেছে জেএসসি পরীক্ষার কিছুদিন পূর্বে। রতনপুর তারকনাথ বিদ্যাপিঠ, নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কৃষ্ণনগর কৃষাণ মজদুর ইউনাইটেড একাডেমীসহ বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে একাধিক শিশু শিক্ষার্থীর বিয়ে হওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এছাড়া নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে অংশ নেয়া ১০ স্কুলের ৬ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত। এর মধ্যে ৪ জন ছাত্রী। চাম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪ স্কুলের ৭ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত। এর মধ্যে ৩ জনই মেয়ে শিক্ষার্থী। এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসি পরীক্ষায় কালিগঞ্জের ২৫ টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দু’টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। নাসরুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্র ও নলতা মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৭৬ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত। এর মধ্যে ৫১ জনই মেয়ে শিক্ষার্থী। অধিকাংশ মাদ্রাসা থেকেই একাধিক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত আছে। তবে কেন্দ্রের পরীক্ষা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, কাটুনিয়া মাদ্রাসার ৩জন, বন্দকাটি মাদ্রাসার ৪জন, মৌতলা মাদ্রাসার ৩ জন, কালিকাপুর মাদ্রাসার ৪ জন, মানপুর মাদ্রাসার ৪ জন, হাজী তফিল উদ্দীন মহিলা মাদ্রাসার ৬জন, ভদ্রখালী মাদ্রাসার ৩জন, ইন্দ্রনগর মাদ্রাসার ৫জন, ঘোনা মাদ্রাসার ৩জন মেয়ে পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। সরেজমিন জানা যায়, অনুপস্থিত ছেলে শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই ইট ভাটায় কাজ করতে যাওয়া বা অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে উপার্জনের জন্য বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ায় তারা জেএসসি বা জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। তবে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বাল্যবিয়ের কারণেই তারা অষ্টম শ্রেণির গন্ডি পার হতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়েদের বিয়ে দেয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি কাজে আসছে না। অহরহ বাল্য বিয়ে হচ্ছে। এজন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়সারা ভাব, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটির নির্লিপ্ততা, জন প্রতিনিধিদের যথাযথ ভূমিকা পালন না করা, সর্বোপরি অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবের কারণে বাল্যবিয়ে রোধ করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না বলে সচেতন মহল মনে করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মাঈন উদ্দীন হাসান জানান, কিছু ছেলে ইট ভাটায় যাওয়া ও অন্যান্য পেশায় কাজ করার কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিতি বেড়েছে। মেয়েদের বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসনের সর্বাত্মক তদারকি রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের দিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গুলো সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।