সাতক্ষীরা

প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে দুর্নীতি; দেখার কেউ নেই/ ভোমরায় পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট থেকে বাধ্যতামূলক ঘুষ আদায়

By Daily Satkhira

November 08, 2016

নিজস্ব প্রতিবেদক: সোমবার সময় দুপুর দেড়টা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে ভোমরা কাস্টমস অফিসে যেয়ে চোখে পড়ল যাত্রী হয়রানি আর উৎচোক আদায়ের দৃশ্য। সঙ্গে ছিল অনুজ আরেক সাংবাদিক। পাশে দাড়িয়ে ছিল সাতক্ষীরার সবার পরিচিত কণ্ঠ শিল্পী আসিফ। আসিক জানায় ভারতে যাওয়ার জন্য আসছে। এখানে ভ্রমণ কর স্লিপ দেখিয়ে নাম এন্ট্রি করে যাতায়াত করি প্রত্যেককে একশ থেকে দেড়শ করে টাকা দেওয়া লাগে। এর পর কথা হয় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কাঠবুনিযা গ্রামে গনেশ রায়ের সাথে। সে জানায় যাওয়ার দিন তাদের দুই জনের দুইশ টাকা দেওয়া লেগেছে। সোমবার ফিরে আসার সময়ও তাদেরকে দুইশ টাকা দিতে হয়েছে। একই সময় সদর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের সুবোল ঘোষ জানান তারা এক শিশুসহ ৪জন ভারতে যাওয়ার জন্য এসে দাঁড়িয়ে আছে। এসে কাস্টমস অফিসে ৪শ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে তাদের। এর পর লাইনে দাড়ানো সবার হাতে একশ করে টাকা দেখা গেলো। টাকা কি হবে জানতে চাওয়ামাত্র সবাই বলল এই অফিসে একশ করে টাকা ঘুষ দিতে হয়। এটা কেউ কোন দিন বন্ধ করতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভামরা স্থল বন্দরে অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কাগজপত্র সঠিক থাকলে মাথা প্রতি কাস্টমস অফিসে দিতে হয় একশ টাকা করে। আর ত্রুটি থাকলে য়াতায়াত কারীদের নিকট থেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। আর ভারত থেকে আসার সময় ব্যাগ তল্লাসিসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে যাতায়াত কারীদের নিকট থেকে উৎকোচ নেওয়া হয়। স্থানী লোকজন জানায়, ভোমরা সীমান্তের পাসপোর্ট যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। বৈধভাবে যাতায়াতের সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও টাকা ছাড়া কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন এর কর্তা বাবুরা যাতায়াতের অনুমতি দেয় না। আবার চাহিদার তুলনায় কম টাকা দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এসময় তাদের ব্যাগ তল্লাসি ও কাগজ পত্র চেক করার অজুহাতে হয়রানি করা হয়। ভোমরা বন্দরের ইমিগ্রেশনে দাড়িয়ে বৈধভাবে যাতায়াতকারী কলারোয়া উপজেলা গোবিনাথ পুর গ্রামের গীতা রানি,  খুলনার কপিল মনি গ্রামের ছায়া ঘোষ, তাপস ঘোষ, ইসমাইল জানায়, তারা  বৈধভাবে  যাতায়াত করেন। কাস্টমস অফিসে পৌছানো মাত্র কাস্টমস নিয়োজিত সিপাহি হাওয়া, চিন্নয় বৈরাগি বেলাল, সালাউদ্দীন, আমান উল্লাহ আমান পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট থেকে একশ টাকা করে আদায় করে। আর এই টাকা না দিতে চাইলে বা কিসের জন্য এই টাকা নিচ্ছেন জানতে চাইলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। আর চাহিদা মত টাকা দিলে সব ঠিক আছে। আবার ভারত থেকে আসার সময় কাস্টমস এর চাহিদামত টাকা না দিলে কাগজপত্র চেক ও ব্যাগ তল্লাসি করার কথা বলে হয়রানি করা হয়। তার পর বসিয়ে রাখা হয় ঘন্টার পর ঘণ্টা। ভোমরা বন্দর দিয়ে যাতায়াতাকারি সদর উপজেলার তুজুলপুর গ্রামের ইয়ারব হোসেন, মরিউম খাতুন, ঝাউডাঙ্গার মনিরুল, দুলাল ঘোষ, তলুই গাছার লাবলু, গোবিন্দ লাল বিশ্বাস জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভ্রমণ ট্যাক্স্্র  দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় যাত্রীদের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। অথচ কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন টাকা নেওয়াটা নিয়মে পরিণত করেছে। আর যারা ভ্রমণকর না কেটে আসে তাদের নিকট থেকে ৭শ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে কাস্টমস। এসব পাসপোর্ট যাত্রীরা ভারত থেকে দেশে ফিরে আসার সময় জনপ্রতি একশ টাকা করে আদায় করে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনঅফিসের অসাধু সিপাহিরা। ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুল হক জানান, পাসপোর্টযাত্রীরা শুধুমাত্র কাস্টমস অফিসে এসে নাম এন্ট্রি করে ভ্রমণ কর দেখিয়ে চলে যাবে। টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। এই সেকশন দেখাশুনা করেন ইন্সেপেক্টর মোসলে উদ্দীন। তিনি এই বিষয়ে সব বলতে পারবেন। ভোমরার কাস্টমস ইন্সেপেক্টর মোসলে উদ্দীন জানান, তিনি নিয়মিত এই অফিসে বসেন না। মাঝে মধ্যে এসে খোঁজখবর নেন সবাই ভ্রমণ কর দিচ্ছে কি না। যা অনিয়ম হয় সেটা সিপাহিরা করে। সিপাহিদের এই ধরণের কর্মকা-ের সাথে তিনি জড়িত নন। প্রতিদিন গড়ে কত লোক যাতাযাত করে সে তথ্যটিও দিতে রাজি হননি।